উপজেলাতেও অক্সিজেন থেরাপি চাই

0

 

অক্সিজেন ছাড়া বাঁচা সম্ভব নয়। অথচ সেই অক্সিজেন সংকই বাড়ছে আমাদের চারপাশে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, আমাদের চারপাশের বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ ২১ এখন শতাংশের মতো এবং আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য বাতাসে প্রয়োজন হয় ১৯.৫ শতাংশ অক্সিজেনের। এই হিসাব সুস্থ ও স্বাভাবিক মানুষের জন্য ঠিক আছে। কিন্তু যাদের রক্তে অক্সিজেনের স্বল্পতা রয়েছে, তাদের জন্য অক্সিজেনের এই পরিমাণ যথেষ্ট নয়। তাদের প্রয়োজন মেটাতে আরো বেশি অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। কারণ অসুস্থ হলেই তাদের জন্য প্রয়োজন হয় বিশেষ অক্সিজেন থেরাপির। বিজ্ঞানীদের ভাষায়, রক্তে অক্সিজেনের স্বল্পতাজনিত এই সমস্যাটিকে বলা হয় হাইপোক্সিমিয়া। বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় সাত কোটি ৩০ লাখ মানুষ হাইপোক্সিমিয়ায় আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে তিন কোটি দুই লাখই শিশু। বাংলাদেশেও দেখা গেছে, মাধ্যমিক স্তরের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত যেসব শিশুকে নিয়ে আসা হয় তাদের প্রায় ৪২ শতাংশই হাইপোক্সিমিয়ায় ভোগে। কিন্তু অক্সিজেন থেরাপির ব্যবস্থা ও উপকরণের অভাবে সেই শিশুদের চিকিৎসায় অনেক বেগ পেতে হয়। গত বুধবার আইসিডিডিআরবি এবং ‘ডাটা ফর ইমপ্যাক্ট’ আয়োজিত মেডিক্যাল অক্সিজেন নিরাপত্তা বিষয়ে গবেষণালব্ধ ফলাফলভিত্তিক মতবিনিময় অধিবেশনে এসব কথা বলা হয়। মতবিনিয়কালে বলা হয়, হাইপোক্সিমিয়া বিভিন্ন কারণে হতে পারে। মূলত নিউমোনিয়া, ম্যালেরিয়া, সেপসিস, যক্ষ্মা, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ বা সিওপিডি, হৃদরোগ, হাঁপানি ইত্যাদি কারণে হাইপোক্সিমিয়া দেখা দিতে পারে। এসব রোগ আগেও এ দেশে যথেষ্ট পরিমাণে ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে বায়ুদূষণ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণেও শ্বাসতন্ত্র বা ফুসফুসের রোগ দ্রুত বাড়ছে। তাই হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন থেরাপির সুযোগ-সুবিধা আরো বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। মতবিনিময় অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশ হেলথ ফ্যাসিলিটি সার্ভে ২০১৭-এর তথ্য অনুযায়ী ওই সময় বাংলাদেশে মাত্র ১৩ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ছিল, মাত্র ২১ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে ফ্লো মিটারসহ অক্সিজেনভর্তি সিলিন্ডার পাওয়া গিয়েছিল এবং মাত্র ৬ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে অক্সিজেন সরবরাহ বা বিতরণের ব্যবস্থা এবং পালস অক্সিমিটার ছিল। কোভিড মহামারি শুরু হওয়ার পর হাসপাতালগুলোর অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তার পরও প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই কম। তাই দ্রুততম সময়ে দেশে মেডিক্যাল অক্সিজেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশের সার্বিক স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে স্বল্পমূল্যে অক্সিজেন থেরাপির উপযোগী প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ওপর জোর দিতে হবে এবং এ ক্ষেত্রে স্বল্পমূল্যের বিদ্যমান প্রযুক্তিগুলোর কার্যকারিতা বিবেচনায় নিয়ে ব্যবহার বাড়াতে হবে। শহরাঞ্চলে অক্সিজেন থেরাপির সুযোগ-সুবিধা কিছু পরিমাণে থাকলেও গ্রামাঞ্চলে তা খুবই কম। অথচ তীব্র শীতের সময় গ্রামাঞ্চলেই শ্বাসকষ্টের রোগী বেশি দেখা যায়। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের দূরের কিংবা শহরাঞ্চলে নেওয়ার সাধ্যও অনেকের থাকে না। তাই জেলা পর্যায়ে তো বটেই; উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতেও অক্সিজেন থেরাপির সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো জরুরি হয়ে উঠেছে। আমরা আশা করি দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা আধুনিকায়নের উদ্যোগের মধ্যে অক্সিজেন থেরাপির বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব পাবে।