কপিলমুনিতে জমে উঠেছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারার হাট

0

 

এইচ.এম.শফিউল ইসলাম,কপিলমুনি (খুলনা) ॥ জমে উঠেছে কপিলমুনি বাজারে ভোর বেলার গাছের চারার হাট। হাটে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন প্রজাতির ফলদ-বনজ,ফুল ও ঔষধি গাছের চারা উঠেছে। ক্রেতা-বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের সমাগমে নার্সারি চারার হাট জমে উঠেছে। ভোরের হাট সকাল ১১টার মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। তবে স্থানীয় ক্রেতাদের জন্য বিকাল বেলাও আংশিক এলাকায় চারার হাট বসে। পাইকগাছা, কয়রা,আংশিক তালা ও আশাশুনসহ দক্ষিণ অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ী ও খুচরা ক্রেতারা ভোরবেলার হাট থেকে পছন্দমত বিভিন্ন প্রজাতির চারা ক্রয় করছে। কপিলমুনির ভোরবেলার চারার হাটে দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে সাড়া ফেলেছে।
বর্ষাকাল বৃক্ষরোপণের উপযুক্ত সময়। পরিবেশ সুরক্ষায় বৃক্ষের অবদান অপরিসীম। বৃক্ষ ছাড়া পরিবেশ সুরক্ষা অসম্ভব। তবে এ বছরও বাঁধ ভেঙে উপকূল এলাকা লবণ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সব জায়গায় চারা রোপণ করার পরিবেশ তৈরি হয়নি। সে কারণে চারা রোপণ করার সময়ও পিছিয়ে যাচ্ছে। তারপরও এ হাটে ফলদ, বনজ, ঔষধি, ফুলসহ নানা প্রজাতির বৃক্ষের চারা পাইকারি ও খুচরা বিক্রি হচ্ছে।
পাইকগাছার গদাইপুর দক্ষিণ অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী একটি বৃক্ষ চারার বাজার। এ বাজারে সপ্তাহে শুক্রবার, সোমবার ও বুধবার হাট বসে। হাটে পাইকারী ও খুচরা বিভিন্ন মালামাল বিক্রয় হয়। বর্ষাকালে ভোরবেলা বাজারে চারার হাট দক্ষিণ অঞ্চলে ব্যবসায়ী ক্রেতাদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। গদাইপুর নার্সারির জন্য বিখ্যাত। গদাইপুরের নার্সারির চারা দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে। দেশব্যাপী গদাইপুর নার্সারির নাম ছড়িয়ে পড়েছে। গদাইপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ৪শ থেকে ৫শ নার্সারি গড়ে উঠেছে। এসব নার্সারিতে উৎপাদিত বিভিন্ন চারা ও কলম নার্সারি মালিকরা ভোরবেলা গদাইপুর হাটে তুলছে। ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা খুব ভোরে এসে পছন্দমত চারা ক্রয় করে দক্ষিণ অঞ্চলের বিভিন্ন হাটে বিক্রয় করছে। হাটে আম, কাঁঠাল, জাম, জামরুল, লিচু, কদবেল, বিভিন্ন জাতের কুল, পেয়ারা, বাতাবি লেবু, মাল্টা, কমলা লেবু, দেশি বিদেশি নারকেল চারা, সুপারী, মেহগনি, সিরিশ, লম্বু, আকাশমনি, বিভিন্ন প্রজাতির দেশি বিদেশি ফুলের চারা হাটে ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে। ক্রেতারা বাজার ঘুরে পছন্দমত গাছ কিনছে। ২০ টাকা থেকে ৬শ টাকা দরে কলম বিক্রি হচ্ছে। মাল্টা ও কমলা লেবুর চারা ও বিদেশি নারকেলের চারা দম সব থেকে বেশি। বিদেশি নারকেলের চারা ৫শ টাকা, বড় মাল্টা ও কমলা লেবুর চারা প্রায় ৬শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া চারা বড় ও মানের ওপরে বিভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে প্রচুর পরিমাণে গাছের চারা উঠেছে। বাজার ঘুরে পছন্দমত চারা ক্রয় করা যাচ্ছে এবং বাজারের চারা দামও কম।
কয়রা উপজেলার উত্তর বেদকাশী গ্রামের ব্যবসাহী মোশারফ হোসেন জানান, সোহবান,রহিম,রাশেদসহ আটজন রাত দুইটায় রওনা দিয়ে সকালে বাজারে এসেছেন। তিনি চারা কিনে কাশী হাটে বিক্রি করেন। তবে এবছরও বেড়িবাঁধ ভেঙে লবণ পানি প্রবেশ করায় চারারোপণ করার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়নি। এ জন্য চারার চাহিদা কিছুটা কম। গদাইপুর গ্রামের চারা ব্যবসায়ী মিজান জানান, বর্ষাকালে তেমন বৃষ্টি হয়নি এ কারণে চারার চাহিদা ও দাম কিছুটা কম ছিল। অনেক দেরি করে বৃষ্টি শুরু হয়েছে, আর বৃষ্টি শুরু হওয়ায় চারার চাহিদাও বিক্রি বেড়েছে ।
পাইকগাছা উপজেলা নার্সারী মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অশোক কুমার পাল জানান, কপিলমুনি গদাইপুর এলাকায় অন্তত সাড়ে ৪শ নার্সারি রয়েছে। এসব নার্সারি থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় চারা সরবরাহ করা হয়। তবে গদাইপুর বাজারে ভোরবেলার হাটে প্রচুর পরিমাণ চারা উঠছে। ক্রেতারা তাদের পছন্দমত চারা ক্রয় করতে পারছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জাহাঙ্গীর আলম জানান, পরিবেশ সু-রক্ষায় বৃক্ষের অবদান অপরিসীম। সারাদেশে বে সরকারি ও সরকারি ভাবে প্রচুর পরিমাণে বৃক্ষরোপণ করা হচ্ছে। পরিবারের পুষ্টি চাহিদা পূরণে বাড়ির আঙিনায় চার-পাঁচটি ফলদ বৃক্ষ রোপণ করার জন্য কৃষকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মমতাজ বেগম।