বন উজাড় বন্ধে ব্যবস্থা চাই

0

 

সবুজের অভাবে নিঃশ্বাসের জন্য অপরিহার্য অক্সিজেন কমে যাচ্ছে। তাই, পৃথিবীব্যাপী সবুজায়নের নানা উদ্যোগ চলছে। আন্তর্জাতিক নানা ফোরামে বাংলাদেশের প্রতিনিধিরাও অনেক গালভরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। কিন্তু বাংলাদেশে বাস্তবে প্রতিনিয়ত বনের পরিমাণ কমছে। ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। বন ঘিরে গড়ে ওঠা বনখেগোরা করাতকলে দিনরাত বনের গাছ চুরি করে করাতকল ফেড়ে ফার্নিচার ও পুড়িয়ে কয়লা বানায়। ফলে, প্রতিবছর যে পরিমাণ গাছ লাগানো হচ্ছে তার বহুগুণ বেশি গাছ নিধন হচ্ছে। সড়ক প্রশস্ত করতে লাখ লাখ গাছ কাটা হচ্ছে। পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এভাবে চললে বাংলাদেশে পরিবেশ বিপর্যয় রোধ করা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। অবিলম্বে বন উজাড় অপচেষ্টা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
বাংলাদেশে বনাঞ্চলের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে করাতকল এবং তিন কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ইটভাটা থাকা নিষিদ্ধ। বাস্তবে বনের তিন কিলোমিটারের মধ্যেই রয়েছে বহু করাতকল ও ইটভাটা। কোথাও কোথাও বনের গা ঘেঁষে কিংবা কোথাও বনের জায়গা দখল করেও এসব গড়ে তোলা হয়েছে। এসব ইটভাটা ও করাতকলের বেশির ভাগই হয় অবৈধ তথা লাইসেন্সহীন। অভিযোগ আছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এর জন্য দায়ী। এ নিয়ে গণমাধ্যমে বহু খবর প্রকাশিত হয়েছে। সেসব খবরে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ‘ম্যানেজ’ না করে এসব ভাটা ও করাতকল এসব ভাটা করাত কল চলতে পারে না। এসব কর্তৃপক্ষের নিয়মিত ‘চাঁদাবাজি’ একটি ওপেন সিক্রেট। এর ফলে বন উজাড় হচ্ছে। সরকারও রাজস্ব হারাচ্ছে। সম্প্রতি পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকেও জানা যায়, বরগুনার বেতাগীতে সরকারি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে বিভিন্ন স্থানে একের পর এক গড়ে উঠছে করাতকল। বর্তমানে উপজেলায় ৫৯টি করাতকল চালু আছে, যার মধ্যে বৈধ মাত্র ২৫টি আর অবৈধ ৩৪টি। অথচ, বন বিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া করাতকল গড়ে তোলার বিধান নেই। এর কিছুদিন আগে লোকসমাজসহ কয়েকটি পত্রিকায় সুন্দরবন ধ্বংসের খবরে বলা হয়, কয়রা, পাইকগাছা, শ্যামনগর, কালিগঞ্জসহ সংলগ্ন সব এলাকায় বেআইনি করা তখন করাতকল ও ভাটা চলছে। শুধু সুন্দরবন ধ্বংসের খবর বলা হয়, বেতাগীতে নয়, সারা দেশেই চলছে করাতকলের অবৈধ ব্যবসা। এর আগে ভাওয়াল, মধুপুর, চট্টগ্রাম, সিলেট, শ্রীমঙ্গলসহ যেসব জায়গায় বনভূমি আছে, সেসব জায়গায় বনভূমির পাশে থাকা শত শত অবৈধ করাতকল নিয়েও অনেক খবর প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য এতো খবরেও পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। সম্ভবত এখনো হবে না। তারপরও আমরা আশাবাদি মানুষ, তাই নিজেদের দায়িত্ব অনুযায়ী লিখে যায়। আমরা মনে করি, আমাদের সরকার দায়িত্ব, এসব খবর ও নিবন্ধের সত্যতা যাচাই করে ব্যবস্থা নেয়া। কারণ, প্রশাসনের এ ধরনের উদাসীনতা শুধু দেশকে বৃক্ষশূন্য করবে না, মানুষের বেঁচে থাকাকেই হুমকির মুখোমুখি করবে।