চৌগাছায় কলাইয়ে আশা বেধেছেন কৃষক

0

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু চৌগাছা (যশোর) ॥ যশোরের চৌগাছায় চলতি বছরে আশানুরুপ কলাই চাষ হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। কলাই চাষে অল্প সময় ও ব্যয় কম হওয়ার কারণে প্রতি বছর এ জনপদের চাষিরা কলাই চাষ করতে ভুল করে না। প্রতি বছরের মত এবছরও উপজেলার বিস্তীর্ণ মাঠে কলাই চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ভাল ফলনের আশা করছেন চাষিরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলাতে প্রায় সাড়ে ৩শ হেক্টর জমিতে মাষ ও মুগ কলাই এর চাষ হয়েছে। উপজেলা নিচু এলাকা ব্যতিত ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার অধিকাংশ মাঠে কৃষকরা কলাই চাষ করেছেন।
গতকাল উপজেলার স্বরুপদাহ ইউনিয়নের খড়িঞ্চা, নারায়নপুর ইউনিয়নের হাজরাখানা, পেটভরাসহ বেশ কিছু গ্রামের মাঠে যেয়ে দেখা যায় বিঘার পর বিঘা জমিতে কলাই চাষ করা হয়েছে। কিছু জমি কলাই গাছের পাতা যেন সবুজের চাদর পেতে আছে, আবার বেশ কিছু জমিতে সদ্য রোপন করা কলাই চারা বের হয়ে নতুন পাতা ছাড়তে শুরু করেছে। কলাই ক্ষেত পরিচর্জায় ব্যস্ত খড়িঞ্চা গ্রামের আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, কলাই হচ্ছে কৃষকের দুঃসময়ের বন্ধু। এই চাষে কৃষককে তেমন কোন অর্থ বা সময় ব্যয় করতে হয়না। বছরের এই সময়টি এক শ্রেনীর ফসলি জমি অলস পড়ে থাকে। শীত শুরু হলেই বেশির ভাগ জমিতে চাষ হবে বোরো ধান। তাই জমি ফেলে না রেখে সেখানে মাষ বা মুগ কলাই চাষ করা হয়। কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ দেখা না দিলে প্রতিটি জমি থেকে আশানুরুপ ফলন হবে। বাজারে কলাইয়ের বেশ চাহিদা থাকায় দামও ভাল পাওয়া যায়। কৃষক আব্দল্লাহ আল মামুন চলতি বছরে মাষ ও মুগ মিলে প্রায় আড়াই বিঘা জমিতে কলাই চাষ করেছেন। তার মতো ওই মাঠে কৃষক সেলিম রেজা ১ বিঘা, আকবর আলী ২ বিঘা, আন্দারকোটা মাঠে বাবুল আক্তার দেড় বিঘা জমিতে কলাই চাষ করেছেন। পেটভরা গ্রামের চাষি আব্দুল গনি বিশ্বাস বলেন, কলাই অত্যান্ত সুস্বাদু একটি ডাল, তাই ১বিঘা জমিতে কলাই চাষ করেছি। ফসলে অন্য কোন সমস্যা না হলেও পোকার আক্রমণ দেখা দিচ্ছে, কীটনাশক প্রয়োগে এখনও ফসল ভাল আছে। তারনিবাস গ্রামের চাষি ফজলুর রহমান বলেন, আগে স্থানীয় জাতের কলাই চাষ করে আশানুরুপ ফলন পাওয়া যাইনি, তাই এবছর হাইব্রিড জাতে কলাই চাষ করেছি আশা করছি খুল ভাল ফলন হবে। মাশিলা গ্রামের গৃহবধু সাথী খাতুন বলেন, আমার পরিবারের সকলেই কলাই ডালকে খুবই পছন্দ করে। কলাই উঠা শুরু হলে আমরা বাজার থেকে কলাই কিনে ডাল তৈরী করে যতœসহকারে ঘরে তুলে রাখি। এই ডাল বছরের পুরো সময় জুড়ে আমরা খেয়ে থাকি।
বাঙালি রসনায় ডালের কদর যুগযুগ ধরে। পাতে ডাল না হলে, হাত ডুবিয়ে ডালভাত না খেলে অনেকের চলে না। আর যদি সেই ডাল হয় কলাইয়ের তা হলে তো কথাই নেই। কলাই যে শুধু ডাল হিসেবে ব্যবহৃত হয় এমনটি না। কলাই আর কুমড়া বড়ি বাঙালি খাবার তালিকায় এখনও স্থান করে আছে। তাই প্রতিটি গ্রামাঞ্চলের মানুষের কাছে কলাই খুবই পরিচিত এক নাম।
বিশেষজ্ঞরা জানান, কলাইয়ের ডালে শতকরা ২০ থেকে ২৩ ভাগ আমিষ থাকে। প্রোটিন ও ভিটামিন বি এর সমৃদ্ধ উৎস হলো এই ডাল। এতে প্রচুর পরিমানে লৌহ বা আয়রন আছে বলে এটি স্বাস্থ্যকর ডাল। এটি শরীরে বল বৃদ্ধি করে, শরীরকে সক্রিয় রাখে। হজমশক্তি বাড়ায়, হৃদযন্ত্র সুস্থ্য রাখে, শুক্রবর্ধক, পেশির কোষের বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে, স্নায়বিক দূর্বলতা, স্মৃতি দূর্বলতা, হিষ্টিরিয়ার মত সমস্য দুর করে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনেও ভূমিকা রাখে কলাই ডাল।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সমরেন বিশ্বাস বলেন, উপজেলার কিছু নিচু এলাকা ব্যতিত অধিকাংশ ইউনিয়নের মাঠ গুলোতে মাষ ও মুগ কলাই চাষ হয়েছে। আগে স্থানীয় জাতের কলাই চাষ হলেও এখন হাইব্রিড জাতের চাষ হচ্ছে এবং কৃষক অধিক লাভবান হচ্ছেন।