দেশে আত্মহত্যার শীর্ষে স্কুলের শিক্ষার্থীরা

0

 

লোকসমাজ ডেস্ক॥ ২০২২ সালের ৮ মাসে ৩৬৪ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন, তাদের মধ্যে ১৯৪ জন স্কুলের শিক্ষার্থী। এছাড়াও, ৭৬ জন কলেজপড়ুয়া, ৫০ জন বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া এবং ৪৪ জন মাদ্রাসার শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশনের জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
শিক্ষাস্তর বিবেচনায় দেখা গেছে প্রাথমিক-মাধ্যমিকের ৫৩ দশমিক ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। একই সময়ে ২০ দশমিক ৮৮ শতাংশ কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী, ১৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এবং ১২ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ মাদ্রাসার শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন।
শুক্রবার (৯ সেপ্টেম্বর) এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরে সংগঠনটি।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৬০ শতাংশ পুরুষ এবং ৪০ শতাংশ নারী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা আত্মহত্যা করেছেন তার ৪৬ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ পুরুষ এবং ৫৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ নারী। স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছেলে ৩২ দশমিক ৯৯ শতাংশ এবং মেয়ে ৬৭ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। মাদ্রাসার ৩৯ দশমিক ২৯ শতাংশ পুরুষ এবং ৬০ দশমিক ৭১ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন– বলে জানিয়েছে আঁচল ফাউন্ডেশন।
এদিকে, আত্মহত্যাকারীদের অবস্থান বিবেচনায় শীর্ষে রয়েছে রাজধানী ঢাকা। ঢাকায় গত ৮ মাসে শতকরা ২৫ দশমিক ২৭ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। চট্টগ্রাম বিভাগে ১৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ, খুলনা বিভাগে ১৪ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ, রংপুর বিভাগে ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ, বরিশাল বিভাগে ৯ দশমিক ৬২ শতাংশ, ময়মনসিংহ বিভাগে ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে ১৪ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ এবং সিলেট বিভাগে ৪ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন।
আঁচল ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৬০ দশমিক ৭১ শতাংশ নারী এবং ৩৯ দশমিক ২৯ শতাংশ পুরুষ আত্মহত্যা করেছেন।
এদের মধ্যে প্রেমঘটিত কারণে সবচেয়ে বেশি ২৫ দশমিক ২৭ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। অভিমান করে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন ২৪ দশমিক ৭৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। পরিবারের সঙ্গে চাওয়া পাওয়ার অমিল হওয়ায় ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ এবং পারিবারিক কলহের কারণে ৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ আত্মহত্যা করেছেন। ধর্ষণ কিংবা যৌন হয়রানির কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন ৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ শিক্ষার্থী। মানসিক সমস্যার কারণে ৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ, পড়াশোনার চাপে শূন্য দশমিক ৮২ শতাংশ, সেশনজটের কারণে হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে শূন্য দশমিক ৮২ শতাংশ এবং পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় ১ দশমিক ৯২ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। চুরির মিথ্যা অপবাদে ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ, আর্থিক সমস্যায় ১ দশমিক ৯২ শতাংশ, বিষাদগ্রস্ত হয়ে শূন্য দশমিক ৫৫ শতাংশ আত্মহত্যা করেছেন। বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় এবং স্বামী পছন্দ না হওয়ায় ১ দশমিক ১০ শতাংশ আত্মহত্যা করেছেন। তবে ১৫ দশমিক ৯৩ শতাংশের আত্মহত্যার কারণ জানা যায়নি।
আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজ আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারাকে আত্মহত্যার অন্যতম বড় কারণ হিসেবে দায়ী করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি শিক্ষার্থীরা পরিবার থেকে কোনো কিছু না পেয়ে অভিমান করেও আত্মহত্যা করেছেন। মোটরবাইক, মোবাইল চেয়ে না পাওয়ার কারণে অনেকেই আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন। প্রত্যাশা পূরণ না হলে কিভাবে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, সে বিষয়ে আমাদের শিক্ষার্থীদের অনেক বড় ধরণের অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে।’