ইবিতে ছাত্রী নির্যাতন তদন্ত প্রতিবেদন জমা, ছাত্রলীগের ডাকে ফুলপরীর না!

0

ইমানুল সোহান, ইবি॥ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ছাত্রলীগ নেত্রীর দ্বারা প্রথম বর্ষের ছাত্রী ফুলপরীকে রাতভর নির্যাতনের ঘটনায় প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি।  রোববার সকাল ১০টার দিকে রেজিস্ট্রার বরাবর এই প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন তারা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান। এদিকে তদন্তের স্বার্থে ফুলপরীকে ক্যাম্পাসে ডেকেছিলো বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ গঠিত তদন্ত কমিটি। এতে পুরো রাস্তায় নিরাপত্তা চেয়েছিলো ভুক্তভোগী ছাত্রী। কিন্তু নিরাপত্তা না দেয়ায় ক্যাম্পাসে আসতে অনীহা প্রকাশ করে ফুলপরী। ভুক্তভোগীর সাথে শনিবার কথা বলেছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন। ভুক্তভোগী ছাত্রী নিজেই বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে ফুলপরী বলেন, ‘আমাকে বাড়ি থেকে ক্যাম্পাস পর্যন্ত নিরাপত্তা দিতে পারলে যাব। কারণ রাস্তায় বিপদ হতে পারে। তাদের যদি প্রয়োজন হয়, আমার বাড়ি এসে বক্তব্য নিতে পারে।’ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের সাথে কথা বলার বিষয়ে তিনি বলেন‘ কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম ভাই আমাকে কল দিয়ে বলেছেন, তোমার সহসিকতার জন্য অভিনন্দন। তোমার ন্যায়বিচার হবে। তখন আমি বলেছি, ভাই আমার কারো প্রতি কোন রাগ নেই। আমার সঙ্গে যা হয়েছে আমিও ন্যায় বিচার চাই। ভাই আমার সঙ্গে অনেক ভালভাবে কথা বলেছেন।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক মুন্সী কামরুল হাসান অনিক বলেন, ‘যেহেতু সে আসবে না, তাই আমরা ফোনে তার সঙ্গে কথা বলে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করব। আজকে আমাদের তদন্ত কার্যক্রমের শেষ দিন। আজই প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।’ পরে তারা ফোনে ওই ছাত্রীর বক্তব্য নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

গত ১২ ফেব্রুয়ারি ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ফুলপরী খাতুনকে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের দোয়েল-২ গণরুমে শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, ছাত্রলীগ কর্মী তাবাসসুম ইসলাম, মোয়াবিয়া জাহান, ইসরাত জাহান মিমি ও হালিমা খাতুন উর্মীসহ কয়েকজন রাতভর নির্যাতন করেন। এসময় ফুলপরীকে মারধর, পায়ে পিন ফুটানো, বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণসহ বিভিন্ন নির্যাতন করা হয়। এই ঘটনায় ১৫ ফেব্রুয়ারি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ওই কমিটিতে আইন বিভাগের অধ্যাপক রেবা মন্ডলকে আহ্বায়ক, প্রভোস্ট কাউন্সিলের সভাপতি অধ্যাপক দেবাশীষ শর্মা, খালেদা জিয়া হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ইয়াসমিন আরা সাথী, সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক মুর্শিদ আলমকে সদস্য করা হয়। এছাড়া উপ-রেজিস্ট্রার আলীবদ্দিন খানকে সদস্য সচিব করা হয়। কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। পরে ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেন তারা। আর রোববার সকাল ১০টার দিকে রেজিস্ট্রার বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। এ ঘটনায় হল কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আগামীকাল (সোমবার) সকালের মধ্যে জমা দেয়া হবে বলে জানিয়েছে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট।

তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে রেজিস্ট্রার বলেন, ‘উচ্চ আদালতের নির্দেশে উপাচার্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। তারা প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। এখন আমরা আজকে এটি হাইকোর্টে পাঠাব। কালকে হয়ত সেখানে সাবমিট হবে। এরপর হাইকোর্ট যে নির্দেশনা বা রায় দেবে সে অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গ্রহণ করা হবে।’

এ বিষয়ে কমিটির সদস্য অধ্যাপক দেবাশীষ শর্মা বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ আমাদের একটি দায়িত্ব দিয়েছিলেন আমরা সেটি পালন করেছি। ভিসির নিকট প্রতিবেদনটি পৌঁছানোর জন্য রেজিস্ট্রার বরাবর দিয়েছি। এখন পরবর্তী করণীয় তারা ঠিক করবেন।’ প্রতিবেদনে ঘটনার সত্যতা ও কত পৃষ্টার প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের এক ছাত্রীকে ছাত্রলীগ নেত্রী অন্তরা ও তার সহযোগীরা রাতভর শারীরিক নির্যাতন করে। এতে ১৩ ফেব্রুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে প্রক্টর, হলের প্রভোস্ট ও ছাত্র উপদেষ্টা বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী। তার প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত হয়েছে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি।