পরকীয়ার টানে স্বামীকে অভিনব পন্থায় হত্যা যশোরে, স্ত্রীসহ আটক ২

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পরকীয়ার টানে স্বামীকে অভিনব পন্থায় হত্যা করেছেন যশোরের এক নারী। শেফালী বেগম (৩৩) নামে ওই নারী প্রথমে স্বামীকে ওষুধ খাইয়ে ঘুম পড়ান। তারপর ঘুমন্ত ব্যক্তির শরীরে ভিজিয়ে রাখা মোবাইল ফোনের ব্যাটারি থেকে নিসৃত অ্যাসিড পানি সিরিঞ্জ দিয়ে পুশ করে হত্যা করেন। শহরের বকচর হুশতলায় মঙ্গলবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। নিহত জহির হাসান গাজী (৩৮) ওই এলাকার মৃত হোসেন আলী গাজীর ছেলে। তিনি এলাকার কপোতাক্ষ লায়ন্স চক্ষু হাসপাতালের সামনের জান্নাত ফার্মেসি নামে একটি ওষুধের দোকানের কর্মচারী ছিলেন। এ ঘটনায় শেফালীর প্রেমিক রবিউলও আটক হয়েছেন।
এ ছাড়া হত্যায় ব্যবহৃত ইনজেকশনের ২টি সিরিঞ্জ, মোবাইল ফোনের ভাঙা ব্যাটারির অংশ বিশেষ ও ঘুমের ওষুধ উদ্ধার করা হয়েছে শেফালীর স্বীকারোক্তিতে।
গতকাল বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে কোতয়ালি থানায় অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানায় পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক-সার্কেল) জুয়েল ইমরান জানান, জহির হাসান গাজীর স্ত্রী শেফালী বেগম শহরের ঘোপ জেল রোডের মাতৃসেবা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আয়া হিসেবে কাজ করেন। তার সাথে পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে শহরের শংকরপুরের ভাঙড়ি ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম সরদারের। এ নিয়ে দাম্পত্য কলহের জের ধরে জহিরকে হত্যার পরিকল্পনা করেন শেফালী। পরিল্পনা অনুযায়ী হত্যার ১০/১৫ দিন আগে শেফালী মোবাইল ফোনের ব্যাটারি ভেঙে পানির ভেতর রেখে দেন অ্যাসিড বের করার জন্য। এরপর মঙ্গলবার দুপুরে জহিরের খাবারের সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেন তিনি। খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন জহির। বিকেলে তাদের ছেলে ও মেয়ে বাড়ির বাইরে থাকার সুযোগে পানিতে রাখা মোবাইল ফোনের ভাঙা ব্যাটারি থেকে নিসৃত অ্যাসিড পানি সিরিঞ্জের মাধ্যমে ঘুমন্ত স্বামীর বাম হাতে পুশ করে দেন শেফালী। পরে জহির স্ট্রোক করে মারা গেছেন বলে প্রচার করেন তিনি। এ সময় জহিরের ভাইসহ স্বজনেরা ওই বাড়িতে গেলে বাম হাতে সূচের চিহ্ন হাতের শিরাগুলো কালশিটে হয়ে পড়া দেখেতে তাদের সন্দেহ হয়। এসময় তারা পুলিশে খবর দেন। খবর পেয়ে কোতয়ালি থানা ও ডিবি পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়।
পুলিশ সন্দেহ হওয়ায় শেফালীকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে পরকীয়া সম্পর্কের জের ধরে তিনি অ্যাসিড পুশ করে স্বামীকে হত্যা করেছেন বলে স্বীকার করেন। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঘর থেকে ভাঙা মোবাইল ফোন ও ব্যাটারির অংশ বিশেষ এবং মণিহার ফলপট্টির রাস্তা থেকে ফেলে দেওয়া হত্যায় ব্যবহৃত সিরিঞ্জ ও ঘুমের ওষুধের খালিপাতা জব্দ করা হয়।
জহিরকে হত্যার ঘটনায় নিহতের ভাই গাজী শাহনেওয়াজ দুই জনকে আসামি করে বুধবার কোতয়ালি থানায় মামলা করেছেন। মামলার আসামিরা হলেন নিহতের স্ত্রী শেফালী বেগম ও তার প্রেমিক শহরের শংকরপুর জমাদ্দারপাড়ার আব্দুল সরদারের ছেলে ভাঙাড়ি ব্যবসায়ী রবিউল সরদার।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের এসআই মফিজুল ইসলাম জানান, নিহত জহিরের ১ ছেলে ও ১ মেয়ে রয়েছে। মঙ্গলবার মেয়ে প্রাইভেট পড়তে এবং সিয়াম খেলা করতে ঘরের বাইরে যায়। এই সুযোগে ঘুমন্ত স্বামীর শরীরে সিরিঞ্জের মাধ্যমে অ্যাসিড পানি পুশ করেন শেফালী। অ্যাসিড পুশের কারণে জহির মারা যান এবং স্বামী স্ট্রোক করে মারা গেছেন বলে তিনি কান্নাকাটি করতে থাকেন। কিন্তু জহিরের ভাইয়েরা শেফালীর পরকীয়া সম্পর্কের কথা জানতেন। তাই খবর পেয়ে তারা ঘটনাস্থলে যান এবং জহিরের বাম হাতে সূচের দাগ দেখতে পেয়ে তাদের সন্দেহ হয়। পরে তারা পুলিশকে খবর দেন। এরপর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে শেফালী স্বামীকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। তার এই হত্যা পরিকল্পনার সাথে জড়িত প্রেমিক রবিউল সরদার।
তিনি জানান, ৩ বছর আগে মোবাইল ফোনে মিসড কলের মাধ্যমে রবিউলের সাথে পরিচয় হয় শেফালীর। এরপর তাদের মধ্যে প্রেমজ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এক পর্যায়ে স্বামীকে তালাক দিয়ে গত বছর রবিউলকে বিয়ে করেন শেফালী। রবিউলের সাথে ৭ দিন সংসার করার পর তাকে আবার তালাক দিয়ে ফের জহিরকে বিয়ে করেন শেফালী। কিন্তু তালাক দিলেও রবিউলের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন শেফালী।
ডিবি পুলিশের ওই কর্মকর্তা আরও জানান, আটক শেফালীকে গতকাল বিকেলে আদালতে সোপর্দ করা হলে তিনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান আহমেদ তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন। পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এদিকে র‌্যাব-৬ সিপিসি-৩ যশোর ক্যাম্পের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, হত্যা পরিকল্পনার সাথে জড়িত শেফালীর প্রেমিক রবিউলকে তারা আটক করেছে। বুধবার বিকেল ৩টার দিকে শহরের শংকরপুর থেকে তাকে আটক করা হয়। পরে তাকে কোতয়ালি থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

কোন জন স্বামী
শেফালীর?
স্টাফ রিপোর্টার॥ যশোরে আলোচিত স্ত্রী কর্তৃক স্বামী হত্যার ঘটনায় গতকাল রাতে নতুন তথ্য পান তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মফিজুল ইসলাম। স্বামী হত্যায় অভিযুক্ত শেফালীর দেয়া তথ্যে পরকীয়া প্রেমিক হিসেবে র‌্যাব যশোর শহরের শংকরপুর জমাদ্দার পাড়া থেকে রবিউল ইসলাম সরদারকে আটক করে পুলিশে হস্তান্ত করে। ওই রবিউলকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে পুলিশকে জানায়, সে-ই শেফালীর বর্তমান স্বামী। গত বছরের ২৭ এপ্রিল তারা বিয়ে করেন। এর আগে শেফালী জহিরকে তালাক দেন। ওই বিয়ের সাত দিন পর জহির লোকজন দিয়ে শেফালীকে তার কাছ থেকে জোর করে ধরে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তারা দুই ( রবিউল ও শেফালী) জন একাধিক বার বিভিন্ন ওষুধ দিয়ে জহিরকে হত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। সর্বশেষ ঘুমের ওষুধ খাইয়ে শরীরে অ্যাসিড পুশ করে তাকে হত্যা করতে সক্ষম হন তারা।
পুলিশ সূত্রে আরও জানা যায়, মোবাইল ফোনের ব্যাটারির অ্যাসিডের সাথে অন্য ধরনের অ্যাসিডের মিশ্রণও ছিল। ওই অন্য ধরনের অ্যাসিড রবিউল সরবরাহ করেন বলে স্বীকার করেছেন।