খেলা খেলা করে হোলি খেলার মাঠ যেন না হয়

0

 

গত শনিবার বরিশাল বঙ্গবন্ধু উদ্যানে অনুষ্ঠিত হয় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ। সংবাদ মাধ্যম বলছে, এই গণজমায়েত ছিল স্মরণকালের সর্ববৃহৎ সমাবেশ। দু’দিন আগে বাস, লঞ্চ, স্টিমার, ট্রাক ধর্মঘটের পর নসিমন, করিমন এবং নদীপথে চলা ছোট-বড় সব ধরনের নৌযান বন্ধের পরও ওই গণজমায়েত সচেতন মানুষকে হতবাক করেছে। মানুষ মাত্রই বলেছে, যদি এভাবে ধর্মঘট ডেকে বরিশাল বিভাগ অঞ্চল করা না হতো তাহলে বরিশাল শহরে পা রাখার জায়গা থাকত না। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞমহলের মন্তব্য শনিবার বরিশাল বিভাগ জুড়ে ছিল গণ-আন্দোলনের পদধ্বনি, বিএনপির এই গণসমাবেশের বিশেষ কিছু ঘটনা বিশেষজ্ঞদের বিস্মিত করেছে। যার প্রথমটি ছিল ধর্মঘট শুরুর আগে বৃহস্পতিবার রাতে বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে কয়েক হাজার নেতা কর্মী বঙ্গবন্ধু উদ্যান দখল করে নেয়া। এরপর সেখানে শীত ও কুয়াশা উপেক্ষা করে রাত্রি যাপন ও খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করা। এরপর শুক্রবার সারাদিন সাইকলে, ভ্যান, টাবুরে নৌকাযোগে হাজার হাজার মানুষের এবং সমাবেশের দিন নদীতে ড্রামের তৈরি ভেলা ও বাইচের নৌকার পাশাপাশি সাঁতার দিয়ে নদী পার হবার নজির স্থাপন করে কর্মীরা। এদের সবাইকে ছাড়িয়ে এক পঙ্গু সমর্থক হামাগুড়ি দিয়ে দীর্ঘ পথ পেরিয়ে যোগ দেন সমাবেশে। অবিশ্বাস্য এমন আরও কিছু ঘটনা সেখানে ঘটে যা মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানির ফারাক্কা লংমার্চের উন্মাদনাকেও স্মরণ করাই। পথে পথে সরকার দলীয় কর্মী ও পুলিশি বাঁধা এবং নির্যাতন সহ্য করা এসব মানুষ মিডিয়ার সামনে স্পষ্ট ঘোষণা দেন তারা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তারেক রহমানকে দেশে ফেরাতে জীবন দিতেও প্রস্তুত। তাদের এই উচ্চারণে দৃঢ়তার ছাপ কারো দৃষ্টি এড়াইনি।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ ও মিডিয়া কর্মীদের ভাষ্যমতে বিএনপি নেতা-কর্মী, সমর্থকদের মাঝে এমন উন্মাদনা চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা ও রংপুরে দেখেছেন। ময়মনসিংহে ধর্মঘটের আশঙ্কায় কিশোরগঞ্জ, জামালপুরের মত দূরের জেলা থেকে দশ সহস্রাধিক নেতা-কর্মী আগের রাতে এসে মাঠ দখলে নিয়েছিল। ফুটপাত ও ফাঁকা মাঠে তাদের পড়ে থাকার ছবি বিএনপি সমর্থীতদের উদ্বুদ্ধ করে। যার ছাপ পড়ে খুলনায়। সমাবেশের আগে দু’দিনের ধর্মঘট পদদলিত করে অনেক মানুষ যশোর, ঝিনাইদহ সাতক্ষীরা, বাগেরহাট থেকে কার্যত হেঁটেই পৌঁছে যায় আগের রাতে। এখানেও মাঠ দখল করে সারারাত চলে বক্তৃতা, শ্লোগান ও দেশাত্ববোধক গান। এরপর জাতীয় পার্টির ঘাঁটি এরশাদ সাহেবের রংপুরে ঘটে আরও অবাক কাণ্ড। বিএনপির সবচেয়ে দুর্বল এলাকাখ্যাত রংপুরের সমাবেশে কুড়িগ্রাম ও চিলমারী থেকে ৬০ বছরের বৃদ্ধের হেঁটে আসা এবং প্রবীণদেরকে কাঁধে নিয়ে নবীনদের হাঁটার ছবি ও খবর দেশে-বিদেশে আলোচিত হয়েছে। সংবাদ মাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ আলোচিত নেতৃবৃন্দ বিএনপির এই গণসমাবেশকে সরকারের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থানের পদধ্বনি বলে মন্তব্য করে বলেছেন, বিএনপির দাবি এখন জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়েছে। সরকার তা বুঝতে ব্যর্থ হলে চরম মূল্য দিতে হবে। রাজনীতিকরা ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশে বাঁধা দিয়ে ক্ষোভের আগুনে ঘি না ঢালার পরামর্শ দিয়েছেন। রাজনৈতিক মহল মনে করছেন, ওইদিন ঢাকায় জনতার মহাসমুদ্র হতে পারে। এতে বাঁধা দিলে তুফান সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।
আমরা বিএনপির পাঁচটি বিভাগীয় সমাবেশ দেখেছি। বিশেষজ্ঞ রাজনীতিকদের বিশ্লেষণ ও মতামত শুনেছি। সরকারের উদ্দেশ্যে তাদের পরাপমর্শ শুনেছি। তাঁরা যা বলেছেন, তাতে দ্বিমত করার কিছু আছে বলে মনে হয়নি। আমরা মনে করি, ‘খেলা হবে খেলা হবে’ করে হোলি খেলার মাঠ বানানোর কোনো সুযোগ সৃষ্টি করা কারো উচিত হবে না। ‘বাঁধা দিলে বাঁধবে লড়াই, এ লড়াইয়ে জিততে হবে’ এই জেদের পরিণতি জাতির জন্য ভয়ঙ্কর হতে পারে তা মনে রাখতে হবে সবাইকে। তবে সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে। কারণ বাঁধা দেয়ার ক্ষমতাটা তাদের হাতে।