রুমা বেগমের মুখভর্তি দাঁড়ি!

0

আসিফ কাজল, ঝিনাইদহ ॥ দূর থেকে দেখলে মনে হবে বয়োবৃদ্ধ একজন পুরুষ। মুখে তার লম্বা কাঁচাপাকা দাঁড়ি। অথচ নারীর পোশাকে আবৃত্ত দেহ। প্রথম দেখায় যে কেউ ভড়কে যেতে পারেন। কিন্তু না। এই লম্বা দাঁড়ি নিয়ে নিজেকে ২৫ বছর আড়ালে রেখেছেন তিনি।
৬৪ বছরের এই নারীর নাম রুমা বেগম। তিনি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কালা লক্ষিপুর গ্রামের হবিবর জমাদ্দারের মেয়ে। বর্তমান তিনি ঝিনাইদহ শহরের পবহাটী গ্রামের একটি পোল্ট্রি খামারে কাজ করেন।
রুমা বেগম জানান, ১৯৯৬ সালে পেটে টিউমার হয়। টিউমার অপারেশনের পর তার শারীরিক পরিবর্তন হতে থাকে। সার্জারি করে হাসপাতাল থেকে ফেরার কিছুদিন পর মুখে দাঁড়ি গজাতে শুরু করে। সেই থেকে তিনি লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যান। সব সময় মুখমন্ডল ঢেকে চলাফেরা করতেন। কিন্তু সম্প্রতি স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে আর মুখ ঢেকে রাখতে পারেন না।
বৃদ্ধা রুমা বেগম জানান, ১৯৭১ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে তার বিয়ে হয়। ১০ বছর পর মারা যান স্বামী। প্রথম স্বামীর ঘরে কোন সন্তান ছিল না। এরপর দ্বিতীয় বিয়ে হয় মাগুরায়। সে স্বামীও ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। পরিবার থেকে আবারও সদর উপজেলার বিষয়খালী গ্রামে বিয়ে দেন। কিন্তু সতীনের সংসার বলে তিনি আর তৃতীয় স্বামীর বাড়ি যাননি।
তিনি জানান, এক রাতে তিনি নিজের মুখমন্ডলে দাঁড়ি গজানোর স্বপ্ন দেখেন। সকালে মুখে হাত দিয়ে দেখেন মুখভর্তি দাঁড়ি। দাড়ি ওঠার পর তিনি খুব কান্নাকাটি করেছেন।
প্রতিবেশী বিল্লাল হোসেন জানান, রুমা বেগম এলাকার নারীদের কুরআন ও নামাজ শিক্ষা দেন। নারীদের বিভিন্ন প্রয়োজনে সহযোগিতা করেন। জীবনের শেষ বেলায় এসে তিনি শহরের পবহাটী গ্রামে একটি পোল্ট্রি খামারে কাজ করছেন। অবসর সময়ে সেলাই করেন কাঁথা।
রুমা বেগমের মুখে দাঁড়ি গজানো নিয়ে যশোর আদদ্বীন হাসপাতালের গাইনি বিভাগের অধ্যাপক ডা. হাসানুজ্জামান বলেন, হরমনজনিত কারণে তার মুখে দাঁড়ি গজিয়েছে। হতে পারে রুমা বেগমের পেটে যে টিউমারটি ছিল সেটা হরমন নিঃশ^রণ টিউমার। তিনি বলেন, দেহে পুরুষ হরমনের আধিক্য থাকার কারণে রুমা বেগমের মুখে দাঁড়ি গজাতে পারে। তবে এক্ষেত্রে পরীক্ষা- নিরীক্ষা করে সঠিক কারণ নির্ণয় করা যেতে পারে বলেও ডা. হাসানুজ্জামান মনে করেন।