শতবর্ষী বিমলা সাহা গ্রামে পাকা রাস্তা দেখে মারা যেতে চান

0

 

বাগেরহাট সংবাদদাতা॥ বাগেরহাটে সদর উপজেলার গাওখালী গ্রামের শতবর্ষী বৃদ্ধা বিমলা সাহা জীবদ্ধশায় দেখতে পারবেন কি পাকা রাস্তা? এমন প্রশ্ন তার। সরকার আসে, সরকার যায়। কিন্তু মাত্র দুই কিলোমিটার কাঁচা রাস্তার কারণে দুর্ভোগ কমছে না গ্রামবাসীর। তিনি স্বপ্ন দেখেন মৃত্যুর আগে হলেও তার গ্রামে একটি পাকা রাস্তা হবে। কিন্তু আজও বিমলার স্বপ্ন পূরণ হয়নি।
এলাকাবাসী জানান, স্বাধীনতার পর থেকেই যোগাযোগ-সুবিধা বঞ্চিত সদর উপজেলার গোটাপাড়া ইউনিয়নের গাবরখালী গ্রাম। উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগের জন্যে কোনো পাকা রাস্তা নেই । রিকশা বা ভ্যান দূরে থাক, সাইকেলেও চলাচল করা যায় না রাস্তাটি দিয়ে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বৃষ্টি হওয়ায় কাদা-পানিতে একাকার হয়ে আছে রাস্তাটি। গাঁওখালী-রঘুনাথপুর হয়ে মূল সড়কে আসার জন্যে মধ্যবর্তী এই দুই কিলোমিটার রাস্তা দুই দশক আগে ইটের সলিং দিয়ে তৈরি করা হয়। কিন্তু রাস্তার বেশির ভাগ ইট উঠে গেছে। এতে এলাকাবাসীর দুর্ভোগের শেষ নেই। আর যে অংশে ইটের সলিং উঠে গেছে, তা আস্তে আস্তে উঠে কাদায় পরিণত হচ্ছে। এ ছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্মিত বাঁধ ও রাস্তা বৃষ্টি আর জোয়ারের পানি বাড়লেই তলিয়ে যায়। ভেসে যায় পুকুর ও ঘেরের মাছ। পথচারীদের চলাচলে ভোগান্তির শেষ নেই।
বিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ আরও বেশি। গাওখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অর্পণ সাহা জানায়, স্কুলে যেতে হলে ভিজে যেতে হয়। অনেক সময় কাদায় স্লিপ করে পড়ে যেতে হয়। এভাবে স্কুলে যেতে আর ভাল লাগে না।
পূর্ণিমা নামের অপর এক শিক্ষার্থী জানায়, কালকেও তাদের দুইটা বন্ধু পানির মধ্যে পড়ে গেছে। হাটু সমান পানির মধ্যে দিয়ে আসতে তাদের খুব ভয় লাগে।
কালা সাহা নামের এক অভিভাবক বলেন, বাচ্চাদের স্কুলে পাঠিয়ে দুঃশ্চিন্তায় থাকতে হয়। কাদায় পড়ে না পানিতে ডোবে। জোয়ারে রাস্তায় অনেক স্রোতও হয়। বড়রাই ঠিকভাবে চলতে পারে না, সেখানে ছোট বাচ্চারা কিভাবে চলবে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক চিত্তরঞ্জন সাহা বলেন, কাদা-মাটির রাস্তার কারণে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসা করতে খুব কষ্ট হয়। রাস্তা-ঘাট খারাপ হওয়ায় অনেকেই বিদ্যালয়ে আসতে চায় না। এতে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা দারুণ ভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
গৃহিণী রিক্তা বৈরাগী বলেন, বৃষ্টি-জোয়ারে জল উঠে সব তলায়ে যায়। রান্নার চুলাও ডুবে যায়। তখন পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকা লাগে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, একটা রাস্তা কি তাদের কোনোদিন হবে না?
স্থানীয় ৯ নং ওয়ার্ডের (গাওখালী) ইউপি সদস্য ইলিয়াস বালি বলেন, গ্রামের মধ্যের দুই কিলোমিটার রাস্তার কিছু জায়গার ইট উঠে মাটি বের হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন রাস্তাটি সংস্কার করা হয়নি। বৃষ্টি বা জোয়ারে যাতায়াতে সমস্যার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, এবিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলা হয়েছে।
স্থানীয় জনগণের দুর্ভোগের বিষয়ে বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুছাব্বেরুল ইসলাম বলেন, এই সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে এখন পর্যন্ত স্থানীয় কোনো জনপ্রতিনিধি তাদেরকে জানায়নি। খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি।