চুয়াডাঙ্গায় বীজ থেকে কুমড়া না হওয়ায় লাখ লাখ টাকার ক্ষতি

0

রিফাত রহমান, চুয়াডাঙ্গা ॥ বীজ কিনে অর্ধলক্ষাধিক টাকার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন চুয়াডাঙ্গার কুমড়া চাষিরা। সরকার অনুমোদিত এসিআই ও লালতী কোম্পানির কুমড়ার বীজ কিনেছিলেন তারা। ওই বীজ জমিতে বপণ করে গাছে কুমড়া না হওয়ায় হতাশ হয়েছেন চাষি। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা বীজ কোম্পানি প্রতিনিধিদের কাছে ধর্না দিয়ে কোনো প্রতিকার না পেয়ে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তবে কালক্ষেপণের জন্য চাষিরা দায়ী করেছেন চুয়াডাঙ্গা সদর কৃষি কর্মকর্তাদের।
চুয়াডাঙ্গার দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানি চিনিকল খামারের আখ চাষ হয় না-এমন পড়ে থাকা জমি বিঘা প্রতি ১০ হাজার ৫০০ টাকায় ৬ মাসের জন্য ইজারা নেন কয়েকজন চাষি। সেখানে তারা কুমড়ার চাষ করেন। কুমড়া চাষে চাষিরা ভালো মানের কোম্পানির বীজ বপণ করে থাকেন। ভালো মানের এসিআই ও লালতী কোম্পানির কুমড়া বীজ এবার জমিতে বপণ করে বড় রকমের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন কয়েকজন চাষি। বপণের পর জমিতে বড় বড় গাছ হলেও তাতে কুমড়া ধরেনি।
চুয়াডাঙ্গার হিজলগাড়ী, কোটালী ও ছয়ঘরিয়া গ্রামের চাষিদের প্রায় ১৭০ বিঘা জমিতে এসিআই ও লালতী কোম্পানির কুমড়া বীজ বপণ করে এ সমস্যায় পড়েছেন চাষিরা। জমি ইজারা ও জমি প্রস্তুতের জন্য চাষাবাদ, সার, কীটনাশক, সেচ ও বীজ বপণ ব্যয় কিভাবে পুষাবেন তা নিয়ে চাষিরা চিন্তিত।
কোটালী গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত চাষি জুয়েল রানা জানান, আড়িয়া কৃষি খামারে ৩০ বিঘা জমি ইজারা নিয়ে লালতী কোম্পানির বীজ কিনে কুমড়ার চাষ করেছিলেন। এতে তার ব্যয় হয় ৬ লাখ টাকা। ৩০ বিঘা কুমড়া ১২ লাখ টাকায় বিক্রি হলে ব্যয় বাদে ৬ লাখ টাকা তার লাভ হতো। কিন্তু লাভ তো দূরে থাক, আর্থিক ক্ষতি কিভাবে সামলাবেন সেই চিন্তায় তিনি ব্যস্ত। তিনি আরও জানান, কুমড়া বীজ কেনার জন্য কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখলেও এখন ফোন কলই ধরে না। তাছাড়া কৃষি বিভাগ এ ব্যাপারটি প্রথমে আমলে নেইনি। প্রায় তিন সপ্তাহ পর তারা ক্ষেত পরিদর্শনে আসে।
আরেক ক্ষতিগ্রস্ত চাষি হিজলগাড়ী গ্রামের সাইফুল আজম মিন্টু বলেন, তিনি চলতি মৌসুমে কেরু অ্যান্ড কোম্পানি চিনিকলের আড়িয়া ও ডিহি কৃষি খামারের ৫০ বিঘা জমি ১০ হাজার ৫০০ টাকা দরে ইজারা নেন। ওই জমিতে এসিআই কোম্পানির কুমড়ার বীজ কিনে বপণ করেন। দুঃখজনক হলেও সত্য বীজ থেকে গাছ হলেও তাতে কুমড়া ধরেনি। বিষয়টি কোম্পানির প্রতিনিধি ও এলাকার দায়িত্বরত কৃষি অফিসারদেকে দেখান। এতে জমি ইজারা এবং চাষাবাদ বাবদ প্রায় ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে তার।
কুমড়ার বীজ প্রসঙ্গে এসিআই বীজ কোম্পানির এরিয়া সেলস ম্যানেজার আনোয়ার হোসেন বলেন, এ বিষয়টি অবহিত হওয়ার পর এটা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সেখান থেকে নির্দেশনা আসলে সে মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
লালতী কুমড়া বীজ কোম্পানির সেলস ম্যানেজার ফরিদ বলেন, চুয়াডাঙ্গা শহরের আলী হোসেন সুপার মার্কেটে অবস্থিত বগা মিয়ার দোকান থেকে বীজ নিয়ে আমি বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করি। ওই বীজ ভালো কি মন্দ তা আমি জানি না। এ বীজের দায়িত্ব নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা জানান, কয়েকজন চাষি এসিআই ও লালতী কুমড়া বীজ বপণ করে কুমড়ার ফলন পাননি। কি কারনে ফল হয়নি তা দেখার জন্য একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। ওই কমিটির সদস্যরা প্রতিবেদন জমা দিলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি আরও বলেন, প্রথমে তাদের কাছ থেকে বিষয়টি জেনে সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা চাষিদের জমিতে জৈব সার ব্যবহার করতে বলেন। সেটাও কোনো কাজে আসেনি। কুমড়া গাছে কোনো ফলই ধরেনি।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ড.কিসিঞ্জার চাকমা কুমড়া বীজ প্রসঙ্গে বলেন, যিনি চাষি তিনি একজন ভোক্তা। আর যিনি বীজ বিক্রি করছেন তিনি বিক্রেতা। ভোক্তা হিসেবে যদি বীজ নিয়ে প্রতারিত হয়, তাহলে আইনগত সহায়তা নেওয়ার বিধান আছে। তিনি আরও বলেন, এ জেলায় যে প্রতিষ্ঠানই বীজ বিক্রি করুক না কেন তাদের ডেটা বেইজ জেলা এবং উপজেলা কৃষি অফিসে থাকা জরুরি। যেহেতু চাষিদের ভালো রকমের ক্ষতি হয়েছে সে কারণে এটা গুরুত্বের সঙ্গে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।