শেষ সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশনকেই নিতে হবে

0

 

গাইবান্ধা উপনির্বাচন স্থগিতের মধ্য দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশনের সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ ব্যর্থ হয়েছে। ফলে, দাবি করেছে নির্বাচন বর্জনকারীরা।
গত বুধবার ছিল গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন। সকাল ৮টা থেকে একটানা বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দুপুর ২টায় ভোটগ্রহণ বন্ধ করা হয়। সাত মাস বয়সী এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে এটাই ছিল কোনো সংসদীয় আসনের প্রথম নির্বাচন। যা সম্পন্নই করতে পারেনি কমিশন। এই নির্বাচনে ইভিএমে ভোট কারচুপি স্পষ্টতই প্রমাণ হয়েছে।
উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণের মাঝপথে প্রথমে অর্ধশত কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ বন্ধ করার পর পুরো নির্বাচন স্থগিতের সিদ্ধান্ত জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার। বুধবার রাতে ইসির এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, ব্যাপক অনিয়ম ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনে চরম ব্যর্থতার কারণে সব কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এদিকে, গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে ভোট স্থগিতের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন দলটি বলছে, গোলযোগহীন এই নির্বাচনে ভোট বন্ধ করার কারণ তাদের কাছে বোধগম্য নয়। অন্যদিকে এই ভোটে অংশগ্রহণকারী জাতীয় পার্টি ইসির সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছে। অপরদিকে, অনিয়ম এবং এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ তুলে দুপুরের দিকে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিলেন অন্য সকল প্রার্থীরা।
উল্লেখ্য, এই আসনের ১৪৫টি কেন্দ্রের সব কটিতেই এবার সিসিটিভি বসানো হয়েছিল; ঢাকার পর্যবেক্ষণকেন্দ্র থেকে সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা হয় ভোটকেন্দ্রের পরিস্থিতি। গোপন কক্ষে অবৈধভাবে একাধিক ব্যক্তির অনুপ্রবেশ, একজনের ভোট আরেকজন দিয়ে দেওয়াসহ বিভিন্ন ঘটনা সরাসরি দেখার পর দুপুর ১২টা পর্যন্ত কয়েক দফায় মোট ৪৪ কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। পরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার সাংবাদিকদের বলেন, কমিশনের কাছে মনে হয়েছে ভোটকেন্দ্রের ভেতরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গিয়েছিল। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন ভোটগ্রহণ বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার সাংবাদিকদের জানান, বিধি-বিধান অনুযায়ী কী করতে হবে, তা দেখে কমিশন পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।
উপনির্বাচন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বিষয়টি এখন আলোচনার শীর্ষে। বিশ্লেষকরা নানাভাবে বিষয়টি বিশ্লেষণ করেছেন। দেশের রাজনৈতিক আবহে এই ভোট বন্ধের প্রভাব কী হবে? এর মধ্য দিয়ে কি নির্বাচন কমিশন সমালোচকদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে? নাকি ভোট বন্ধ করে দেওয়ার পর নতুন কোনো সংকট দেখা দেবে? নাকি এই ঘটনা নির্বাচনব্যবস্থার ত্রুটিকেই নতুন করে সামনে নিয়ে আসবে? আবার এমনও ভাবা হচ্ছে। এই ভোট বন্ধের ঘটনা রাজনৈতিক দল ও জনগণের কাছে একটি ইতিবাচক বার্তা দেবে। তাদের মতে, সেই বার্তাটি হচ্ছে এই যে অনিয়ম, জালিয়াতি হলে নির্বাচন কমিশন ভোট বন্ধ করে দিতে পারে। আবার বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ মনে করেন, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে চালিয়ে যাওয়াটাই হচ্ছে আসল কাজ। স্থানীয় প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী সব কিছু থাকার পরও একটি আসনের উপনির্বাচন কী করে নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেল? একটা আসলে নির্বাচন করতে না পারা কি ব্যর্থতা নয় এমন প্রশ্নও উঠেছে। বলা হচ্ছে, একটি আসলে যারা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারে না, তা ৩শ’ আসনে কী করবে? বিরোধী দল বলছে, নির্বাচন কমিশনের অক্ষমতা প্রমাণ করে নিরপেক্ষ নির্বাচনের মূল বাধা হচ্ছে সরকার। তাই, এই সরকারের অধীনে নড, ভোট হতে হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আমরা মনে করি।