ডিজিটালের সুফল-কুফল ভাবতে হবে

0

 

আধুনিক প্রযুক্তির সাথে চলতে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ঘোষণা হয় প্রায় এক দশক আগে। এই একাদশকে হাতে হাতে মোবাইল, ঘরে ঘরে ইন্টারনেটের ব্যবস্থা করে সরকার এখন হরহামেশাই সফলতা দাবি করে ডিজিটাল দেশ গড়ার কৃতিত্ব জাহির করছে। এটা নিয়ে বিরোধীদের কেউ কেউ মাঝে মাঝে টিপ্পনী কাটলেও সত্য হচ্ছে, সরকার ডিজিটাল ব্যবস্থার সম্প্রসারণ বা বিস্তারে ব্যাপকভাবে সফল হয়েছে। শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত নানা প্রক্রিয়ায় নেট পৌঁছে দিয়েছে। ছেলে-বুড়ো সবাই এখন নেট দুনিয়ার সদস্য। এই ডিজিটাল পদ্ধতির কারণে সুদূর দিল্লি বসে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী বোতাম টিপে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রাস্তা, ব্রিজ উদ্বোধন করছে। মৃত্যুদূত করোনাকালে সরকার প্রশাসন বাণিজ্য, শিক্ষা সবই সচল রেখেছিল অনলাইন ও ভার্চ্যুয়াল ব্যবস্থায়। প্রধানমন্ত্রী তো টানা দু’বছর দেশ চালালেন ভার্চ্যুয়াল মিটিং ও সভা সমাবেশের মাধ্যমে। মন্ত্রী, এমপি, বিরোধী দলও কম যাননি। এখনও অনেক কিছুই চলছে ডিজিটাল পদ্ধতির সুবিধায়। ফলে, সরকার কৃতিত্ব দাবি করবে এটাই স্বভাবিক। আমরা ওই সাফল্যের জন্য ধন্যবাদ জানাই কারণ আমরাও প্রযুক্তির আওতায় চলছি।
তবে একথা সত্য যে, একদিকে যখন প্রযুক্তির সুফল আসছে, অন্যদিকে, তখন ভয়ঙ্কর পরিণতির কালো মেঘ বিরাজ করছে। এই প্রযুক্তির অবাধ বিস্তারে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গভীর অন্ধকারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কিশোর অপরাধ থেকে কিশোরী প্রেম পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে বাধ্যতামূলক বাল্য বিয়ে, আত্মহত্যা সবই বাড়ছে প্রযুক্তির বিস্তারে। মূলত এই পরিস্থিতি হয়েছে করোনাকালে সরকারি সিদ্ধান্তে শিক্ষাঙ্গণ বন্ধ করে অনলাইন ক্লাস চালু করার পর থেকে সন্তানের শিক্ষাজীবন বাঁচাতে অভিভাবক, শিশু শিক্ষার্থীদের হাতে নেটসহ এনড্রয়েড ফোন তুলে দিতে বাধ্য হন। কৌতূহলী শিশুমন তা থেকে শিক্ষার চেয়ে অধিক বেশি যা শিখেছে তার খেশারত আজ অভিভাবকরা দিচ্ছে, কাল গোটা জাতি দেবে। ২০২০ সাল থেকে এ পর্যন্ত শিশু-কিশোর অপরাধ নিয়ে পরিচালিত সকল গবেষণায় এ ভয়ঙ্কর চিত্র ফুটে উঠেছে।
সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে বেশ কিছু গবেষণাপত্র উপস্থাপন করা হয়। এসব গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ইন্টারনেট ব্যবহারে শিক্ষার্থীরাই এগিয়ে রয়েছে। প্রায় ৯৮ শতাংশ শিক্ষার্থীই ইন্টারনেট ব্যবহার করে। ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের মধ্যে ছেলে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৭২ শতাংশ, মেয়ে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৬৩ শতাংশ। ইন্টারনেট ব্যবহার শুরুর দিক থেকে ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সীরাই এগিয়ে। এ বয়সেই ইন্টারনেট ব্যবহার শুরু করে প্রায় ৫৬ শতাংশ। ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের মধ্যে সপ্তাহে ছয় থেকে সাত দিন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর হার ৫৮ শতাংশ। সপ্তাহে এক থেকে দুই দিন ইন্টারনেট ব্যবহার করে ৮ শতাংশ শিশু-কিশোর। এটা শুধু কল্যাণকর হলে এটি একটি ইতিবাচক দিক। কিন্তু এর উল্টো পিঠেই রয়েছে একটি ভয়ংকর তথ্য। আর সেই তথ্যটি হচ্ছে, ইন্টারনেটে ১৮ বছরের কম বয়সী শিশুদের ৯০ শতাংশ কমপক্ষে একবার পর্নোগ্রাফি দেখেছে। যার কুফল ধীরে ধীরে বিস্তার লাভ করছে।
এসব গবেষণার সঙ্গে যাঁরা জড়িত তাঁরা বলছেন, ইন্টারনেট একটা আসক্তি। এই আসক্তি থেকে শিশুদের মুক্ত করতে আগামী দিনে পুনর্বাসনকেন্দ্র তৈরি করার প্রয়োজন পড়তে পারে গবেষকদের অভিমত এটি। চিন্তিত হওয়ার মতো খবর। গবেষণায় আরও বলা হয়, এসব শিশু ইন্টারনেট ব্যবহারের কারণে খাদ্যগ্রহণসহ মৌলিক পাঁচ বিষয়ে পিছিয়ে আছে। বলে গবেষকদের ধারণা। এ ছাড়াও বাড়ছে সাইবার বুলিংসহ অনেক অপরাধমূলক ঘটনা।
আমরা মনে করি, শিশুদের ইন্টারনেট আসক্তি থেকে মুক্ত করার দায়িত্ব শুধু অভিভাবকদের নয়। মূল দায়িত্ব সরকারের। তাদের অপরিনামদর্শী তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত পরিহার করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আগে শিক্ষার্থীর অনলাইন শিক্ষা ও মোবাইল ব্যবহার বন্ধ করা উচিত হবে ? মনে রাখতে হবে, যাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়তে প্রযুক্তির বিস্তার ঘটানো হচ্ছে, তারা যদি অকালেই নষ্ট হয়ে যায় তাহলে ক্ষতিটা জাতিরই হবে।