এক মাসের ছুটি নিয়ে পাঁচ মাস ভারতে

0

 

ঝিকরগাছা (যশোর) সংবাদদাতা॥ ঝিকরগাছায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বপ্নারানী বিশ্বাস চিকিৎসার নাম করে একমাসের ছুটি নিয়ে ৫ মাস ধরে ভারতে অবস্থান করছেন।
এদিকে বিশ্বস্ত একাধিক সূত্রের দাবি, চিকিৎসা নয়, বরং দু’ছেলের সেখানে ইংলিশ মিডিয়ামে ভর্তি কোচিং ও লেখাপড়ার কাজে অবস্থান করছেন শিক্ষক দম্পতি। তার স্বামী একজন কলেজ শিক্ষক বলে জানা গেছে। সূত্রমতে, তার বড় ছেলে আগে থেকেই ভারতে লেখাপড়া করে। এবার তিনি তার ছোট ছেলেকে সেখানকার একটি নামীদামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইংলিশ মিডিয়ামে ভর্তি করতে ভারতে অবস্থান করছেন। ভারতীয় ভিসা প্রাপ্তির ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক স্বপ্নারানী বিশ্বাস চিকিৎসার নাম করে প্রকারন্তরে মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন।
ওই শিক্ষক ০৮/০৫/২০২২ থেকে ০৮/০৬/২০২২ পর্যন্ত একমাসের ছুটি নিয়ে নিজের চিকিৎসার নাম করে ছোট ছেলেকে নিয়ে ভারতে যান। সেখানে অবস্থান করা অবস্থায় গত ০৩/০৬/২০২২ তারিখে বাংলাদেশ উপহাইকমিশন কোলকাতার মাধ্যমে সহকারী পরিচালক (পলিসি ও অপা.), প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ঢাকার নিকট আরও ২মাস (৬০দিন) ছুটি বর্ধিত করণের আবেদন করেন। সেই বর্ধিত ছুটি মঞ্জুর হলেও ছুটির মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ০৬/০৮/২০২২ তারিখে। সেই থেকে অদ্যবধি তিনি বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে ঝিকরগাছা উপজেলা শিক্ষা অফিসার ইসমত আরা পারভীন বলেন, তিনি দীর্ঘদিন অনুপস্থিত রয়েছেন। ফলে বিনা ছুটিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় স্বপ্নারানী বিশ্বাসের বিরুদ্ধে গত ১৪/০৮/২০২২ তারিখে জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে। এছাড়া গত ২৯/০৯/২০২২ তারিখে ভার্চ্যুয়ালি মিটিংয়ে শিক্ষা সচিব আমিনুল ইসলাম খান স্যারকে স্বপ্নারানী বিশ্বাসের অনুপস্থিতির বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। স্বপ্নারানী ২০১৬ সালের ২৯ মার্চ এই বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। সে বছর ১২ ডিসেম্বর বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে ৪,৫ ও ৬নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর রোকেয়া বিশ্বাস নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু নির্বাচিত সভাপতি ওই শিক্ষকের পছন্দমত না হওয়ায় সমস্ত কাগজপত্র নষ্ট করে দেন। ফলে নির্বাচিত সভাপতি রোকেয়া বিশ্বাস আদালতের শরণাপন্ন হন। কয়েকদফা সভাপতি রোকেয়া বিশ্বাসের পক্ষে রায় হলেও বারবার আপিল করার কারণে মামলাটি এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। ফলে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়টি ম্যানেজিং কমিটি ছাড়াই চলছে বলে রোকেয়া বিশ্বাসের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান লিটন জানিয়েছেন। এদিকে প্রধান শিক্ষক দীর্ঘদিন বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে শিক্ষার্থীদের অভিবাবক শফিকুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম, ফজলুর রহমান, মোশারেফ হোসেন, রফিকুল ইসলাম, মহিদুল ইসলাম, আলম হোসেন, মিঠুন হোসেনসহ একাধিক অভিভাবক জানিয়েছেন। সরেজমিনে বৃহস্পতিবার সকালে বিদ্যালয়ে গিয়ে জানতে চাইলে অন্য শিক্ষরা বলেন, এমনিতেই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক সংখ্যা কম রয়েছে। তারপরও সরকারি মিটিংয়ে উপস্থিত হওয়া, অসুস্থতাজনিতসহ বিভিন্ন সমস্যায় দু’একজন ছুটি কাটালেও শিক্ষার্থীদের পাঠদানের ক্ষেত্রে তারা অত্যান্ত আন্তরিকতার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানান।