চুয়াডাঙ্গায় কম্বাইন্ড হারভেস্টার যন্ত্রের সুফল পাচ্ছেন কৃষক

0

 

 

রিফাত রহমান,চুয়াডাঙ্গা॥ চুয়াডাঙ্গা কৃষি কাজে ভর্তুকি মূল্যে দেয়া কম্বাইন্ড হারভেস্টার যন্ত্রের ব্যবহার বেড়েছে। রোপা আউশ মৌসুমে হারভেস্টার ব্যবহার করে ধান কেটে কৃষকের প্রায় ৭০ কোটি টাকার শ্রমিকসহ অন্যান্য ব্যয় সাশ্রয় হয়েছে বলে দাবি করছে কৃষি বিভাগ।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রকৌশলী বিভাগের তথ্য মতে জেলার ৪টি উপজেলায় ভর্তুকি মূল্যে এ পর্যন্ত জাপানী ইয়ানমার ২৩টি ও কুবোতা ২৫টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার যন্ত্র হস্তান্তর করা হয়েছে। এ যন্ত্রগুলো সদর উপজেলায় ১৬টি, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ১৫টি, দামুড়হুদা উপজেলায় ১০টি ও জীবননগর উপজেলায় ৭টি বিতরণ করা হয়। যার সুবিধা পাচ্ছে প্রান্তিক কৃষকরা।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের সহায়তা নিয়ে ৫০% ভর্তুকিতে এই কম্বাইন্ড হারভেস্টার যন্ত্র কৃষকদের দেয়া হচ্ছে। কৃষি যন্ত্রপাতি ফসল উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৩০ লাখ টাকার কম্বাইন হারভেষ্ট ৫০% ভর্তুকিতে একজন কৃষক ১৪ লাখ টাকায় নিতে পারবেন। এ বার কম্বাইন্ড হারভেস্টারের সাহায্যে মাঠে মাঠে কৃষকের আউশ ধান কাটা হয়েছে।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, জমি আবাদ যোগ্য করে তুলতে, মাড়াই ও সংরক্ষণ কাজের প্রতিটি ধাপেই ব্যবহার হচ্ছে উন্নত প্রযুক্তি। বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে ৯০ শতাংশ জমি চাষ, ৮০ শতাংশ সেচ কাজ, ৭০ শতাংশ ফসল উৎপাদন ও মাড়াই, ২ শতাংশ ফসল কাটা ও রোপনে ১ শতাংশ ক্ষেত্রে সনাতন পদ্ধতির পরিবর্তে যন্ত্রের ব্যবহার হচ্ছে। প্রকার ভেদে যন্ত্রের চাহিদা আরো বাড়ছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ডিহি কেষ্টপুর গ্রামের কৃষক নূর ইসলাম ইসলাম বলেন, গত দু’বছর আগে বৃষ্টির কারনে আড়াই বিঘা জমির কাটতে না পারায় ধান বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো। এই যন্ত্র গুলো আসাতে সুযোগ সুবিধা হয়েছে। অর্ধেক খরচে অর্থাৎ ২ হাজার ৪০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকায় প্রতি বিঘা জমির ধান কাটা, কাটা অংশ বাঁধা ও মাড়াই করে বস্তায় ভরে বাড়ি নিয়ে যেতে পারি। আগে লোকজন দিয়ে ধান কাটতে বিঘা প্রতি ৬ হাজার থেকে ৭ টাকা খরচ হতো। এখন অন্তত খরচের হাত থেকে আমরা বেঁচেছি। তাছাড়া বৃষ্টি হলেও ধান কাটা নিয়ে আমাদের আর ভাবনা নেই। জমিতে যত বৃষ্টির পানিই থাকনা কেনো, এ যন্ত্রের মাধ্যমে সহজেই ধান কাটা যাচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার গড়াইটুপি ইউপি চেয়ারম্যান সফিকুর রহমান রাজু বলেন, চেয়ারম্যান হলেও আমি একজন প্রান্তিক কৃষক। পরিবারের শত বিঘা জমি চাষ করছি। নিজের এলাকায় কৃষকদের সহযোগিতার জন্য কৃষি অফিস থেকে ভর্তুকি মূল্যে যে কম্বাইন্ড হারভেস্ট মেশিন নিয়েছি, তা আমার এলাকার প্রান্তিক কৃষকদের কথা চিন্তা করে এবং আমার চাষের ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য। এর মাধ্যমে আমি যেমন উপকৃত হচ্ছি তেমনি আমার এলাকার প্রান্তিক কৃষদের অল্প সময়ে ধান ঘরে তোলার জন্য সুবিধা হচ্ছে। এ ইউনিয়নে বিভিন্ন গ্রামে প্রায় ৬০টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার যন্ত্র ধান কাটার কাজে সহযোগিতা করছে। প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে সঠিক সময়ে কৃষকরা ধান ঘরে তুলতে পারে না। কিন্তু সেটা আর হচ্ছেনা। সঠিক সময়েই কৃষক তাদের উৎপাদিত ধান জমি থেকে নিয়ে যেতে পারছে। সব মিলিয়ে সরকার যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, সেটা যুগোপযোগী। এটা ধারাবাহিকভাবে চালু রাখলে কৃষকরা উপকৃত হবে।