বাঘারপাড়ায় সড়কের গাছ কাটায় অনিয়মের অভিযোগ

0

স্টাফ রিপোর্টার, বাঘারপাড়া॥ যশোরের বাঘারপড়া পৌরসভায় সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির নামে দুই লক্ষাধিক টাকার গাছ কেটে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। একটি মৃত গাছ কাটার কথা বলে ছোট বড় মিলে কমপক্ষে পাঁচটি জীবন্ত গাছ কেটে বিক্রি করেছেন জেলা পরিষদ সদস্য ও পৌরসভার জনপ্রতিনিধিরা। গাছ কাটার সময় সার্বক্ষণিক তদারকির দায়িত্বে ছিলেন কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম। অভিযোগ উঠেছে, কোনো প্রকার নিয়ম না মেনে উপজেলা সদরের চৌরাস্তায় জেলা পরিষদের আওতাধীন এ গাছগুলো বিক্রি করে পুরোটাই ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছে এ সিন্ডিকেট।
সদরের চৌরাস্তায় আওয়ামী লীগ অফিস থেকে বাসস্ট্যান্ড (উত্তম কুন্ডুর মিষ্টির দোকান) পর্যন্ত একটি লাটিম বা গুরোল, একটি জাম, একটি বকুল গাছ ও একটি মৃত রেইন্ট্রি ছিলো। প্রখর রৌদ্রের তাপ থেকে বাঁচতে শ্রমিকসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পথচারীরা আশ্রয় নেয় এই গাছের ছায়ায়। বহু দেশি প্রজাতির পাখিরা অবাসস্থল গড়তো এসব গাছে। এছাড়াও এসব গাছের ছায়াতলে বসে জীবনজীবিকা নির্বাহ করতো পাদুকা কারিগর, ভ্যানশ্রমিক ও মোটরসাইকেল চালকদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানিয়েছেন, পৌরসভার ৭ নম্বর কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম এসব গাছ ক্রয় করেছেন। কেটে নেয়া গাছগুলো কোথায় আছে তা কেউ জানেন না।
পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ও উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জুলফিকার আলী জুলাই বলেন,কোনো উন্নয়ন টুন্নয়ন নয়, শুধুমাত্র ভাগবাটোয়ারার স্বার্থে এ জীবিত গাছগুলো কেটে নেয়া হয়েছে’। এগুলোর বিচার হওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার এক কাঠব্যবসায়ী জানান, জীবিত কদম গাছের আনুমানিক বাজার মূল্য ১৫ হাজার, লাটিম গাছের ৪ হাজার, জাম গাছের ২৫ হাজার ও মৃত রেইন্ট্রির ১লাখ ৫০হাজার টাকা।
আরও জানা গেছে, ৪০ বছরের পুরোনো একটি রেইনট্রি চৌরাস্থায় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে ছিল। সম্প্রতি ধীর ধীরে গাছটি শুকিয়ে মারা যায়। মরা গাছটি কাটার কোনো ব্যবস্থা না করায় তা ঝুঁকিপূর্ণ ও মরণ ফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। গাছটি অপসারণে উপজেলা প্রশাসন জেলা পরিষদকে কয়েক দফা চিঠি দিয়েও কাজ হচ্ছিলো না। এরই মধ্যে গত শনিবার ও রোববারসহ বিভিন্ন সময়ে পৌরসভার কয়েক জন জনপ্রতিনিধি মিলে গাছটি কেটে নিয়ে যায়। পাশাপাশি সবুজ তরতাজা আছে এমন গাছও কাটা হয়। এসময় জীবিত গাছগুলো দ্রুত কেটে নেয়া ছাড়াও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে গাছের অস্তিত্বই মুছে ফেলা হয়েছে। পাশাপশি মৃতগাছটি তিনদিন ধরে কাটা হয়েছে। জীবিত গাছগুলো কাটতে ছুটির দিন শুক্রবারকেই বেছে নিয়েছেন এ সিন্ডিকেট।
বন বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের মতে, নিয়ম অনুযায়ী উন্নয়নমূলক কাজের জন্য প্রয়োজনে কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানের ঝুঁকিপূর্ণ, পুরোনো কাছ কেটে ফেলার প্রয়োজন হলে জেলা প্রশাসকের সমন্বয়ে কমিটি হবে। তাদের অনুমতির পর বন বিভাগকে মূল্য নির্ধারণের চিঠি পাঠানো হবে। বন বিভাগ সরেজমিনে যাচাই-বাছাই করে গাছগুলোর মার্কিং ও মূল্য নির্ধারণ করে দেবে। পরে টেন্ডার ও নিলামসহ আনুসঙ্গিক নীতিমালা মেনে গাছগুলো কাঠতে হবে। কিন্তু জেলা পরিষদের এই গাছগুলো কাটতে কোনো নিয়ম মানা হয়নি।
উপজেলা বন সংরক্ষণ কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানান, সবুজ গাছ কাটার সুযোগ নেই। গত বছরের সেপ্টম্বর মাসে একটি মাত্র রেইন্ট্রি শুকিয়ে মারা যাওয়া গাছের মূল্য নির্ধারন করা হয়েছিল ।
কাঠ ব্যবসায়ী ও ৭ নম্বর পৌর কাউন্সিলর শহিদুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি গাছগুলো কিনিনি, বাজারে আস এবং দেখা করো। তিনি আরও বলেন, গাছের বিষয়ে পৌরসভার মেয়র ও জেলা পরিষদ সদস্য সাইফুজ্জামান চৌধুরী ভোলা’র কাছে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
জেলা পরিষদ সদস্য সাইফুজ্জামান চৌধুরী ভোলা জানান, বিষয়টি জেলা পরিষদ জানে। কোন সমস্যা নেই, উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করার জন্য এসব গাছ বিক্রি করা হয়েছে। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে জানিয়ে এসব গাছ বিক্রি করা হয়েছে।
জেলা পরিষদের টেন্ডার কমিটির সদস্য ও প্রকৌশলী অহেদুজ্জামান জানান, শুধুমাত্র মৃত রেইন্ট্রি কাটার কথা ছিলো। বাঘারপড়া পৌরসভার মেয়র সাহেবের দায়িত্বে কাটা গাছগুলো উপজেলা ডাকবাংলো চত্বরে বা পৌর চত্বরে স্তুপ করে রাখবেন। কোনো জীবিত গাছ কাটার কথা নয়। এমনকি এখানে কোনো টেন্ডারও ডাকা হয়নি।