স্ত্রী ও দুই কন্যাকে হত্যার কথা স্বীকার মাদকাসক্ত জহিরুলের

0

স্টাফ রিপোর্টার, অভয়নগর(যশোর) ॥ অভয়নগরে দুই শিশু কন্যাসহ স্ত্রীকে হত্যার ঘটনায় নিহত বিথির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান অভয়নগর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় একমাত্র আসামি করা হয়েছে আটক জহিরুল ইসলাম ওরফে বাবুকে। মামলার এজাহারে বাদী শেখ মুজিবুর রহমান উল্লেখ করেছেন, শ্বশুরের কাছে টাকা চেয়ে না পাওয়ায় স্ত্রী ও দুই মেয়েকে শ্বাসরোধে হত্যা করে জহুরুল ইসলাম বিশ্বাস ওরফে বাবু (৩৩)। শুক্রবার মধ্যরাতে তিনি এ হত্যা মামলা দায়ের করেন।
শনিবার সকালে নিহত সাবিনা ইয়াসমিন বীথির পিতা শেখ মুজিবর রহমান সাংবাদিকদের এ কথা জানান। মামলার বাদী শেখ মুজিবুর রহমান জানান, পারিবারিকভাবে ২০১১ সালে আমার মেয়ে সাবিনা ইয়াসমিন বীথির সঙ্গে যশোর সদর উপজেলার বসুন্দিয়া ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামের মশিউর বিশ্বাসের ছেলে জহুরুল ইসলাম বিশ্বাস ওরফে বাবুর বিয়ে হয়। এরপর তাদের সংসারে দুটি কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করে। কিন্তু বিয়ের পর থেকে জহুরুল আমার নিকট বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে সে আমার মেয়ে ও নাতিদের উপর শারীরিক নির্যাতন করত। মেয়ে ও দুই নাতির সুখের কথা চিন্তা করে গত ২০২১ সালের ২২ জুন এক লাখ ৬০ হাজার টাকা প্রদান করি। এরপর আরো টাকা চাইলে সাবিনা তার দুই মেয়ে সুমাইয়া আক্তার (৯) ও সাফিয়া আক্তারকে (২) সঙ্গে নিয়ে আমার বাড়িতে চলে আসে। পরবর্তীতে গত ১৫ জুলাই শুক্রবার সকালে জামাই জহুরুল আমার বাড়িতে আসে। এবং বিভিন্ন কথা বলে আমার মেয়ে ও দুই নাতিকে সঙ্গে নিয়ে এদিন আনুমানিক সাড়ে ১১ টার সময় নিজ বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করে। পথিমধ্যে অভয়নগরের প্রেমবাগ ইউনিয়নের চাঁপাতলা গ্রামে নূর ইসলামের কলাগাছ বাগানের মধ্যে নিয়ে স্ত্রী ও দুই মেয়ের গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে পালিয়ে যায় সে। এ ব্যাপারে শুক্রবার মধ্যরাতে আমি বাদী হয়ে জামাই জহুরুলের বিরুদ্ধে অভয়নগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করি। আমার মেয়ে ও দুই নাতির হত্যাকারী জহুরুলের ফাঁসি দাবি করছি। শনিবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে ঘাতক জহিরুল ইসলামকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এরআগে আদালত তার ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী রেকর্ড করে। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে ঘাতক জহিরুল নিজেই এ নির্মম হত্যাকা-ের বর্ণনা দিয়ে জানান, শ্বশুর ও স্ত্রীর উপর ক্ষুব্ধ হয়েই তিনি এ হত্যাকা- ঘটিয়েছেন। ১৬৪ ধারায় দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীর বরাত দিয়ে এ তথ্য জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই উত্তম কুমার।
এদিকে শনিবার বিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে নিহত দুই শিশুসহ বিথির লাশ তার পিত্রালয়ে পৌঁছালে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। সেখানে জানাজা নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাদের দাফন সম্পন্ন হয়।
ঘাতক জহিরুলের এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘ কয়েক বছর জহিরুল মাদকাসক্ত ছিলেন। এবং এলাকায় বেপরোয়া চলাফেরা করতো। ইতিপূর্বে তিনি ওই এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য আমিনুর রহমান ও পল্লী চিকিৎসক রফিকুল ইসলামকে মারপিট করে আহত করেন। এছাড়া প্রায়ই স্ত্রীর উপর নির্যাতন চালাতেন। এসব ঘটনায় অতিষ্ট হয়ে জহিরুলের পিতা মশিয়ার রহমান (অবসরপ্রাপ্ত জেল পুলিশ সদস্য) তাকে বাড়ি থেকে বিতাড়িত করেন। বসুন্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আতিয়ার রহমান খান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এ ব্যাপারে জহিরুলের পিতা মশিয়ার রহমানও একই কথা স্বীকার করে বলেন, গত ঈদুল ফিতরের পর থেকে জহিরুলের সাথে কোন যোগাযোগ ছিলোনা। শুনেছি বাগেরহাটের রামপালে কাজ করতো আর ছুটি পেলে শ্বশুর বাড়িতে আসতো।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অভয়নগর থানার এসআই উত্তম কুমার ম-ল জানান, আটক জহুরুলকে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণের পর কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তিনি স্ত্রী ও দুই মেয়েকে হত্যা করেছেন বলে স্বীকার করেছেন।
অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম শামীম হাসান জানান, শুক্রবার মধ্যরাতে নিহত সাবিনা ইয়াসমিন বীথির পিতা জহুরুল ইসলাম বিশ্বাস ওরফে বাবুর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
শুক্রবার দুপুরে অভয়নগর উপজেলার প্রেমবাগ ইউনিয়নের চাঁপাতলা গ্রামে নূর ইসলামের কলাগাছ বাগানের মধ্যে স্ত্রী ও দুই মেয়েকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন জহুরুল ইসলাম বিশ্বাস ওরফে বাবু। এদিন বিকেলে তিনি পুলিশের নিকট হত্যাকা- ঘটানোর কথা স্বীকার করে আত্মসমর্পণ করেন। জহুরুল ইসলাম বিশ্বাস ওরফে বাবু পেশায় রাজমিস্ত্রি ছিলেন।