পাঞ্জাবি শার্ট-প্যান্ট ও টি-শার্টের দোকানে ভিড় শেষ সময়ে

0

 

আকরামুজ্জামান ॥ ঈদের বাকি আর মাত্র দুই-তিন দিন। তাই শেষ সময়ে এসে বেচাকেনায় চরম ব্যস্ত ক্রেতা ও বিক্রেতারা। রোজার শেষে এসে পোশাকের কেনাকাটায় পাঞ্জাবি, শার্ট ও টি -শার্টের বেচাকেনা বেড়েছে। দিনের বেলায় প্রচন্ড গরম থাকায় মার্কেটে ক্রেতাদের উপস্থিতি কম থাকলেও সন্ধ্যার পর ভিড় বাড়ছে। গভীর রাত পর্যন্ত ক্রেতা-বিক্রেতাদের দরদাম, হাঁকডাকে সরগরম হয়ে উঠছে যশোরের প্রতিটি বাজার ও বিপণীবিতান।
ব্যবসায়ীরা জানান, গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে যশোরাঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপ প্রবাহ। এর বড় প্রভাব পড়ে ঈদের বেচাকেনায়। তবে এরই মাঝে ঈদ উপলক্ষে সরকারি ছুটি শুরু হওয়ায় ক্রেতারা আবারও ঈদের কেনাকাটায় মার্কেটমুখি হচ্ছেন। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা। যা থাকবে চাঁদ রাত অবধি।
বুধবার (১৯ এপ্রিল) বিকেলে যশোর শহরের হাজী মুহাম্মদ মহসিন রোড, কাপুড়িয়াপট্টি, মুজিব সড়ক ও কালেক্টরেট মার্কেটসহ বিভিন্ন বিপণীবিতান, শপিংমলে ঘুরে দেখা গেছে ঈদের রমরমা বেচাকেনা শুরু হয়েছে। কেউ কিনছেন নিজের জন্যে, কেউবা পরিবারের সদস্য প্রিয়জনদের জন্যে। তবে শেষ সময়ে কেনকাটায় পাঞ্জাবি, টি-শার্ট, ফতোয়া ও প্যান্ট- শার্ট প্রাধান্য পাচ্ছে। এ বছর দাম বেড়েছে ছেলেদের শার্ট-প্যান্ট-পাঞ্জাবির। আর বাচ্চাদের মানসম্মত পোশাকের দাম আকাশছোঁয়া।
ক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রচন্ড গরমের সাথে সামঞ্জস্য রেখেই সবাই বেছে নিচ্ছেন অপেক্ষাকৃত উজ্জল রঙের পোশাক। ব্রান্ড ও কাপড়ের মানভেদে ছেলেদের পাঞ্জাবি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ৪ হাজার ৫শ টাকা পর্যন্ত।
যশোর মুজিব সড়ক এলাকার অভিজাত শপিং মলগুলোতে ঘুরে দেখা যায়, সেখানে প্রতিটি দোকানেই বেশি বিক্রি হচ্ছে পাঞ্জাবি, টি -শার্ট, ফতোয়া ও শার্ট-প্যান্ট। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী দোকানগুলোতে রাখা হয়েছে দেশি-বিদেশি না ডিজাইনের এসব পোশাক। কথা হয় লাল-সবুজ-রঙ ফ্যাশনের স্বত্বাাধিকারী রিয়াজ হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, বরাবরের মতো এবার ঈদেও ছেলেদের জন্যে নানা ডিজাইনের পাঞ্জাবি ও ফতোয়ার কালেকশন রাখা হয়েছে। এরমধ্যে গর্জিয়াস কাজ করা ইন্ডিয়ান সুলতান, এসকে, পার্টি ব্রান্ডের পাঞ্জাবির চাহিদা বেশি। এসব পাঞ্জাবি ১৪৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৩৫৫০ টাকা পর্যন্ত দরে বিক্রি হচ্ছে। এর বাইরে দেশি প্রিন্স আর্দি, এলবি ব্রান্ডের কাপড়ে তৈরি নানা ডিজাইনের পাঞ্জাবির চাহিদা বেড়েছে ক্রেতাদের কাছে বলে তিনি জানান।
পাশেই কথা হয় ইত্যাদি ফ্যাশনের আনোয়ার হোসেন বাবুর সাথে। তিনি বলেন, থ্রিপিস ও বাচ্চাদের পোশাকের চাহিদা কমে এখন পাঞ্জাবি, শার্ট-প্যান্টের কেনাকাটা বেড়েছে। এরসাথে হালকা-পাতলা কাপড়ের ফতোয়ার চাহিদাও বেশ রয়েছে। শার্টের মধ্যে আড়ং কটন প্রিন্টের শার্ট ক্রেতাদের পছন্দের মূল তালিকায় রয়েছে। এছাড়া ইন্ডিয়ান ম্যাগনেট, বিগঅ্যানথনি,জিনিয়াসসহ বিভিন্ন ব্রান্ডের শার্ট তরুণদের মূল আকর্ষণে রয়েছে। এসব শার্ট ১০০০ থেকে শুরু করে ২৫০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি।
একই এলাকায় অভিজাত শপিংমল ইজিতে গিয়ে দেখা যায় সেখানে পুরোটা তরুণ-তরুণীদের দখলে। তারা বেছে নিচ্ছেন তাদের পছন্দের পোশাকটি। কথা হয় ওই শপিংমলের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার আদনান হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, তীব্র গরমের কারণে ছেলেরা বেশি টি শার্ট, ফতোয়া ও জিন্সের প্যান্ট কিনছেন। গরমের সাথে সামঞ্জস্য রেখে তাদের প্রতিষ্ঠানও পোশাকের সরবরাহ বৃদ্ধি করেছে। বিভিন্ন রঙ ও স্টাইলের এসব শার্ট-প্যান্ট ও টি- শার্ট ১৫শ থেকে শুরু করে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
ইজিতে কথা হয় সাজেদুর রহমান নামে এক ক্রেতার সাথে। তিনি বলেন, এবছর ঈদে প্রতিটি পোশাকের দাম আকাশছোঁয়া। ইজি থেকে একটি শার্ট কিনেছি। শার্টের দাম নিয়েছে ২৭শ টাকা আর প্যান্ট নিয়েছে ৩২শ টাকা। তিনি বলেন, মান ভেদে এখানে অনেক কাপড় আছে যার দাম ধরা হয়েছে অতিরিক্ত।
পোশাকের দোকানের পাশাপাশি তুলনামূলক কম ভিড় দেখা গেছে মেয়েদের কসমেটিকস ও জুতার দোকানে। দোকানিরা বলেন, সাধারণত পোশাকের সাথে মিল রেখে তরুণীরা জুতা ও কসমেটিক্স কিনে থাকেন। তাই এখন পর্যন্ত ভিড় কম। রোজার শেষের দুই দিনে কসমেটিক্স ও জুতার দোকানে ভিড় বাড়বে বলে তারা জানান।
তবে শহরের গরীবের মার্কেট হিসেবে পরিচিত কালেক্টরেট মার্কেটে গতকাল বিকেলে বেশ ভিড় লক্ষ্য করা যায়। এখানে মাত্র ৫০০-৬০০ টাকায় মিলছে ছেলেদের জিন্স প্যান্ট। গ্যাবার্ডিন প্যান্ট বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৪৫০ টাকায়। ৫০০-৬০০ টাকা পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের শার্ট-প্যান্ট। দরদামে মিলে গেলে পছন্দের পোশাক কিনছেন ক্রেতারা।
কালেক্টরেট মার্কেটে কথা হয়, আজাদুল কবীর নামে একজন ক্রেতার সাথে। তিনি বলেন, এই মার্কেটেও প্রতিটি কাপড়ের দাম আকাশছোঁয়া। চায়না ব্রান্ডের শার্টেও দাম চাওয়া হচ্ছে ৪০০ টাকা। ভারতীয় শার্ট এবং থ্রি ডি ডিজিটাল প্রিন্ট শার্ট বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকায়। দাম বেশি হলেও শেষ সময়ে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন বলে তিনি জানান।
সাইফুল ইসলাম নামে একজন বিক্রেতা বলেন, কালেক্টরেট মার্কেটে বাচ্চাদের পাঞ্জাবি ও পায়জামা ৩০০-৫০০ টাকা, জিন্স প্যান্ট বয়সভেদে ১৫০-৪০০ টাকা, বাচ্চাদের ফ্রক ৩৫০-৮০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া লুঙ্গি ৩০০-৭০০ টাকা, পোলো টি-শার্ট বিক্রি হচ্ছে ২০০- ৪০০ টাকায়। তিনি বলেন, চাঁদ রাত অবধি এখানে বেচাকেনা চলবে।