কপিলমুনির নার্সারিতে জোড় কলম তৈরিতে ব্যস্ত শ্রমিক

0

এইচএম শফিউল ইসলাম,কপিলমুনি (খুলনা) ॥ খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কুিপলমুনিসহ আশপাশ উপজেলার নার্সারিতে চারা উৎপাদনে মালিক ও শ্রমিকরা জোড় কলম তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। মাতৃগুণ বজায় রাখা, দ্রুত ফলন, রোগ প্রতিরোধে ক্ষমতা বাড়ানো এবং অধিক ফলন পেতে অঙ্গজ পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। গাছের চারা তৈরির পদ্ধতির নাম কলম। এ কলম তৈরিতে রয়েছে নানা নাম ও পদ্ধতি। যেমন, গুটি কলম, শাখা কলম (কাটিং), চোখ কলম বা বাডিং। তবে কলম তৈরিতে গ্রাফটিং বা জোড় কলম, কাটিং বা উপজোড় কলম উল্লেখযোগ্য পদ্ধতি।
যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গাছ যৌন কোষ বা তার অঙ্গজ কোষ থেকে নতুন স্বতন্ত্র গাছ সৃষ্টি করে তাকে বংশবিস্তার বলা হয়। যেমন যৌন বংশবিস্তার ও অযৌন বংশবিস্তার। গাছ রোপণের মূল উদ্দেশ্য হলো ভালো, উন্নতমান ও মাতৃগুণ সম্পন্ন ফল পাওয়া। এ কারণে ফল গাছ রোপণের ক্ষেত্রে যৌন পদ্ধতির তুলনায় অযৌন পদ্ধতির চারা/কলম গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এ পদ্ধতিতে উৎপাদিত চারা/কলম রোপণ করলে মাতৃগুণ সম্পন্ন ফল পাওয়া যায়। গাছে তাড়াতাড়ি ফল ধরে এবং গাছ ছোট হয়। তাই অল্প জায়গায় অনেক গাছ লাগানো যায়। অযৌন বংশবিস্তার পদ্ধতিগুলোর মধ্যে গ্রাফটিং বা ফাঁটল জোর কলম একটি অন্যতম পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে একাধিক ফল গাছে কলম করা যায়। উপজেলার গদাইপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ছোট-বড় ৫ শতাধিত নার্সারি গড়ে উঠেছে। যার উল্লেখযোগ্য সংখ্যা রয়েছে গদাইপুর গ্রামে। মৌসুম শুরুতে চারা তৈরির জন্যে নার্সারি মালিক ও কর্মচারীরা ব্যস্ত হয়ে ওঠেন। বর্ষা শুরু হলে গুটি কলম তৈরি করা হয়। গুটি কলম তৈরি করতে গাছের ডালের দুই ইঞ্চি মত ছাল পুরোটা গোল করে কেঁটে ফেলে জৈব সার মিশ্রিত মাটি দিয়ে কাঁটা অংশ ভাল করে বেঁধে রাখা হয়। ১ মাসের মধ্যেই মাটির ভেতর থেকে শেকড় বেড় হয়। পেয়ারা, লেবু, জলপাইসহ বিভিন্ন গাছে গুটি কলম তৈরি করা হয়। গাছের ডালের সঙ্গে অন্য গাছের ডাল জোড়া লাগিয়ে জোড় কলম তৈরি করা হয়।
তেজপাতার সঙ্গে কাবাবচিনি, আমের সঙ্গে আম, ছবেদার সঙ্গে খিরখেজুর, আতার সঙ্গে দেশি আতা জোড়া দিয়ে জোড় কলম তৈরি করা হয়। কাঁটা জাতীয় কুলসহ বিভিন্ন ফলের চারা চোখ বসিয়ে বাডিং কলম তৈরি করা হয়।
উপজেলার বিভিন্ন নার্সারিতে চলতি মৌসুমে আম, পেয়ারা, জামসহ বিভিন্ন ফলের ২০ লাখ ও কুলের প্রায় ৩০ লাখ কলম তৈরি করা হচ্ছে।
গদাইপুর গ্রামের নার্সারি মালিক হাবিবুর রহমান জানান, গত বছর তার নার্সারিতে উৎপাদিত চারা বিক্রি করতে না পারায় ক্ষেতে শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তিনি। এ বছরও তিনি নার্সারিতে চারা উৎপাদন করছেন।
হিতামপুর গ্রামের রজনীগন্ধা নার্সারির মালিক সুকনাথ পাল জানান, তার নার্সারিতে দেড় লাখ জোড় কলম তৈরি করা হয়ে গেছে। আর ৫০ হাজার তৈরির কাজ চলছে।
গদাইপুর গ্রামের সততা নার্সারির মালিক অঞ্জনা রানী পাল জানান, তার নার্সারিতে বিভিন্ন জাতের কুলের প্রায় ৩ লাখ কলম তৈরি করছেন। শ্রমিকের অভাবে কলম তৈরী করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে কলম তৈরির সময় পার হয়ে গেলে এ মৌসুমের আর কলম তৈরি করা যাবে না। পাইকগাছা উপজেলা নার্সারি মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অশোক কুমার পাল জানান, কলম তৈরির শ্রমিক ঠিকমত না পাওয়ায় উচ্চমূল্যে শ্রমিক নিয়ে কলম তৈরি করতে হচ্ছে। কারণ সময় চলে গেলে এ মৌসুমে আর কলম তৈরি করা যাবে না। গদাইপুর এলাকার তৈরি কলম চট্টগ্রাম, দিনাজপুর, রংপুর, সিলেট, বরিশাল, কুমিল্লা, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হচ্ছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, পাইকগাছার নার্সারি শিল্প খুলনা জেলায় শীর্ষ পর্যায়ে রয়েছে।