সার কীটনাশক বিদ্যুৎ ও ডিজেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাব বোরো আবাদে

0

 

আকরামুজ্জামান ॥ চলতি মৌসুমে যশোর জেলায় ১ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। ইতিমধ্যে জেলার বিস্তীর্ণ মাঠে বোরো ধান লাগানো শুরু করেছেন চাষি। আবার অনেকেই বীজতলা পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে সার, ডিজেল, শ্রম খরচের পাশাপাশি বিদ্যুতের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে শতভাগ সেচ নির্ভর এই বোরো আবাদ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা।
তাদের দাবি অন্যান্য বছরের চেয়ে চলতি মৌসুমে বোরো আবাদে ব্যয় বেড়েছে প্রায় দ্বিগুন। এ পরিস্থিতিতে আবাদ ঘরে তুলে কতটা উৎপাদন খরচ করতে হবে সেই চিন্তায় তাদের মাথায় হাত উঠেছে।
যশোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে জেলার ১ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর জমির বোরো আবাদের টার্গেট নিয়ে কৃষকরা প্রস্তুতি নিলেও ইতিমধ্যে ৩৫ হাজার হেক্টর জমির ধানের চারা রোপণ হয়েছে। যা মূল লক্ষ্যমাত্রার ২২ শতাংশ বলে কৃষি বিভাগ জানায়। এসব ধান আবাদের মধ্য হাইব্রিড জাতের রয়েছে ২৭ হাজার হেক্টর ও উফসী জাতের ১ লাখ ৩৩ হাজার হেক্টর। এসব জমির জন্য কৃষক ইতিমধ্যে ৮ হাজার ৫শ ১৩ হেক্টর জমিতে বীজতলাও প্রস্তুত করেছে। এসব বীজতলা প্রস্তুত করতে গত বছরের চেয়ে প্রায় দেড়গুন খরচ বেড়েছে বলেও স্থানীয় চাষিরা জানান।
অপর এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, জেলায় মোট ৮২ হাজার ১শ ৮১ টি সেচযস্ত্র ব্যবহার হচ্ছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ চালিত গভীর নলকুপ রয়েছে ১ হাজার ৪শ ৫৪ টি, ডিজেল চালিত ১৬০ টি, বিদ্যুৎ চালিত অগভীর নলকুপ ১১ হাজার ২শ ৭২ টি ডিজেল চালিত অগভীর নলকুপ রয়েছে ৬৮ হাজার ৪শ ২৬ টি। এলএলপি (স্যালো ইঞ্জিন ও ছোট মোটর চালিত) রয়েছে বিদ্যুৎ চালিত ১৫০ টি ডিজেল চালিত ৭০৫ টি এবং সোলার সেচ পাম্প রয়েছে ১৪ টি।
কৃষক বলছেন, অন্যান্য বছরে সেচ খরচে যে পরিমাণ টাকা লাগতো এখন তার চেয়ে প্রায় দ্বিগুন টাকা খরচ হচ্ছে। দাম বৃদ্ধির পর ১০৯ টাকায় ডিজেল বিক্রি হওয়ার কারণে ডিজেল চালিত পাম্পে সেচ খরচ বেড়েছে বিঘায় ৩ থেকে ৪ শ’ টাকা। এরপরে গত নভেম্বর মাসে বিদ্যুতের দাম ১৯. ৯২ শতাংশ বাড়ানোর পর হঠাৎ করে গ্রাহক পর্যায়ে আবার ৫ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। এতে বিদ্যুৎ ও ডিজেল চালিত উভয় ধরনের সেচ খরচ বেড়ে গেছে।
সদর উপজেলার বিল হরিণার মাঠে কথা হয় ভাতুড়িয়া গ্রামের কৃষক আমিনুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, এ বছর বোরো আবাদের খরচ দিতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে তাদের। আগে ১২শ থেকে ১৩শ টাকায় বিঘা প্রতি সেচ খরচ দিলেও এখন দিতে হচ্ছে ১৬শ থেকে ১৭শ টাকা। এর বাইরে রোপণ খরচ হচ্ছে বিঘা প্রতি ২২শ টাকা। সার কীটনাশক শ্রম খরচ মিটিয়ে শেষ পর্যায়ে ক্ষেতের ফসল ঘরে তুলতে বিঘা প্রতি ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে বলে তিনি জানান।
একই মাঠে কথা হয় শফিনূর রহমানের নামে আরেক জন চাষির সাথে। তিনি বলেন, এবছর ৫ বিঘা জমিতে বোরো আবাদের প্রস্তুতি নিয়েছি। তবে খরচ মেটাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছি। বিশেষ করে শ্রমিকের মূল্য ও সেচ খরচ এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে ধান আবাদের প্রতি একেবারেই আগ্রহ হারিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ঠাকুরগাঁও থেকে জোন এনে ধান আবাদে কিছু সাশ্রয়ের চেষ্টা করছি। তারপরও তাদের তিন বেলা খাবার দিয়ে বিঘা প্রতি ১৪শ টাকা করে দিতে হচ্ছে। বাজারে দ্রব্যমূল্যের ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেও তিন বেলা খাবার যোগান দিতে গিয়ে বড় ধরনের সংকটে পড়তে হচ্ছে। সেই হিসেবে সামনে কিভাবে বোরো আবাদ ঘরে তুলতে পারবো সে চিন্তায় ঘুম হারাম হয়ে গেছে বলে তিনি জাানান।
তবে এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মঞ্জুরুল হক বলেন, ধান আবাদ এখন লাভজনক পর্যায়ে রয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে কৃষক বাজারে ধানের দাম কাঙ্খিত পর্যায়ে পাচ্ছেন। যে কারনে উৎপাদন খরচের সাথে কৃষকের উৎপাদন ব্যয়ও সমন্বয় হচ্ছে বলে তারা ধান চাষের প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন।
তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে যশোরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে বোরো আবাদ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আমন আবাদের মতো বোরো আবাদেও রেকর্ড পরিমান ফলন হবে বলে তিনি আশা করেন।