অস্তিত্ব রক্ষায় মানবসম্পদ উন্নয়নের বিকল্প নেই

0

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডাব্লিউএফপি) ‘বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও ঝুঁকি পর্যবেক্ষণ’ শীর্ষক সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের প্রায় ৬৮ শতাংশ পরিবার খাবার কিনতে হিমশিম খাচ্ছে। পুষ্টিকর উপাদানসমৃদ্ধ খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে খেতে পারছে না ৮৩ শতাংশ পরিবার। আগস্ট মাসে নিম্ন আয়ের ৪২ শতাংশ পরিবারের আয় কমে যাওয়ার কারণে জীবনযাত্রা ও খাদ্য পরিস্থিতির সব ক্ষেত্রে অবনতি হয়েছে। এর মধ্যে ৩ শতাংশ পরিবারের আয় বিপজ্জনক মাত্রায় কমেছে; উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে ১৮ শতাংশ পরিবারের এবং সামান্য পরিমাণে কমেছে ২১ শতাংশ পরিবারের। আর অর্থনীতিবিদরা বলছেন, নতুন দরিদ্র তৈরি হচ্ছে। দারিদ্র্য বিমোচনে দক্ষতার ঘাটতি তৈরি হয়েছে। খাদ্য দারিদ্র্য কমাতে স্বল্প মূল্যে খাদ্য বিতরণের আওতা বাড়াতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে দক্ষতা আনার বিষয়েও গুরুত্বারোপ করেছেন তাঁরা।
আমরা জানি একটি সাম্যের দেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়েই দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। কিন্তু গত ৫০ বছরে নানা ঘাত-প্রতিঘাতে সেই স্বপ্নের দেশ পাইনি আমরা। এ সময়ে দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা দিন দিন বেড়েছে। দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে মানুষকে। মানুষের সেই লড়াই তীব্র হচ্ছে। গ্রামাঞ্চলে আয়বৈষম্য বেড়ে মধ্যবিত্তের অস্তিত্ব বিপন্ন হতে চলেছে। সমাজ বিশ্লেষকদের মতে আমাদের সমাজ একটা পালাবদলের মধ্য দিয়ে চলছে। সামাজিক এই পালাবদলে একটি শ্রেণি লাভবান হলে অন্য শ্রেণি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। স্বাধীনতার পর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণি। মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে বলা হয় সমাজের নিয়ামক। সমাজের বুদ্ধিবৃত্তিক দিকটি নিয়ন্ত্রণ করে মধ্যবিত্ত। এই মধ্যবিত্ত শ্রেণি যখন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ভেতরে ভেতরে ভেঙে যায়, তখন সমাজের সৌন্দর্য নষ্ট হয়। বাধাগ্রস্ত হয় সামাজিক বিকাশ। দারিদ্র্য এই মধ্যবিত্তকেও আঘাত করেছে।
দেখা যাচ্ছে, দিনবদলের সঙ্গে সঙ্গে দেশের সমাজব্যবস্থায় পরিবর্তন এসেছে। আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন থেকে দেশের মানুষের ভাগ্যের কতটা পরিবর্তন হয়েছে সেটাই দেখার বিষয়। বাস্তবতা হচ্ছে, স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে এসেও মানুষের অনেক স্বপ্ন পূরণ হয়নি। দারিদ্র্যের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি দেশের মানুষ। সবার জন্য মৌলিক সব চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয়নি।
এ কথা ঠিক যে গত ৫০ বছরে ধাপে ধাপে আমাদের অনেক উন্নয়ন হয়েছে, কিন্তু আমরা সমন্বিত উন্নয়নের দিকে যেতে পারিনি। আমরা অবকাঠামোগত উন্নয়ন করলেও মানসম্পন্ন উন্নয়ন করতে পারেনি। বিগত বিএনপি শাসনামলে মানবসম্পদ উন্নয়নের যে কর্মসূচি নেয়া হয়েছিল তা এখন অস্তিত্ব হারিয়েছে।
খাদ্যের দাম বাড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণি। খাদ্যের গুণগত মানে ছাড় দিতে বাধ্য হয়েছে এই শ্রেণি। এই দিকটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাভাব ও খাদ্যসংকটে পুষ্টিজনিত নানাবিধ রোগাক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। অনেককেই চলে যেতে হচ্ছে প্রান্তসীমায়। আমাদের দৃষ্টি এড়িয়ে নীরবে অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে খাদ্য দারিদ্র্য কমাতে হবে। দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করতে হবে মানবসম্পদ উন্নয়ন ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি। সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন কর্মসংস্থান। সরকারি বেসরকারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে অর্থাৎ সম্মিলিত চেষ্টার কোনো বিকল্প নেই। এই সম্মিলিত বা ঐক্যবদ্ধতা সৃষ্টির দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে।