৫ লাখ টাকা নিয়ে চাকরি না দিয়ে খুন!

0

 

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চাকরির জন্য দেয়া ৫ লাখ টাকা ফেরত চাওয়ায় ২৫ হাজার টাকায় খুনি ভাড়া করে ডিপ্লোমা প্রকৌশলী ইফরান ফারাজীকে খুন করিয়েছেন আব্দুল কাদের নামে এক ব্যক্তি। হত্যাকাণ্ডে জড়িত তাওহিদ (২০) নামে এক যুবককে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য জানতে পেরেছে । অভিযুক্ত আব্দুল কাদের বাড়ি যশোর শহরের চাঁচড়া কয়লাপট্টিতে।
গত রবিবার রাতে যশোর উপশহর এলাকা থেকে তাওহিদকে আটক করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে চাঁচড়া রায়পাড়া কয়লাপট্টি এলাকা থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বার্মিজ চাকু উদ্ধার করা হয়েছে। আটক তাওহিদ শহরের বেজপাড়া কবরস্থান এলাকার চাটনিওয়ালা নামে এক ব্যক্তির বাড়ির ভাড়াটিয়া শহিদের ছেলে।  সোমবার তাকে আদালতে সোপর্দ করা হলে সে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক পলাশ কুমার দালাল তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন।
র‌্যাব-৬ সিপিসি-৩ যশোর ক্যাম্প সূত্র জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাদের একটি দল গত রবিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে উপশহর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ইরফান ফারাজী হত্যাকাণ্ডে জড়িত তাওহিদকে আটক করে। আটকের পর তাকে কোতয়ালি থানায় হস্তান্তর করা হয়। ডিবি পুলিশের এসআই মফিজুল ইসলাম জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক তাওহিদ নিজেই ইরফান ফারাজীর বুকে চাকু ঢুকিয়ে হত্যা করে বলে স্বীকার করেছে। তাওহিদের ভাষ্য, আব্দুল কাদের নামে এক ব্যক্তির কাছে ২০১৯ সালে সরকারি চাকরির জন্য ৫ লাখ টাকা দিয়েছিলেন ইরফান ফারাজী। কিন্তু ওই ব্যক্তি তার চাকরি পাইয়ে দিতে পারেননি। চাকরির জন্য দেয়া টাকাও ফেরত দেননি। বিভিন্ন সময় ইরফান ফারাজী ওই ব্যক্তির কাছে টাকা ফেরত চেয়ে তাগাদা দিয়ে আসছিলেন। এ জন্য ইরফান ফারাজীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন আব্দুল কাদের। হত্যার জন্য ঘটনার ৫/৬ দিন আগে আব্দুল কাদের চাঁচড়া রায়পাড়ার মৃত লিয়াকতের ছেলে পাখির সাথে ২৫ হাজার টাকায় চুক্তি করেন। এরপর ঘটনার দিন অর্থাৎ গত ২২ ডিসেম্বর বিকেল ৪টার দিকে পাখি, তাওহিদ, পালবাড়ি এলাকার শিশির ও চাঁচড়া রায়পাড়ার রানার ছেলে রাহুল খড়কি ধোপাপাড়ায় ইরফান ফারাজীর মুদি দোকানের সামনে যায়। তখন ইরফান ফারাজী দোকানের ভেতরে বসেছিলেন। দোকানের সামনে গিয়ে তাওহিদ প্রথমে তার কাছে এক প্যাকেট চিপস চায়। ঝুলিয়ে রাখার কারণে ইরফান ফারাজী তাকে প্যাকেট ছিঁড়ে নিতে বললে সে অস্বীকার করে। তখন ইরফান ফারাজী বসা থেকে দাঁড়িয়ে সামনে ঝুকে প্যাকেট ছিঁড়তে গেলে ওই সুযোগে তার বুকে চাকু ঢুকিয়ে দেয় তাওহিদ। পরে তারা সেখান থেকে দৌড়ে কারবালা কবরস্থানের ভেতর দিয়ে পালিয়ে যায়। পিছু পিছু এক ব্যক্তি তাদের ধাওয়া করলেও ধরতে পারেনি।  ডিবি পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, ২৫ হাজার টাকার মধ্যে তাওহিদ সাড়ে ৩ হাজার টাকা ভাগ পেয়েছিলো বলে দাবি করেছে। হত্যার পর সে পালিয়ে খুলনায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়েছিলো। পরে সেখান থেকে যশোর উপশহর এলাকায় আসে। এ সময় র‌্যাব তাকে আটক করে। তিনি বলেন, তাওহিদকে সাথে নিয়ে মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে রেলস্টেশনের পশ্চিমে চাঁচড়া রায়পাড়া কয়লাপট্টি সংলগ্ন ছোট একটি পুকুরের পাড়ের ঝোঁপ থেকে তার দেখানো মতে হত্যায় ব্যবহৃত চাকুটি উদ্ধার করা হয়। এছাড়া আব্দুল কাদেরের সাথে ইরফান ফারাজীর চাকরির একটি চুক্তিনামা উদ্ধার করা হয়েছে।
এছাড়া পুলিশ আব্দুল কাদেরের চাঁচড়া রায়পাড়া কয়লাপট্টির বাড়িতে অভিযান চালায়। এসময় তাকে পাওয়া যায়নি। তবে ইরফানকে চাকরি দেয়ার নামে ৫ লাখ টাকা নেয়ার চুক্তিনামা উদ্ধার করা হয়।
স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, হত্যার পরিকল্পনাকারী ও অর্থদাতা আব্দুল কাদের আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত।
উল্লেখ্য, গত ২২ ডিসেম্বর খড়কি ধোপাপাড়ায় নিজ দোকানের ভেতর সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে খুন হন ডিপ্লোমা প্রকৌশলী ইরফান ফারাজী। তিনি একই এলাকার রফিকুল ইসলাম ফারাজীর ছেলে। হত্যার ঘটনায় গত ২৪ ডিসেম্বর নিহতের ভাই ইমরান ফারাজী কোতয়ালি থানায় একটি মামলা করেন।