বাগেরহাটে দুই হাজার পরিবার পানিবন্দী তলিয়ে গেছে সুন্দরবনের করমজল

0

বাগেরহাট সংবাদদাতা॥ নিম্নচাপের প্রভাবে গত তিন দিন থেমে থেমে বৃষ্টি আর জোয়ারের পানিতে বাগেরহাটের নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে বাগেরহাট সদর উপজেলার তিনটি গ্রামের পাঁচ শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। জোয়ার ও বৃষ্টির পানি জমে ওইসব এলাকার মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। এসব পরিবারে খাবার রান্নায় দারুণ অসুবিধা হচ্ছে। তারা ভৈরব নদের উপর টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।
অপরদিকে মোংলা বন্দরের অবস্থানরত জাহাজগুলোতে মালামাল ওঠানামার কাজ বিঘিœত হচ্ছে।
এদিকে জেলার মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা উপজেলার চারটি ইউনিয়নের দু’হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়েছে। ভেসে গেছে অসংখ্য পুকুর ও ঘেরের মাছ।
মোংলা ও রামপাল উপজেলার নদীতীরবর্তী এলাকার কয়েক হাজার মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন। এসব এলাকার মানুষ তাদের বেড়িবাঁধের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। ওইসব এলাকায় খুব শিগগির প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
জেলার চিংড়ি মাছের ঘেরগুলোতে পানি ছুঁই ছুঁই করছে। বৃষ্টিপাত ও নদনদীতে জোয়ারের পানির চাপ অব্যাহত থাকলে মাছের ঘের তলিয়ে যাওয়ার আশংকা করছে মৎস্য বিভাগ। তবে এই বৃষ্টিতে চলতি রোপা আমন ধানের উপকার হচ্ছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
এদিকে তৃতীয় দিনের মতো উচ্চ জোয়ারের পানিতে সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা ও করমজল কুমির প্রজনন কেন্দ্রটি তলিয়ে গেছে।
পূর্ব সুন্দরবনের করমজল কুমির প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির বলেন, গত তিন দিন ধরে জোয়ারের পানিতে সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। সুন্দরবনের প্রধান প্রধান নদ-নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে চার থেকে পাঁচ ফুট পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। কমরজলে পানির উচ্চতা ছিল চার ফুট। সম্প্রতি নদীতে যে হারে পানি বাড়ছে তাতে সুন্দরবনের প্রাণিকূল হুমকির মুখে পড়ছে। বনের বাঘ, শুকর, হরিণ, বানর সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। এসব প্রাণি রক্ষায় সরকারকে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মনে করছেন এই বন কর্মকর্তা।
বাগেরহাট কৃষি বিভাগের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. আজিজুর রহমান বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে উপকূলীয় বাগেরহাট জেলা জুড়ে রোববার সকাল থেকে থেমে থেকে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। গত দুই দিনে জেলায় ৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এরমধ্যে ফকিরহাট উপজেলায় একদিনে সর্বোচ্চ ৫২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি জমে বেশকিছু এলাকায় পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে শীতকালীন সবজিক্ষেত নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। দ্রুত এই পানি নেমে না গেলে চাষিদের ক্ষতি হবে। তবে এই বৃষ্টিতে রোপা আমন ধানের দারুণ উপকার হচ্ছে। জেলায় ইতোমধ্যে ৮৭ ভাগ জমিতে রোপা আমন ধান রোপণ শেষ হয়েছে। বাগেরহাট জেলায় চলতি মৌসুমে ৭৪ হাজার ৪২৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সংসদ সদস্য আমিরুল আলম মিলন বলেন, মোরেলগঞ্জ উপজেলার পঞ্চকরণ, বহরবুনিয়া, ঝিউধারা ও চিংড়াখালীসহ মোরেলগঞ্জ সদর ও শরনখোলা উপজেলার দুই হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে । এছাড়া জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে পুকুর ও মাছের ঘের। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অসহায় মানুষের পাশে দাড়তে বলেছি। প্রয়োজনে তাদের খাদ্য সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, মোরেলগঞ্জের পৌরসভা অংশে জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে উচ্চ জোয়ারে প্লাবিত হচ্ছে। ওই অংশে নদীতীর প্রতিরক্ষার জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। নদী তীর সংরক্ষণের কাজ চলতি অর্থ বছরে শুরু করা হবে। জোয়ারের পানি ওঠা রোধ করতে মোরেলগঞ্জ উপজেলার জন্য ৯৫ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা প্রয়োজন। এরজন্য চার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের একটি প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। তার সমীক্ষা খুব শিগগির শুরু হবে। ওই বাঁধ নির্মিত হলে রামপাল ও মোংলা উপজেলারও জোয়ারের পানি প্রতিরোধ হবে। এছাড়া বাগেরহাট সদরের জোয়ারের পানি ঠেকাতে জাইকার অর্থায়নে নদীতীর প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজ খুবশিগগির শুরুর কথা জানান এই কর্মকর্তা।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, বঙ্গোপসাগরে লঘু চাপের প্রভাবে জোয়ার ও অব্যাহত বৃষ্টিতে বাগেরহাট সদর, মোরেলগঞ্জ, রামপাল ও মোংলা উপজেলার নদীতীরবর্তি নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে কয়েকশ পরিবার সাময়িকভাবে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এসব ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা তৈরি করতে স্ব স্ব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের দির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তালিকা তৈরির পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তা দেয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন এই কর্মকর্তা।