বেনাপোল কাস্টমসে রাজস্ব আদায়ে ধস

0

 

কামাল হোসেন, বেনাপোল॥ দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোলে দুর্নীতি, হয়রানি ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের অভাবে রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের ধস নেমেছে।
বেনাপোল কাস্টমস হাউসে গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৮০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় কম হয়েছে। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ৯৬৬ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ৫ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা।
গত ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থ বছরে আমদানি কমেছে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৯২১ মেট্রিক টন।
ভারত থেকে বেনাপোল বন্দর দিয়ে শিল্প কলকারখানার কাচামাল, মেশিনারিজ, টায়ার, মোটর পার্টস,টু হুইলার,থ্রি হুইলার পার্টস, কেমিক্যাল, মোটরগাড়ির চেসিস, রড, লোহার কুচি, গার্মেন্টসের কাপড়,পাথর, মার্বেল স্লাব,কসমেটিকস, বাস ও ট্রাক চেসিস, মাছ ও ফলসহ অন্যান্য পণ্য আমদানি হচ্ছে ।
অন্যদিকে ভারতে রফতানি হচ্ছে, পাট ও পাটজাত পণ্য, মাছ, ঝুট, রেডিমেড গার্মেন্টস,লুংগি, কেমিক্যাল ও ব্যাগ।

বেনাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ এসব তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, বর্তমানে দেশে ডলার সংকটের কারণে খাদ্যপণ্য ছাড়া অন্য কোন পণ্য আমদানির জন্যে এলসি খুলছে না ব্যাংকগুলো । ব্যবসায়ীরা তাদের চাহিদা অনুযায়ী আমদানি করতে পারছেন না।
কাস্টমস ও বন্দরের ঘুষ বাণিজ্যের কারণে গত ৫ বছরে বেনাপোল কাস্টমস হাউসে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করতে পারেনি বলে অভিযোগ রয়েছে। তারা ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে সিএন্ডএফ’র ফাইল প্রতি ঘুষ আদায় করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
বেনাপোল বন্দরের পরিচালক আব্দুল জলিল বলেন, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২০ লাখ ৩৫ হাজার ৪৯৯ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়েছে এই বন্দর দিয়ে। আর ২০২১-২২ অর্থবছরে পণ্য আমদানি হয়েছে ২১ লাখ ৭৯ হাজার ৪২০ মেট্রিক টন। আমদানি কমেছে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৯২১ মেট্রিক টন। ফলে সরকারের রাজস্ব আয়ও কমে গেছে।
গত বছর (২০২২-২৩) বেনাপোল কাস্টমস হাউসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ৯৬৬ কোটি। সেখানে আদায় হয়েছিল ৫ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা।
২০২০-২১ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ হাজার ২৪৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। সেখানে আদায় হয়েছে ৪ হাজার ১৪৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা। ওই বছরেও ঘাটতি ছিল ২ হাজার ৯৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।তাছাড়া বর্তমানে বেনাপোল বন্দরে লোকবল সংকট রয়েছে ভয়াবহ। কর্তৃপক্ষকে বারবার পত্র দিয়েও কোন সমাধান পাওয়া যাচ্ছে না বলে তিনি জানান।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শামসুর রহমান বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় দুই দেশের ব্যবসায়ীরা বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি- রফতানি করতে আগ্রহী। তবে ডলার সংকটের কারণে সরকার এলসির ওপর শতভাগ মার্জিন শর্ত আরোপ করেছে আর ব্যাংকগুলো এলসি খুলছে না। ফলে এই বন্দর দিয়ে আমদানি কমেছে।আর আমদানি কমলে রাজস্ব আয়ও কমবে- এটাই স্বাভাবিক। অন্যদিকে বেনাপোল কাস্টমস হাউসে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তাদের সংখ্যাও অনেক কম।
যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, সরকার এলসি খুলতে ১০০ শতাংশ মার্জিন দেয়ার নিয়ম করেছে। গত কয়েক মাস ধরে ব্যাংকগুলো এলসি খুলছে না।কাস্টমস হাউসে ব্যবসায়ীদের হয়রানি, জোর করে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি, বন্দরে অব্যবস্থাপনা,রাজস্ব ফাঁকিতে সহায়তারসহ নানা ধরনের অনিয়মের কারণে অনেক সাধারণ ব্যবসায়ী বেনাপোল বন্দর ছেড়ে চলে গেছেন অন্যত্র।
যশোরের আর এন রোডের আমদানিকারক আব্দুল কাদের বলেন, শুল্ক গোয়েন্দার হয়রানি এবং একই পণ্য কাস্টমস ও শুল্ক গোয়েন্দা যৌথভাবে পরীক্ষণ না করে অলাদা পরীক্ষণ করায় পণ্যের গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন অর্থিকভাবে।
ঘুষের ২৩ লাখ টাকা নিয়ে ঢাকা বিমানবন্দরে আটক হন বেনাপোল কাস্টমস হাউসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা খন্দকার মুকুল হোসেন। গত ২০২২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি দুদকের যশোর জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক আল আমিন তার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন।
বেনাপোল কাস্টমস হাউসের যুগ্ম কমিশনার সাফায়েত হোসেন বলেন, ডলার সংকটের কারণে ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে এলসি খুলতে পারছেন না। এ কারণে পণ্য আমদানি কমেছে। আর আমদানি কমলে সরকারের রাজস্ব আয়ও কমে যায়। তবে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে কাস্টমস হাউসের রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি ২৮ শতাংশ। যার কারণে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব আয় কিছুটা ঘাটতি হয়েছে। তিনি দাবি করেন, কাস্টমস কর্তৃপক্ষ কোন আমদানিকারকে হয়রানি করে না।