কলারোয়ায় একটি বাড়ি, একটি খামার প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

0

কে এম আনিছুর রহমান,কলারোয়া(সাতক্ষীরা)॥ সাতক্ষীরার কলারোয়া ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের উপকারভোগী সদস্যদের ৬৬ লাখ ৬৪ হাজার ২৫০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। সদস্যদের সঞ্চয়ের টাকা জমা না দিয়ে ও সদস্যদের নামে ঋণ উত্তোলন করে এসব টাকা আত্মসাৎ করা হয় বলে অভিযোগ। এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে তৎকালীন শাখা ব্যবস্থাপক বদরুল আলম ও ফিল্ড অফিসার রিজিয়া পারভীনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি জুনিয়র অফিসার সালমা খাতুন, অফিস সহকারী কামরুজ্জামান ও শিব প্রসাদ বৈদ্যকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে।
সূত্র মতে, কলারোয়ায় ২০১৪ সালে পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে ‘একটি বাড়ি, একটি খামার’ প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীতে এই প্রকল্পের নাম দেয়া হয় ‘আমার বাড়ি, আমার খামার’। সরকারিভাবে পরিচালিত হওয়ায় উপজেলার গ্রামে গ্রামে গড়ে উঠেছে এই সমিতি।
সর্বশেষ অডিট অনুযায়ী, উপকারভোগী সদস্যদের সঞ্চয়ের টাকা জমা না দিয়ে ও সদস্যদের নামে ঋণ উত্তোলন করে গ্রাহকদের ৬৬ লাখ ৬৪ হাজার ২৫০ টাকা আত্মসাত করা হয়েছে বলে প্রমাণিত হয়েছে।
উপজেলার পাচপোতা গ্রামের মোখলেসুর জানান, তিনি ২০১৪ সালে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ সমিতির সদস্য হন। প্রতি মাসে সঞ্চয়ের টাকাও জমা দিয়ে যাচ্ছেন। তবে অফিস থেকে টাকা জমা দেয়ার বই আজও পাননি তিনি। উল্টো অফিস থেকে নোটিশ করা হয়েছে, তিনি নাকি তার নামে ৪৫,০০০ হাজার টাকার ঋণ উত্তোলন করেছেন। অথচ তিনি এ ঋণের বিষয়ে কিছুই জানেন না।
একই গ্রামের শাহিনুর জানান, সমিতির কর্মকর্তারা তার পিতা, ভাই ও বোনের নামে ঋণ তুলে আত্মসাৎ করেছেন। তারা কোন ঋণ নেননি।

উপজেলার হরিণা গোয়লচাতর গ্রামের রফিকুল ইসলাম জানান, তিনি কখনও অফিসে যাননি। কোন কাগজপত্রে সইও করেন নি। অথচ তার নামে ঋণ নেয়া হয়েছে ৪৫ হাজার টাকা। সদস্য বই তার বাড়িতে আছে। কিভাবে এই ঋণের টাকা দেওয়া হলো ? আর কে উঠালো ? তা তিনি জানেন না।
রিক্তা খাতুন নামে আরও একজন জানান, তার নামেও ঋণ উঠানো হয়েছে। কিন্তু তিনি জানেন না।
এদিকে ফাহিমা ইয়াসমীন ও আজিজুর রহমান নামে দু’জন জানান, তারা ঋণ নিয়েছিলেন। ঋণের টাকা সুদসহ পরিশোধও করেছেন। কিন্তু টাকা অফিসে জমা হয়নি।
উপজেলার কেঁড়াগছি ইউনিয়নের লাভলী, কবিরুল, হালিমা খাতুন, শাহিনুর, কবিরুলসহ ১৩২৪ জন সদস্যের সবার নামেই ঋণ নেয়া হয়েছে। কিন্তু তারা ঋণের বিষয় কিছুই জানেন না।
সম্প্রতি আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের ঢাকা অফিস থেকে অডিট অফিসাররা উপকারভোগীদের এলাকা পরিদর্শন করলে গ্রাহকরা এসব তথ্য জানতে পারেন।
এদিকে অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় বরখাস্ত সাবেক কলারোয়া শাখা ব্যবস্থাপক ও উপজেলা সমন্বয়কারী বদরুল আলম জানান, তিনি কোন টাকা আত্মসাৎ করেন নি। যারা টাকা নিয়েছে তারা স্বীকারোক্তি দিয়েছে। তবে তার মনিটরিং ব্যবস্থা দুর্বল ছিল বলে তিনি স্বীকার করেন।
তবে ফিল্ড অফিসার রিজিয়া পারভীন জানান, বদরুল আলম শাখা ব্যাবস্থাপকের দায়িত্বে থাকাকালীন তিনি তার শ্বশুরবাড়ি লোহাগড়ার নড়াইলে কেঁড়াগাছি সমিতি থেকে ১৬ লাখ ৮৫,০০০ টাকা সদস্যদের নামে উত্তোলন করেন।
বরখাস্ত হওয়া ফিল্ড অফিসার রিজিয়া পারভীন জানান, ইতোমধ্যে কিছু টাকা ফেরতও দিয়েছেন। তবে তার নিকট অতিরিক্ত টাকা দাবি করা হচ্ছে। তার পক্ষে অতিরিক্ত টাকা ফেরত দেয়া সম্ভব না। তিনি সর্বমোট ৩৭ লাখ টাকার মত নিয়েছেন। এর মধ্যে ৫,৫০,০০০ টাকা তার কাছ থেকে ধার হিসেবে ও ১৬ লাখ ৮৫,০০০ টাকা তিনি দিয়েছেন সাবেক কলারোয়া শাখা ব্যবস্থাপক ও উপজেলা সমন্বয়কারী বদরুল আলম ও জুনিয়র অফিসার সালমা পারভীনের কাছে। তারা দুজনে এখন আর রিজিয়া পারভীনের মোবাইল কল রিসিভ করেন না। সে কারণে ভুয়া ঋণের টাকা তিনি পরিশোধ করতে পারছেন না।

জুনিয়র অফিসার সালমা খাতুনের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ, তিনি বিভিন্ন দুর্নীতির মাধ্যমে কলারোয়া শাখা থেকে ২০ লক্ষাধিক টাকা আত্মসাত করে তালা উপজেলার ইসলামকাঠি ইউনিয়নের কাজীডাঙ্গা সুজনশাহ গ্রামে ও খুলনার ময়লাপোতা এলাকায় জমি কিনেছেন। ইতোমধ্যে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ব্যবস্থপনা পরিচালক শেখ আমিনুর রহমান স্বাক্ষরিত পত্রে ৯,৯৯,৬৩৮ টাকা অনিয়মের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে প্রধান শাখা থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে কলারোয়া উপজেলার ‘আমার বাড়ি, আমার খামার’ প্রকল্পের উপজেলা সমন্বয়কারী ও শাখা ব্যাবস্থাপক শিরীন সুলতানা জানান, কেঁড়গাছি ইউনিয়ন ভুয়া ঋণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আত্মসাৎকৃত গ্রাহকদের ৬৬ লাখ ৬৪ হাজার ২৫০ টাকার বিষয়ে ইতোমধ্যে ২ জনকে সাময়িক বরখাস্ত ও ৩ জনকে নামে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। আমি অফিসে যোগদান করার পরে পরে কার্যালয়ের সার্বিক শৃঙ্খলা আনয়ন করেছি।
‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের জেলা সমন্বয়কারী বিশ্বজিত সরদার জানান- কলারোয়া শাখার কেঁড়াগাছি ইউনিয়নের ৩০টি গ্রাম সমিতি থেকে ৬৬ লাখ ৬৪ হাজার ২৫০ টাকা আত্মসাৎ করায় তৎকালীন শাখা ব্যবস্থাপক ও উপজেলা সমন্বয়কারী বদরুল আলম ও ফিল্ড অফিসার রিজিয়া পারভীনকে সাময়িক বরখাস্ত ও জুনিয়র অফিসার সালমা খাতুন, অফিস সহকারী কামরুজ্জামান ও শিব প্রসাদ বৈদ্যকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেছে শৃঙ্খলা ও আপিল বিভাগ। পরবর্তীতে বিভাগীয় মামলা হবে।