কেশবপুরে পল্লী চিকিৎসক সুব্রত কুন্ডু হত্যা মামলায় এক আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোরের কেশবপুর উপজেলার শ্রীরামপুর এলাকার পল্লী চিকিৎসক সুব্রত কুন্ডু হত্যা মামলায় মঙ্গলবার আকবর আলী নামে এক আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড প্রদান করেছেন আদালত। এছাড়া অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় সবুরা খাতুন ওরফে খুকুমনি নামে অপর এক আসামিকে খালাস দেয়া হয়েছে। সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. ইখতিয়ারুল ইসলাম মল্লিক এই রায় প্রদান করেন। বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাড. এম. ইদ্রিস আলী।
সাজাপ্রাপ্ত আসামি আকবর আলী কেশবপুর উপজেলার দত্তনগর গ্রামের মৃত রফিউদ্দিনের ছেলে। আর খালাস পাওয়া সবুরা খাতুন ওরফে খুকুমনি উপজেলার ভালুকঘর গ্রামের ইউনুস আলী খাঁ’র স্ত্রী। অপরদিকে নিহত সুব্রত কুন্ডু শ্রীরামপুর গ্রামের কার্তিক চন্দ্র কুন্ডুর ছেলে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৪ সালের ২৬ মার্চ রাত পৌনে ১০টার দিকে পল্লী চিকিৎসক সুব্রত কুন্ডু মির্জানগর বউবাজারে তার দোকান বন্ধ করে বাইসাইকেলযোগে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে মির্জানগর গ্রামের সাবেক ইউপি মেম্বার সাত্তার খানের বাড়ির সামনে পৌঁছালে দুর্বৃত্তরা পেছন থেকে তাকে গুলি করে। গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তার লাশ উদ্ধার করে এবং যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় পরদিন নিহতের পিতা কার্তিক চন্দ্র কুন্ডু অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে কেশবপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্ত করে একই বছরের ২৭ জুলাই উল্লেখিত দুজন ছাড়াও ভালুকঘর গ্রামের এয়াকুব আলী খাঁ’র ছেলে ইউনুস আলী খাঁকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দেন কেশবপুর থানা পুলিশের এসআই জাহাঙ্গীর আলম। বাদী ওই চার্জশিটের ওপর নারাজি আবেদন জানালে আদালত মামলাটি পুনঃতদন্তের জন্য সিআইডি পুলিশকে নির্দেশ দেন। এরপর তদন্তকালে সিআইডি পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সৈয়দ মোস্তফা কামাল হত্যার সাথে উল্লিখিত ৩ জনের জড়িত থাকার প্রমাণ পান। তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, আকবার আলী ও ইউনুস আলী খাঁ ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকায় পালিয়ে বেড়াতেন। এদিকে সুব্রত কুন্ডু ডাক্তারির পাশাপাশি ফ্লেক্সিলোড ও বিকাশে ব্যবসা লেনদেনের ব্যবসা করতেন। ঘটনার দিন রাতে আকবার আলী ও ইউনুস আলী খাঁ ছিনতাই করার উদ্দেশ্যে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে সেখানে ওৎ পেতে ছিলেন। সুব্রত কুন্ডু সেখান দিয়ে যাওয়ার সময় তাকে ধরতে তারা তাড়া করেন। এ সময় সুব্রত কুন্ডু পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে ইউনুস আলী খাঁ তাকে গুলি করেন। এতে ঘটনাস্থলে মারা যান সুব্রত কুন্ডু। আর আসামিদের পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছিলেন ইউনুস আলী খাঁ’র স্ত্রী খুকুমনি। এদিকে, মামলা তদন্ত চলাকালে ২০১৫ সালের ১৭ মার্চ যশোর-মাগুরা মহাসড়কে ডাকাতির সময় পুলিশের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন প্রধান অভিযুক্ত ইউনুস আলী খাঁ। পরে তদন্ত কর্মকর্তা সহকারী পুলিশ সুপার সৈয়দ মোস্তফা কামাল ইউনুস আলীর মৃত্যুর কারণে তাকে অব্যহতির আবেদন জানিয়ে এবং অপর দুই আসামিকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দেন। এই মামলায় আসামি আকবার আলীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক তাকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের আদেশ দেন। একই সাথে আসামি খুকুমনির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে খালাস দেয়া হয়।