বাঘারপাড়ার বৃদ্ধ নকিম হত্যাকাণ্ডে সেই কবিরাজসহ দুইজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার পশ্চিম পাইকপাড়া গ্রামের আলোচিত বৃদ্ধ নকিম উদ্দিন হত্যা মামলায় বিকৃতমনা কবিরাজ আব্দুল বারেকসহ দুইজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে ডিবি পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের ইনসপেক্টর মো. শহিদুল ইসলাম আদালতে এই চার্জশিট দাখিল করেন।
চার্জশিটে অভিযুক্ত কবিরাজ আব্দুল বারেক চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার লোকনাথপুর গ্রামের মৃত মোজাম্মেল হকের ছেলে। অপর অভিযুক্তের নাম লিটন মালিথা। তিনি চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার মোহাম্মদ জামা গ্রামের মৃত হানিফ আলী মালিথা ছেলে।
মামলা ও ডিবি পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বাঘারপাড়া উপজেলার ধুমখালী গ্রামের বাসিন্দা নকিম উদ্দিন পরিবারের কাউকে না জানিয়ে গত ২৬ মে কৃষাণের কাজ করার জন্যে ছাতিয়ানতলা বাজারে যান। এ সময় তাকেসহ ৩ জনকে কাজ করানো জন্যে নিজ বাড়িতে নিয়ে যান পশ্চিম পাইকপাড়া গ্রামের বাসিন্দা বেনজির আহমেদ। সেখানে ২ দিন কাজ করার পর একজন সেখান থেকে চলে যান। এরপর ৩০ মে সকাল ৬টার দিকে বেনজির আহমেদ একটি ঘরে থাকা কৃষানদের ডাকতে যান। ডাকাডাকি করে কারো কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে তিনি দরজা খুলে ঘরের ভেতরে যান। এ সময় সেখানে নকিম উদ্দিনের মৃতদেহ খাটের ওপর পড়ে থাকতে দেখেন। কিন্তু অপর কৃষাণকে কোথাও খুঁজে পাননি। এ খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহতের লাশ উদ্ধার করে। সুরতহাল তৈরি করতে গিয়ে পুলিশ দেখতে পায় নিহত বৃদ্ধের চোখের মনি, পুরুষাঙ্গ এবং অন্ডকোষ নেই। পরে এ ঘটনায় নিহতের ছেলে মাজহারুল ইসলাম অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে বাঘারাপাড়া থানায় মামলা করলে রহস্য উদ্ঘাটন এবং জড়িতদের ধরতে মাঠে নামে ডিবি পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ইনসপেক্টর মো. শহিদুল ইসলাম ও তার সঙ্গী এসআই মফিজুল ইসলাম তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে (মোবাইল ফোন নম্বরের সূত্র ধরে) পলাতক থাকা অজ্ঞাতনামা ওই কৃষাণকে ধরতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালান। এক পর্যায়ে নিশ্চিত হওয়ার পর গত ১ জুন বুধবার দুপুরে কৃষকের ছদ্মবেশে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার চর ঘিওর মাঠে অভিযান চালান। সেখানে মাঠে কাজ করছিলেন অজ্ঞাতনামা ওই কৃষাণ। তাকে সেখান থেকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে তার নাম লিটন মালিথা বলে জানতে পারে ডিবি পুলিশ। এ সময় তার স্বীকারোক্তিতে মাঠে থাকা বিচালীর গাদার ভেতর লুকিয়ে রাখা কর্তন করা পুরুষাঙ্গ, অন্ডকোষ ও চোখের মনি উদ্ধার করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওইদিন গভীর রাতে দামুড়হুদা উপজেলার লোকনাথপুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে তান্ত্রিক কবিরাজ আব্দুল বারেককে আটক করে ডিবি পুলিশ। তান্ত্রিক কবিরাজের আস্তানা থেকে এ সময় উদ্ধার করা হয় বিভিন্ন কবিরাজি সরঞ্জাম। এই তান্ত্রিক কবিরাজ আব্দুল বারেকের পরামর্শে ও হুকুমে বিকৃত মানসিকতা সম্পন্ন লিটন মালিথা শারীরিক ক্ষমতা বৃদ্ধি ও চির যৌবন পাওয়ার নেশায় বাঘারপাড়ার বৃদ্ধ নকিম উদ্দিনকে খুন করেন। এরপর তিনি তার পুরুষাঙ্গ, অন্ডকোষ ও চোখের মনি চাকু দিয়ে কেটে নিয়ে যান। মামলার তদন্তে উল্লিখিত দুইজনের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে ডিবি পুলিশ।