ছাত্রলীগের রাজনীতি অনুপ্রবেশের পর থেকেই অশান্ত যবিপ্রবি, প্রথম খুন হয়েছিলেন শিক্ষার্থী রিয়াদ

0

মীর মঈন হোসেন মুসা ॥ ছাত্রলীগের রাজনীতি অনুপ্রবেশের পর থেকেই যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) অশান্তি বিরাজ করছে। হত্যা, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন সময় অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে সংহিংস ঘটনায় বারবার আলোচনায় এসেছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত এই ছাত্র সংগঠন। সর্বশেষ গত ২ এপ্রিল চাঁদার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র ইসমাইল হোসেনকে ৪ ঘন্টা একটি কক্ষে আটকিয়ে নির্মম নির্যাতন চালান ছাত্রলীগের দুই কর্মী। তাদের এই অপকর্মের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের অপরাধমূলক কর্মকা- ফের আলোচিত হচ্ছে সর্বমহলে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী যে জিম্মি তা আবারও পরিষ্কার হয়ে উঠেছে। আর অভিভাবক মহল তাদের সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে চরম উদ্বিগ্নের মধ্যে রয়েছেন।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিলো। কিন্তু ২০১৪ সালের ১৬ মে কেন্দ্রীয় কমিটি তৎকালীন ছাত্র সুব্রত বিশ্বাসকে সভাপতি ও শামীম হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি ঘোষণার মাধ্যমে ক্যাম্পাসে রাজনীতির অনুপ্রবেশ ঘটানো হয়। কর্তৃপক্ষের নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তকে তোয়াক্কা না করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি অনুপ্রবেশের পর থেকে নানা অশান্তি লেগেই আছে। প্রথম থেকেই আধিপত্য বিস্তারসহ নানা অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে মারামারিতে লিপ্ত হতে থাকেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের প্রথম বলি হন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন পরিবেশ ও বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র কাজী নাইমুল ইসলাম রিয়াদ। একই বছরের ১৩ জুলাই ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি ক্যাফেটরিয়ায় ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে। ওই ইফতার মাহফিলে ছাত্রলীগের পদবঞ্ছিতরা অনুপস্থিত ছিলেন। এ নিয়ে কমিটির নেতাদের সাথে বাকবিত-ার জের ধরে পদবঞ্ছিতদের কয়েকজনকে মারধরও করা হয়। ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে সৃষ্ট দ্বন্দ্বের জের ধরে পরদিন ১৪ জুলাই দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকের সামনে কাজী নাইমুল ইসলামকে কুপিয়ে ও ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের মামা রফিকুল ইসলাম রাজু জেলা ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বিপুল এবং বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সভাপতি সুব্রত বিশ্বাস ও সাধারণ সম্পাদক শামীম হোসেনসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে কোতয়ালি থানায় মামলা করেছিলেন। এক বছর পর ওই মামলার তদন্ত শেষে এজাহারভুক্ত ১১ জনকে অভিযুক্ত এবং আসামি আনোয়ার হোসেন বিপুলের অব্যভহতির আবেদন জানিয়ে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন সিআইডি পুলিশের তৎকালীন ইনস্পেক্টর মোমতাজুল হক। অভিযুক্তরা হলেন, সুব্রত বিশ্বাস, শামীম হোসেন, তানভীর ফয়সাল, আজিজুল ইসলাম, সজিবুর রহমান, রওশন ইকবাল শাহী, সালসাবিল আহমেদ জিসান, ইয়াসিন মোহাম্মদ কাজল, এস এম জাবেদ উদ্দিন, ডিকু ও ভুট্টো।
ওই ঘটনার ৩ বছর পর ২০১৭ সালের ৫ অক্টোবর রাতে যবিপ্রবিতে ছাত্রলীগের
তৎকালীন সভাপতি সুব্রত বিশ্বাস ও সাধারণ সম্পাদক শামীম গ্রুপের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শহীদ মসিয়ূর রহমান হলে হামলা, ভাঙচুর ও ব্যাপক লুটের ঘটনা ঘটে। এ সময় বেশুমার বোমার বিস্ফোরণে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। পরে ওই ঘটনায় শামীম হাসানসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে কোতয়ালি থানায় মামলা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. আহসান হাবীব। অপর আসামিরা হলেন-বিপ্লব কুমার দে, তানভীর ফয়সাল, আল মামুন সিমন, মাসুদুর রহমান রনি, তানভীর আহমেদ তানিন ও আশিক খন্দকার।
২০২২ সালের ১৬ অক্টোবর সন্ধ্যারাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মসিয়ূর রহমাান হলে ছাত্রলীগ নেতা তানভীর ফয়সাল ও সোহেল রানা গ্রুপের সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তানভীর ফয়সালের অনুসারীরা সোহেল রানার অনুসারীদের অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া করলে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের কয়েকজন আহত হন।
আধিপত্য বিস্তার ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে ছাত্রলীগের কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়কে শুধু অশান্ত করে রাখেননি, সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজিও শুরু করেছেন। সর্বশেষ গত ২ এপ্রিল ১০ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র ইসমাইল হোসেনকে ৪ ঘন্টা একটি কক্ষে আটকিয়ে নির্মম নির্যাতন চালানো হয়। ছাত্রলীগের কর্মী মোহাম্মদ শোয়েব আলী ও সালমান এম রহমান তাকে ধরে এনে এই নির্যাতন চালান। পরে নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীকে তার বন্ধুরা সেখান থেকে আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করেন। অভিযুক্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। এ ঘটনায় শহীদ মসিয়ূর রহমান হলের প্রভোস্ট মো. আশরাফুজ্জামান জাহিদ উল্লিখিত দুই জনকে আসামি করে কোতয়ালি থানায় মামলা করলেও পুলিশ এখনো পর্যন্ত কাউকে আটক করতে পারেনি।