চৌগাছায় বাঁশ উৎপাদনে সাফল্য

0

মুকুরুল ইসলাম মিন্ট, চৌগাছা (যশোর) ॥ মেধা, ইচ্ছাশক্তি ও পরিশ্রম এই তিনটি যিনি একত্রিত করতে পেরেছেন তার জীবনে সাফল্য ধরা দিয়েছে বলে জানান চৌগাছার কৃষক মুক্তার হোসেন। তিনি বাড়ির পাশে ফসলি জমিতে পরিকল্পিতভাবে চাষ করেছেন বাঁশ। পেয়েছেন সাফল্য। তাকে দেখে বর্তমানে অনেকেই অন্য ফসলের মতই বাঁশের পরিকল্পিত চাষ শুরু করেছেন।
চৌগাছা পৌর এলাকার বেলেমাঠ মহল্লার কৃষক মুক্তার হোসেন। কৃষির ওপরই নির্ভর তার পরিবার। নতুন চিন্তার বহিঃপ্রকাশ তার বাঁশ চাষ। চার বিঘা ফসলি জমিতে পরিকল্পিতভাবে বাঁশের চাষ করেছেন এবং সাফল্য পেয়ে এখন মহাখুশি। বেলেমাঠ বাঘারদাড়ি মাঠে চার বছর আগে বাঁশ লাগান। প্রতিটি বাঁশ হতে অসংখ্য বাঁশ বের হয়ে বিশাল ঝাড়ে রূপ নিয়েছে। বছরের বার মাসই তিনি বাঁশ বিক্রি করছেন এবং অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য পেয়েছেন।
সম্প্রতি তার ঝাড়ে গিয়ে দেখা যায়, বাঁশ বাগানের মাথার উপর রোদ আর ছায়ার লুকোচুরি খেলার মাঝে কৃষক মুক্তার হোসেন জমিতে সেচের পানি দিতে ব্যস্ত। এ সময় কথা হয় তার সাথে। কৃষক মুক্তার হোসেন বলেন, গ্রাম্য একটি প্রবাদ আছে জন্ম হতে মৃত্যু এই পুরো সময়টিতে বাঁশের প্রয়োজন। আধুনিক সভ্যতার যুগে বাঁশের চাহিদা আরও বেড়ে গেছে। বর্তমানে একটি বাঁশ আড়াইশ থেকে ৩০০ টাকায় খুচরো কিনতে হচ্ছে। তাই চিন্তা করলাম বাঁশ উৎপাদন করলে খারাপ হবে না। যে ভাবনা সেই কাজ, চার বিঘা জমিতে বাঁশ রোপণ করি। এখন তা বিক্রি শুরু হয়েছে। বাঁশ উৎপাদনে কোনই খরচ নেই। প্রচন্ড খরা হলে জমিতে পানি দিলেই যথেষ্ঠ। আমরা ছোট বেলাতে এমনকি এই বয়সে এসেও দেখছি, বাগান হচ্ছে বাঁশের জন্যে উপযুক্ত জায়গা। বিনা যন্তে চরম অবহেলার মধ্যে বেড়ে উঠা বাঁশ কতই না সুন্দর। সেই বাঁশ যদি ফসলি জমিতে পরিকল্পিতভাবে চাষ করা হয় তাহলে সাফল্য তো অবশ্যই আসবে। যেমনটি আমি নিজে পেয়েছি। প্রতি দিনই বাঁশের ব্যাপারী আসছেন ঝাড় ঘুরে পছন্দ মত বাঁশ কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। এরজন্যে আমাকে কোন বাড়তি ব্যয় করতে হয়না। মুক্তার হোসেনের মত ওই গ্রামে রেজাউল ইসলাম ৩ বিঘা, মন্টু মিয়া ৩ বিঘা, আব্দুল কাদের আড়াই বিঘা, রফিউদ্দিন আড়াই বিঘা, রিজাউল ইসলাম ২ বিঘা, বাবু আড়াই বিঘা, আব্দুল আলিম ৩ বিঘাসহ অনেকেই পরিকল্পিত বাঁশ উৎপাদন শুরু করেছেন। কেউ পুরোনো বাঁশের ঝাড় পরিচর্জা করছেন কেউ নতুনভাবে বিঘা বিঘা জমিতে বাঁশ চাষ শুরু করেছেন। বাঁশ চাষিরা জানান, বর্তমানে দেশে ব্যাপক বাঁশের চাহিদা রয়েছে। এক সময় শুধু মাটির ঘরের ছাউনি, বিচালি গাঁদাসহ কিছু কিছু কাজে বিচ্ছিন্নভাবে বাঁশের ব্যবহার হত। তবে এখন গ্রাম থেকে শুরু করে শহরে ব্যাপক তৈরি হচ্ছে পাকা বাড়িঘর। এসব ঘরের ছাদ ঢালাই এর খুঁটি হিসেবে বাঁশের কদর সব থেকে বেশি। যার কারণে এক দশক আগেও যে বাঁশ ১শ থেকে ১২০ টাকায় পাওয়া যেত সেই বাঁশ এখন ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, চৌগাছায় কত হেক্টর জমিতে বাঁশের চাষ হচ্ছে তার সুনির্দিষ্ট কোন হিসেব নেই। তবে প্রতিটি গ্রামেই কমবেশি বাঁশ উৎপাদন হলেও স্বরুপদাহ, সুখপুকুরিয়া ও নারায়নপুর ইউনিয়নসহ পৌর এলাকার বেশকিছু গ্রামে বেশি বাঁশ উৎপাদন হয়। আমরা জেনেছি কৃষকরা বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে বাঁশের চাষ করছেন। এটি নিঃসন্দেহে একটি ভাল উদ্যোগ।