ধর্ষকের যাবজ্জীবন, সন্তানের ভরণপোষণ রাষ্ট্রের

0

বাগেরহাট সংবাদদাতা॥ বাগেরহাটের কচুয়ায় কবিরাজ সেজে কিশোরীকে ধর্ষণের অপরাধে ফেরদাউস শেখ (৪৪) নামের এক ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। রায়ে আরও বলা হয়েছে দণ্ড প্রাপ্তের সন্তান হিসেবে পরিচিতি পাবে ছেলে এবং তার ভরণপোষণের ব্যয় বহন করবে রাষ্ট্র।
ঘটনার ৯ বছর পরে সোমবার দুপুরে বাগেরহাট নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-র বিচারক মো. সাইফুল ইসলাম আসামির অনুপস্থিতিতে এই রায় ঘোষণা করেন। একই সাথে আসামিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ১ বছরের  কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া আদালত ধর্ষিতার সন্তান পিতা-মাতার পরিচয়ে পরিচিত হবে এবং ২১ বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত তার ভরণপোষণ ব্যয় রাষ্ট্র বহন করবে রায় দেয়। শিশুর ভরণপোষণ ব্যয়িত অর্থ সরকার আসামির বিদ্যমান সম্পত্তি বা ভবিষ্যতে প্রাপ্য সম্পত্তি থেকে আদায় করতে পারবে।
আসামি ফেরদাউস শেখ বাগেরহাট জেলার কচুয়া উপজেলার ঝালডাঙ্গা গ্রামের আবুল হাসান শেখের ছেলে।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা যায়, ২০১৪ সালের ১৮ মার্চ দুপুরের দিকে বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে ওই কিশোরীর বাড়িতে প্রবেশ করেন কবিরাজ পরিচয়কারী ফেরদাউস শেখ । এক পর্যায়ে কিশোরীকে ধর্ষণ করেন ফেরদাউস শেখ। লোকলজ্জার ভয়ে কিশোরী কাউকে জানায়নি। এক পর্যায়ে অন্তঃসত্ত্বা হলে বিষয়টি জানাজানি হয়। পরে ৭ মাস পর ভিকটিমের মা বাদি হয়ে ফেরদাউস শেখকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে কচুয়া থানায় ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন।
কিশোরীর ডাক্তারি পরীক্ষা ও ঘটনার সত্যতা পেয়ে পরের বছর ২০১৫ সালের ৩১ জানুয়ারি আদালতে ফেরদাউস শেখের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা এস আই হুমায়ুন কবির। ১১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ সালের সংশোধিত ৯ (১) ধারায় অভিযুক্ত আসামি ফেরদাউস শেখের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে উল্লিখিত দণ্ডাদেশ দেন আদালত।
এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন সিদ্দিকুর রহমান এবং আসামিপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন আইনজীবী শেখ আনিছুর রহমান।
জাতীয় মহিলা পরিষদের বাগেরহাট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও আমরাই পারি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোটের আহবায়ক রিজিয়া পারভিন বলেন, ঘটনার পর থেকে আমরা হতদরিদ্র ভিকটিমের পাশে থেকে আইনী সহায়তা দিয়ে আসছিলাম। আজ আমরা ন্যায় বিচার পেয়েছি। আশাকরি ভবিষ্যতে ন্যায় বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হলে এধরনের অপরাধ সমাজ থেকে কমে আসবে।