জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে ক্ষোভ, উৎকণ্ঠা সর্বত্র

0

সাইফুর রহমান সাইফ ॥ সারের দাম বেড়েছে ১ আগস্ট। তাতে কৃষকের অবস্থা কাহিল। অন্যদিকে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে পর্যুদস্ত দেশ। এ অবস্থায় মড়ার ওপর খাড়ার ঘার চেয়ে আরও কয়েক ঘা বাড়িয়ে অস্বাভাবিক হারে বাড়ানো হয়েছে জ্বালানি তেলের দাম। এতে সর্বত্র চলছে ক্ষোভ। রাজপথ, চায়ের দোকান, বাস, ট্রেন, হাটবাজার, টার্মিনাল, স্টেশন মিলিয়ে তা পাখা মেলেছে সর্বত্র।
নাগরিক সমাজের তরফে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে যখন প্রতি ড্রামে জ্বালানি তেলের দাম ৯০ ডলার কমানো হয়েছে দেশে সরকার তখন তার দাম বাড়িয়েছে। যার প্রভাব পড়বে সর্বত্র। এতে সবকিছুর দাম আবার বাড়বে।
এদিকে জ্বালানি তেলের দাম শুক্রবার রাত ১০টার দিকে বাড়ানোর পর তা গভীর রাতে কার্যকর হয়। এ সময় যশোরের ফিলিং স্টেশনগুলোতে বিক্ষুব্ধ মানুষ জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করে। রজনীগন্ধা ফিলিং স্টেশন হামলার ঘটনা ঘটে।
গতকাল পরিবহন সেক্টরে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে বিশৃঙ্খল অবস্থা দেখা দেয়। বিভিন্ন স্থানে বাসের সুপারভাইজারের সাথে যাত্রীদের বসচা হয়। কোথাও কোথাও হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে।
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে বেড়ে যাবে পরিবহন ভাড়া। এতে প্রভাব পড়বে প্রতিটি ক্ষেত্রে। চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, সবজিসহ সব কিছুর দাম বাড়বে।
যশোরের সর্বজন শ্রদ্ধেয় বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ যশোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগম এ প্রসঙ্গে বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় জনভোগান্তি আরও বাড়বে। জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে উঠবে। কারণ এর প্রভাব সর্বত্র পড়বে। সমস্তকিছুর দাম বেড়ে যাবে। দুর্বিষহ এক অবস্থার সৃষ্টি হবে।
সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার প্রভাব যে সর্বত্র পড়ছে তা বোঝা গেল।
সকালে যশোর রেলস্টেশনে ট্রেনের জন্যে অপেক্ষমান সাধারণ যাত্রীদের এ নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেল। আমিনুর রহমান নামে এক যাত্রী বললেন, যত দুর্ভোগ সব আমাদের। অচিরেই এর প্রভাব বাজারে পড়বে। আর তার খেসারত দিতে আমাদের।
সরকার ভোক্তা পর্যায়ে ডিজেল ও কেরোসিনে দাম বাড়িয়ে নির্ধারণ করেছে ১১৪ টাকা, অকটেন ১৩৫ টাকা ও পেট্রোল ১৩০ টাকা।
ডিজেলের বর্ধিত দাম ভোগাবে সব মানুষকে। কারণ গণপরিবহন চলে ডিজেলে। তাইতো বাসভাড়াসহ সব ভাড়া এরি ভেতর বেড়ে গেছে। চুয়াডাঙ্গা থেকে যশোরের নওয়াপাড়া শিল্পশহর আসেন হরষিত সরকার।
দৈনিক লোকসমাজকে তিনি বলেন, চুয়াডাঙ্গা থেকে অন্য সময় নওয়াপাড়া আসতে ভাড়া লাগে দেড় শ টাকা। আজ (শনিবার) আমার বাসভাড়া লেগেছে ২২০ টাকা। ‘ভাড়া নিয়ে বাসের ভেতর গন্ডগোল হয়েছে’ বলেন তিনি।
মধুমতি পরিবহনের সুপারভাইজার অসিত কুমার বলেন, বাসের ভাড়া বেড়েছে। যশোর থেকে খুলনা পর্যন্ত দেড় শ টাকা নেয়া হচ্ছে। আর নওয়াপড়া পর্যন্ত ৭০ টাকা।
নওয়াপাড়ার নূরবাগ বাস স্টেশনে খুলনাগামী এক নারী বাসে উঠতে চাইলে তাকে আগেভাগে বলা হল ৮০ টাকা দিতে হবে।
যাত্রীরা জানালেন কোন নিয়ম কানুন না মেনে সুপারভাইজাররা ভাড়া আদায় করেছেন। তারা যা ইচ্ছা তাই করছেন। অথচ দেখার কেউ নেই।
এই যখন অবস্থা তখন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তাকে স্বাভাবিক হিসেবে দেখছে। যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন দৈনিক লোকসমাজকে বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বে যে ক্রাইসিস তাতে দাম না বাড়ালে তো আমরা তেলই পাব ুনা। এটা সাময়িক। যুদ্ধ থামলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
ঠিক এর উল্টোটা বললেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির( মার্কবাদী) সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ।
দৈনিক লোকসমাজকে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে যখন জ্বালানি তেলের দাম বেরেল প্রতি ৯০ ডলার কমেছে তখন আমাদের সরকার দাম বাড়িয়েছে। এই সিদ্ধান্তে প্রমাণিত হয় জনগণের প্রতি সরকারের কোন দায় দায়িত্ব নেই। আমরা এর প্রতিবাদ জানাই। আমরা জেলায় জেলায় এর প্রতিবাদে কর্মসূচি পালন করবো।
যশোরের নওয়াপাড়া শিল্পশহরেরর জ্বালানি তেল পবিবেশক প্রতাপ কুমার সাহা বলেন, এর আগে এত দাম বাড়েনি। এক লাফে ডিজেলের দাম ৩৪ টাকা বেড়েছে। ৮০ টাকা থেকে ১১৪ টাকা।
যশোরের কাঁচামাল ব্যবসায়ী ইকরাম আলী বলেন, এ দাম বৃদ্ধির প্রভাব সবজিতে পড়বে। কারণ পরিবহন ব্যয় এরিমধ্যে বেড়ে গেছে।
একধারে কৃষক ও ব্যবসায়ী মীর অলিয়ার রহমান দৈনিক লোকসমাজকে বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় কৃষক ব্যবসায়ী উভয়ের ক্ষতি হবে। মরবে সাধারণ মানুষ।
ভ্যানচালক আমীর আলী বলেন, এমতিই আমাদের অবস্থা খারাপ। সবকিছুর দাম বেশি। তার উপর আবার তেলের দাম বাড়লো।