এবারও যশোরে বোরো ধান সংগ্রহের টার্গেট পূরণ না হওয়ার শঙ্কা

0

আকরামুজ্জামান ॥ বোরো মৌসুমের ধান ও চাল সংগ্রহ কর্মসূচি শুরু হয়েছে গত ৭ মে থেকে। কর্মসূচির এই ২৪ দিনে যশোরে ধান সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৫৯৪ দশমিক ৭২০ মেট্রিক টন ও চাল ৭৩৫৫ দশমিক ৫৫০ মেট্রিক টন। লক্ষ্যমাত্রার ১০ শতাংশ ধানও সংগ্রহ হয়নি। অথচ সংগ্রহের টার্গেট রয়েছে ১৩ হাজার ৫৪০ মেট্রিক টন ধান ও ৩২ হাজার মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল। সংগ্রহ অভিযান আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত চলবে।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস বলছে, এ বছর বাজারে ধানের দাম ও সরকার নির্ধারিত মূল্যের মধ্যে বিস্তর ফারাক না থাকায় অন্যান্য বছরে ধান সংগ্রহে কৃষকের সাড়া না পেলেও এবার আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। সংগ্রহের সময়ের মধ্যেই ধান ও চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে বলে দাবি করেছেন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক।
তবে কৃষকের দাবি, খাদ্য অফিস ধান সংগ্রহের বিষয়ে আশাবাদী হলেও শেষ পর্যন্ত তা সফল হবে না। কারণ সার, ডিজেল, বিদ্যুৎসহ এবার সকল কৃষি উপকরণের দাম বেড়েছে। একই সাথে কৃষি শ্রমিকের মজুরিও বাড়তি। তারপরও বর্তমান বাজারে ধান ১ হাজার ১৮০ টাকার ওপরে ওঠেনি। অথচ গত বছরে এই সময়ে বাজারে নতুন ধান বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৫০০ টাকার ওপরে। এ অবস্থায় সরকারি হিসেবে ৩০ টাকা কেজি দর অর্থ্যাৎ ১২শ টাকা মণ ধান খাদ্য গুদামে পৌঁছে দেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। ফলে শেষ সময়ে চাল সংগ্রহে সফল হলেও ধান সংগ্রহে সফল হবে না খাদ্য বিভাগ।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসের তথ্যমতে, ৭ মে থেকে যশোরে বোরো ধান ও চাল সংগ্রহ শুরু হয়েছে। এরমধ্যে এ পর্যন্ত যশোর সদর উপজেলার লক্ষ্যমাত্রার ২ হাজার ২১১ মেট্রিক ধানের মধ্যে সংগ্রহ হয়েছে ১২৬ মেট্রিক টান। আর ৬ হাজার ১৩০ মেট্রিক টন চালের মধ্যে ১হাজার ৮৩৮ মেট্রিক টন।
মণিরামপুর উপজেলার ২ হাজার ৩৭৬ মেট্রিক টন ধানের মধ্যে এখনও পর্যন্ত এক ছটাকও ধান সংগ্রহ হয়নি। তবে ২ হাজার ৫৫২ মেট্রিক চালের মধ্যে অর্জন হয়েছে ৭৩০ দশমিক ২৬০ মেট্রিক টন। কেশবপুর উপজেলার ১ হাজার ২১৮ মেট্রিক টন ধানের মধ্যে অর্জন হয়েছে মাত্র ৬০ মেট্রিক টন। আর ৩৩৪ মেট্রিক চালের মধ্যে অর্জন হয়েয়ে ৯৫ দশমিক ৪০০ মেট্রিক টন।
অভয়নগর উপজেলা ১হাজার ১৮৬ মেট্রিক টন ধানের মধ্যে অর্জন হয়েছে ৩৪৮ দশমিক ৭২০ মেট্রিক টন ও ৭ হাজার ৮৯২ মেট্রিক টন চালের মধ্যে অর্জন হয়েছে ১ হাজার ৪১১ মেট্রিক টন। ঝিকরগাছা উপজেলার ১ হাজার ৬৪১ মেট্রিক টন ধানের মধ্যে অর্জন হয়েছে মাত্র ৩৩ মেট্রিক টন। আর ১ হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন চালের মধ্যে অর্জন হয়েছে ৭৫৯ মেট্রিক টন।
শার্শা উপজেলার ১ হাজার ৯৭৫ মেট্রিক টন ধানের মধ্যে এ পর্যন্ত এক ছটাক ধানও সংগ্রহ হয়নি। তবে ১ ০হাজার ৪৮১ মেট্রিক টন চালের মধ্যে অর্জন হয়েছে ১হাজার ৮৫২ মেট্রিক টন। বাঘারপাড়া উপজেলায় ১ হাজার ৩৯০ মেট্রিক টন ধানের মধ্যে সেখানে এখনও পর্যন্ত কোনও ধান সংগ্রহ হয়নি। তবে ১ হাজার ৩২২ মেট্রিক টন চালের মধ্যে অর্জন হয়েছে ১১৭ মেট্রিক টন।
চৌগাছা উপজেলায় ১ হাজার ৪৪৩ মেট্রিক টন ধানের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে অর্জন হয়েছে মাত্র ২৭ মেট্রিক টন। আর ১ হাজার ৪৫১ মেট্রিক টন চালের মধ্যে অর্জন হয়েছে ৫৫০ মেট্রিক টন।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নিত্যানন্দ কু জানান, গত কয়েক বছরে যশোরে ধান সংগ্রহে কৃষকের কোনও সাড়া না পেলেও চাল সংগ্রহে তারা শতভাগ সফল হয়েছে। তবে এবছর সংগ্রহ মূল্য ও বাজারমূল্য প্রায় এক হওয়ায় কৃষক ধান সংগ্রহে আগ্রহ দেখাচ্ছে। সংগ্রহের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ধান ও চাল দুটোই সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সফল হবেন বলে তিনি দাবি করেন।
তিনি বলেন, জেলার ৭ উপজেলার মধ্যে ৬ টি উপজেলায় ডিজিটাল অ্যাপের মাধ্যমে ধান সংগ্রহের জন্য কৃষকদের নিবন্ধন করে এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। পাশাপাশি চাল সংগ্রহের জন্য জেলার ৮৯ জন মিলারের কাছ থেকে চাল সংগ্রহের জন্য আবেদন আহ্বান করা হয়েছে।
তবে কৃষকরা বলছেন আমন মৌসুমে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বাজারে ধানের দাম বেশি হওয়ায় সে সময়ে তারা খাদ্য গুদামে কোনও ধান দেয়নি। তবে এবছর বর্তমান বাজারমূল্য ও সরকার নির্ধারিত মূল্যের মধ্যে বেশি পার্থক্য নেই। এজন্য অনেক কৃষক আপাতত ধান বিক্রি না করে মজুত রেখে দামের জন্য অপেক্ষা করবেন । তবে খাদ্য গুদামে ধান পৌঁছে দিতে পরিবহন খরচের কারণে তারা ধান সংগ্রহে আগ্রহ হারাচ্ছেন।