ব্যয়বহুল ঈদ বাজারে প্রথম ধাক্কা ছিট কাপড় ও দর্জির দোকানে

0

আকরামুজ্জামান॥ ঈদকে সামনে রেখে রমজানের শুরুতেই দর্জির দোকানগুলোতে পোশাক বানানোর প্রতিযোগিতকা শুরু হয়। মূলত কাপড় কিনে পছন্দমাফিক পোশাক তৈরিতে নারীর আগ্রহই বেশি। তাই আগেভাগে পোশাক তৈরিতে রমজানের শুরুতেই ভিড় লাগে বাজারের ছিট কাপড় ও দর্জির দোকানে। তবে দাম নিয়ে বিপত্তি দেখা দিয়েছে ক্রেতাদের মধ্যে। মূল্য বৃদ্ধির সংক্রমণ থেকে রক্ষা পায়নি ছিট কাপড়ের দোকানগুলো। আবার দর বাড়িয়েছেন সেলাইয়ের লোকেরাও। ক্রেতারা বলছেন, অন্যান্য বছরের চেয়ে এবছর থান কাপড়ের গজ প্রতি প্রকার ও গুণগত মান ভেদে দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ২০০ টাকা। আর দাম বাড়ায় বেচাকেনা তুলনামূলক কম হচ্ছে বলেও ব্যবসায়ীরা জানান।
শনিবার যশোর বড়বাজারের কাপুড়িয়াপট্টি রোড ও এইচ এম এম রোড এলাকার ছিট কাপড়ের দোকানগুলোতে দেখা যায় ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। তবে ভিড় থাকলেও বেচাকেনা কম বললেন দোকানিরা। অনেকে কেনাকাটা করলেও দাম নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেন। ক্রেতাদের অভিযোগ অন্যান্য বারের চেয়ে এ বছর দেশি কাপড়ে ৪০ শতাংশ ও বিদেশি কাপড়ে ৬০ থেকে ৯০ শতাংশ দাম বেড়েছে। কোনো কোনো কাপড়ের ক্ষেত্রে তিনগুণ দাম বেড়েছে।
এইচএমএম রোডের ছিট বিতানের বিক্রয় প্রতিনিধি শরিফুল ইসলাম বলেন, রমজান উপলক্ষে প্রতিবছর যে বেচাকেনা থাকে সে তুলনায় এবার খুবই খারাপ অবস্থা। প্রতিটি কাপড়েই ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে। বিদেশি শার্ট-প্যান্টের পিসে গজ প্রতি ৫০ থেকে ১৫০ টাকা বেড়েছে। পায়জামা-পাঞ্জাবির কাপড়ের গজ প্রতি প্রকার ও মানভেদে বেড়েছে ৫০ থেকে ২০০ টাকা। মেয়েদের দেশি-বিদেশি সালোয়ার কামিজের কাপড়েও বেড়েছে ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। তিনি বলেন, পাইকারি বাজার থেকে বলা হচ্ছে গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় সুতা উৎপাদনে খরচ বেড়েছে। এর সাথে যোগ হচ্ছে পরিবহন খরচ।
এইচ এম এম রোডে লতিফ ক্লথ স্টোরের বিক্রয় প্রতিনিধি সাজিদুল হাসান জানান, রোজা শুরুর এক সপ্তাহ আগে থেকেই ছিট কাপড়ের বেচাকেনা শুরু হয়ে যায়। কিন্তু এ বছর ব্যতিক্রম। মানুষ বাজারে আসছে বটে। তবে দেখেশুনে দাম যাচাই-বাছাই করে চলে যাচ্ছে। এর একমাত্র কারণ হচ্ছে সব ধরনের পণ্যের দাম বৃদ্ধি। তিনি বলেন, অন্যান্য বছরের চেয়ে এবছর দেশি কাপড়ের দাম ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ আর বিদেশি কাপড় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে। বেশি দাম বেড়েছে পাঞ্জাবির কাপড়ের। কোরিয়ান মাইক্রো পাঞ্জাবির সুতি কাপড়ের দাম আগে গজপ্রতি ১৫০ টাকা বিক্রি হলেও এবার তা বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা। ১১০ টাকার টরে কাপড় বিক্রি হচ্ছে গজপ্রতি ১৬০ টাকা।
একই কথা বলেন এইচ এম এম রোডের মডার্ন ক্লথ স্টোরের ম্যানেজার হারান মজুমদার। তিনি বলেন, সব ধরনের ছিট কাপড়ের দাম বেড়েছে। তবে বিদেশি গর্জিয়াস কিছু আইটেম আছে সেসব কাপড়ের দাম গজপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এলসি সমস্যার কারণে এসব কাপড়ের দাম বেড়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
এদিকে কাপড়ের দামের পাশাপাশি দর্জির দোকানে কাপড় তৈরির মজুরিও বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। মডার্ন টেইলার্সের মালিক রুহুল আমীন বলেন, ঘরভাড়া, বিদ্যুৎ, শ্রম খরচের পাশাপাশি আনুষঙ্গিক খরচ বেড়ে যাওয়ায় আমাদের মজুরিও বাড়াতে বাধ্য হতে হয়েছে। আগে প্যান্টের মজুরি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা নেওয়া হলেও এ বছর ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। সালোয়ার কামিজের মজুরি আগে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা নেওয়া হলেও এখন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। আর ৩০০ টাকার পাঞ্জাবির মজুরি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, এরপরও কারিগররা কাজ করতে চাচ্ছে না। তারা আরও বেতন বাড়াতে বলছে।
জামে মসজিদ লেনের সানমুন টেইলার্সের মাহবুব হোসেন বলেন, কাপড়ের ও দর্জির দোকানের খরচ বেশি হওয়ায় অনেক ক্রেতাও ঈদের পোশাক তৈরিতে কাটছাঁট করছে। যেকারণে অন্যান্য বছরে যে হারে অর্ডার আসতো এবছর এখনো পর্যন্ত তেমন অর্ডার পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, অন্যান্য বছরে আমরা ১০ রমজানের পরে অর্ডার নিতাম না। এবছর অনেকটা ব্যতিক্রম মনে হচ্ছে।
দাম বৃদ্ধির কারণে ক্রেতাদের মধ্যে অসন্তষ্টি দেখা যায়। তাদের দাবি ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো তাদের পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। বড় বাজারে কথা হয় শারমীন আকতার নামে এক ক্রেতার সাথে। তিনি বলেন, নতুন জামাইয়ের জন্য শার্ট-প্যান্টের কাপড় কিনতে বাজারে এসেছিলাম। কিন্তু যে দাম তাতে রেডিমেড (তৈরি পোশাক) পোশাক কিনবো কিনা ভাবছি। তিনি বলেন, প্রতিটা জিনিসই মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। মানুষ এবছর কীভাবে ঈদ উদযাপন করবে তাই চিন্তা করছি।
কথা হয় আমেনা বেগম নামে আরেক ক্রেতার সাথে। তিনি বলেন, সাধারণত দেশি ভয়েল কাপড় যেগুলো আমরা সচরাচর ব্যবহার করি তাতেও গজপ্রতি ৩০ থেকে ৪০ টাকা দাম বেড়েছে। গরিবের কাপড় বলে পরিচিত টেট্রন-পলেস্টার কাপড়েও গজপ্রতি ৫০ টাকা বেড়েছে। সাথে দর্জির খরচও বেড়েছে। এ অবস্থায় কীভাবে ছেলেমেয়েদের ঈদের পোশাক বানিয়ে দেবো তাই চিন্তা করছি। তিনি বলেন, জিনিসপত্রের যে দাম তাতে বাচ্চাদের কিছু কিনে দিতে পারবো বলে মনে হচ্ছে না।