খুলনায় জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে বিএনপির কর্মীসভায় হামলা

0

 

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা ॥ মহানগর যুবলীগের এক শীর্ষ নেতার নেতৃত্বে হেলমেট পরিহিত সন্ত্রাসীরা সশস্ত্র অবস্থায় জয় বাংলা শ্লোগান দিয়ে হামলা চালিয়ে ১৭ নং ওয়ার্ড বিএনপির কর্মীসভা পন্ড করেছে। খুলনায় বিএনপির একের পর এক রাজনৈতিক কর্মসূচিতে জনস্রোত দেখে ফ্যাসিবাদী শাসক গোষ্ঠী ক্ষমতা হারানোর ভয়ে আতংকিত হয়ে ইতিহাসে নজিরবিহীন ন্যাক্কারজনক হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেন নগর বিএনপি নেতারা।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কে ডি ঘোষ রোডের দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিং থেকে এ অভিযোগ আনেন তারা। আগের দিন রাতে বায়তুন নুর মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় পুলিশের উপস্থিতিতে ১৭ নং ওয়ার্ড বিএনপির কর্মিসভায় শাসক দলীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসী ক্যাডারদের বর্বরোচিত হামলা, সভামঞ্চ ও চেয়ার টেবিল ভাংচুর-তান্ডব, শতাধিক নেতাকর্মীকে আহত করা, হামলা থেকে নারী নেত্রীদের রেহাই না দেয়া এবং অন্তত অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেল ভাংচুরের ঘটনার প্রেক্ষিতে নগর বিএনপি এ ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে।
বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে মারামারির ঘটনা ঘটেছে বলে সোনাডাঙ্গা থানার ওসির দেয়া বক্তব্য কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি নেতারা বলেন, তিনি রাজনৈতিক নেতার মতো বক্তব্য দিয়েছেন। সরকারি দায়িত্বশীল কর্মকর্তার মতো কথা বলেন নি। ১৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও তিনি (ওসি) যখন সেফ এন সেভের সামনে একসাথে অবস্থান করছিলেন, সে সময় তাদের সামনে দিয়ে শাসক দলীয় ক্যাডাররা মিছিল নিয়ে জয় বাংলা শ্লোগান দিয়ে বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মীসভায় হামলা চালায়। সভাস্থলে যে সব পুলিশ সদস্য দায়িত্বরত ছিলেন, তারা শুরুতে হামলাকারীদের ঠেকানোর চেষ্টা করে। কিন্ত তাদের সহিংস, মারমুখি আচরণ এবং হিং¯্রতার সামনে এক সময় পুলিশ অসহায় হয়ে পড়ে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে বক্তব্য রাখেন মহানগর বিএনপির আহবায়ক শফিকুল আলম মনা ও সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন। তারা বলেন, মাফিয়া, লুটেরা, ভোটচোর সরকার সীমাহীন দুর্নীতি করে দেশটাকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে গেছে। তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ, জ¦ালানির দাম বাড়ায় নিত্যপ্রয়োজনীয় সব কিছুর মূল্য ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। মানুষ ক্ষোভের আগুনে ফুঁসছে। ক্ষমতা হারানোর ভয়ে সরকার আতংকগ্রস্ত। তারা অস্থির হয়ে পড়েছে। যে কোন মূল্যে ফ্যাসিবাদী সরকার ক্ষমতা দখল করে রাখতে চায়।
বিএনপি নেতারা বলেন, গত বছরের ৯ ডিসেম্বর মহানগর বিএনপির নতুন আহবায়ক কমিটি ঘোষণার পর থেকে নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে অনেক কর্মসূচি লাখো জনতার উপস্থিতিতে সফল ভাবে পালিত হয়েছে। ওয়ার্ড কমিটি গঠনের লক্ষ্যে মাসব্যাপী কর্মীসভা হাতে নেয়া হয়েছে। ৩১ টি ওয়ার্ড ও থানায় কর্মসূচির দিন তারিখ ও স্থান নির্ধারণ করে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ও সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তালিকা দেয়া হয়েছে। বিএনপি সংগঠনকে শক্তিশালী কাঠামো ওপর দাঁড় করাতে এসব কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালন করছে। দলে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা আছে। কিন্ত সেখানে কোন দ্বন্দ্ব সংঘাতের অবকাশ নেই।
নেতারা অভিযোগ করেন, বিএনপিকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হতে দেখে আওয়ামী লীগ আতংকগ্রস্ত। কোথাও পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে, আবার কখনো পুলিশ-আওয়ামী লীগ সংঘবদ্ধ হয়ে বিএনপির ওপর হামলা চালাচ্ছে। জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের উপস্থিতিতে ২৬ মে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি পুলিশ ও শাসক দলীয় সন্ত্রাসীদের যৌথ হামলায় পন্ড হয়ে যায়। এর আগে ৫ জানুয়ারি বিএনপির মানববন্ধন কর্মসূচির সূচনাকালে পুলিশ এসে বেধড়ক লাঠিচার্জ করলে নগর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফখরুল আলম গুরুতর জখম হন। তার একটি চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। অপরটিও নষ্ট হওয়ার পথে। তারও আগে দলীয় কার্যালয়ের সামনে আর একটি মানববন্ধন কর্মসূচিতে পেটোয়া পুলিশের হামলায় গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ৩১ নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা বাবুল কাজী।
বিএনপি নেতারা বলেন, দল যাতে তৃণমূল থেকে শক্তিশালী হতে না পারে সে চেষ্টার অংশ হিসেবে নগর বিএনপির অন্যতম যুগ্ম আহবায়ক শেখ সাদীকে বিনা অভিযোগে পুলিশ গ্রেফতারের পর ২০১৪ সালের একটি পেন্ডিং মামলায় আদালতে সোপর্দ করে। অনেককে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানো হয়। কিন্ত বিএনপি কর্মীদের নিবৃত করতে না পেরে এবার সরাসরি হামলা চালানো হলো। নগর যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক সুজনের নেতৃত্বে হেলমেটবাহিনী শুধু কর্মিসভাস্থলেই হামলা চালায়নি। হামলায় আহতরা যখন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে গেছেন, সেখানেও ছাত্রলীগ-যুবলীগ ক্যাডাররা তল্লাশ চালিয়েছে। মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গিয়ে বেডে বেডে খোঁজ নেয়া হয়েছে, বিএনপির কোন কর্মী সেখানে ভর্তি আছেন কিনা।
প্রেস ব্রিফিং থেকে গুরুতর আহত কর্মীদের একটি তালিকা দেয়া হয়। তাদের মধ্যে রয়েছেন- মোল্লা ফরিদ আহমেদ, আব্দুর রাজ্জাক, কামরুজ্জামান সবুজ, টুটুল,আবু সাঈদ হাওলাদার, মনিরুজ্জামান কাজল, সাবেক কাউন্সিলর হাসনা হেনা, কাউন্সিলর হাফিজুর রহমান মনি, বদরুল আনাম খান, মিজানুর রহমান মিজান, জি এম বাবুল, সৈয়দ তানভির, শফিকুল ইসলাম শফি, ইলিয়াস মোল্লা, সোনিয়া খান, রুবিনা খাতুন, আল আমিন, নজরুল ইসলাম বাবু, বাদশা। এদের মধ্যে শ্রমিকদল নেতা ইলিয়াসের পায়ের রগ কেটে গেছে। স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা কালামের গ্যারেজ ভাংচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে।
এ ঘটনায় বিএনপি আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং আদালতে মামলা করবে বলে জানানো হয়।
এদিকে বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেন, বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় রায়েরমহলে ১৬ নং ওয়ার্ড বিএনপির কর্মীসভা হওয়ার পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি ছিল। স্থানীয় আওয়ামী লীগ একই সময় একই স্থানে সমাবেশ আহবান করায় পুলিশ সেখানে সব ধরনের সভা সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ফলে ওই কর্মিসভা বিকেলে কে ডি ঘোষ রোডে বিএনপি অফিসে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। একইভাবে শুক্রবার (১৯ আগস্ট) বিকেলে যোগীপোল ইউনিয়ন বিএনপির কর্মীসভায়ও পুলিশ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। বিএনপি নেতারা এসব নিষেধাজ্ঞা জারির তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
প্রেস ব্রিফিংকালে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির আহবায়ক আমির এজাজ খান, সদস্য সচিব মনিরুল হাসান বাপ্পী, সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আবু হোসেন বাবু, খান জুলফিকার আলী জুলু, স ম আব্দুর রহমান, মোল্লা খায়রুল ইসলাম, কাজী মাহমুদ আলী, আব্দুর রকিব মল্লিক, আজিজুল হাসান দুল, মোস্তফা উল বারী লাভলু, শের আলম সান্টু, আবুল কালাম জিয়া, বদরুল আনাম খান, শেখ তৈয়েবুর রহমান, মাহবুব হাসান পিয়ারু, শামীম কবির, চৌধুরী শফিকুল ইসলাম হোসেন, আশরাফুল আলম নান্নু, একরামুল হক হেলাল, শেখ সাদী, এনামুল হক, আব্দুর রাজ্জাক, আশফাকুর রহমান কাকন, কে এম হুমায়ুন কবির, ওয়াহিদুজ্জামান রানা, আনিসুর রহমান, সৈয়দ সাজ্জাদ আহসান পরাগ, কাজী মিজানুর রহমান, এহতেশামুল হক শাওন, মুর্শিদুর রহমান লিটন, আরিফ রহমান, হাবিবুর রহমান বিশ^াস, হাসানউল্লাহ বুলবুল, মোহাম্মদ আলী বাবু, রফিকুল ইসলাম বাবু, আবু সাঈদ হাওলাদার আব্বাস, মোল্লা ফরিদ আহমেদ, মল্লিক আব্দুস সালাম, নাসির খান, আব্দুস সালাম, হাবিবুর রহমান, তারিকুল ইসলাম, খন্দকার হাসিনুল ইসলাম নিক, শামসুল বারিক পান্না, মিজানুর রহমান মিলটন, শফিকুল ইসলাম শফি, আলী আক্কাস, ফারুক হোসেন, আজিজা খানম এলিজা, কানিজ ফাতেমা আমিন, আখতারুজ্জামান সজীব, ইসতিয়াক আহমেদ ইস্তি প্রমুখ। বিজ্ঞপ্তি।