মণিরামপুর উপজেলা আলীগের কমিটি নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ অসন্তোষ : ফুঁসে উঠছে বঞ্চিতরা

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সদ্য ঘোষিত যশোরের মণিরামপুর উপজেলা আওয়ামীলীগে পূর্ণাঙ্গ কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে আংশিক কসিটির সিনিয়র সহসভাপতিসহ অনেক ত্যাগী নেতাদের । তাদের অভিযোগ ত্যাগী পরিক্ষিত নেতৃত্বকে পাশ কাটিয়ে গঠনতন্ত্র না মেনে বিতর্কিত, সমালোচিত, এবং অরাজনীতিকদের এই কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কমিটির সভাপতি নিজেই স্বাক্ষর করে ওই কমিটি অনুমোদন দিয়েছেন। তাদের অভিযোগ দল নয়, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্রাচার্যের পাল্লা ভারি করতে এই কমিটি করা হয়েছে। এমন অভিযোগ দলটির নেতাকর্মীদের। ৭১ সদস্য বিশিষ্ট মূল কমিটি এবং ১৫ সদস্য বিশিষ্ট উপদেষ্টা কমিটিতে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতির স্বাক্ষর থাকলেও নেই সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষর। আছে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতির স্বাক্ষর। শনিবার ৩০ জুলাই জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্রাচার্য ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি কাজী মাহমুদুল হাসান স্বাক্ষরিত ৭১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে আছেন ৪জন মন্ত্রী পরিবারের সদস্য। আবার জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন ও তার পুত্র জেলা কমিটির সদস্য সামির ইসলাম পিয়াস ওই কমিটির সদস্য হয়েছেন। যারা বর্তমানে সদর উপজেলার বাসিন্দা। প্রতিমন্ত্রীর ভাগ্নে উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক উত্তম চত্রবর্তী বাচ্চু ওই কমিটির সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। যিনি করোনকালীন সময়ে সরকারি চাল আত্মসাতের মামলার আসামি। মামলায় হাজত খেটেছেন তিনি। সে সময় বিষয়টি নিয়ে জেলা ব্যাপী অনেক তোলপাড় হয়। কমিটির দ্বিতীয় নাম্বার যুগ্ম-সম্পাদক সুপ্রিয় ভট্রাচার্য্য শুভ প্রতিমন্ত্রীর পুত্র। ইতিপূর্বে তিনি দলের কোন পদে ছিলেন না। ব্যবসায়ী হিসেবে তার পরিচিতি থাকলেও তিনি গেল বছর তথ্য গোপন করে জমির দলিল করতে গিয়ে অনেক সমালোচিত হন। তার পরের যুগ্ম- সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক মন্টু বর্তমানে ঝাঁপা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। ভোট ডাকাতির মাধ্যমে প্রথম মেয়াদে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে শপথ নেয়ার আগেই তিনি সংখ্যা লঘুদের জমি দখল করেন। তৎকালীন পুলিশ সুপার আনিছুর রহমান প্রকাশ্যে রাজগঞ্জ বাজারে দাঁড়িয়ে তাকে ধরিয়ে দিতে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষনা করেন। ওই মেয়াদে তিনি ঘর দেয়ার নামে টাকা আত্মসাৎ করার কারণে সমালোচিত হন। বর্তমান দ্বিতীয় মেয়াদে চেয়ারম্যান হয়েও তিনি সমালোচনা থেকে সরে আসতে পারেন নি। সাম্প্রতি আদালতে তার নামে নারী নির্যাতন ও ধর্ষণ মামলা হয়েছে। এছাড়াও তিনি ইউনিয়ন ব্যাপী নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডের জন্য সমালোনার শীর্ষে। কমিটির দ্বিতীয় নাম্বায় সাংগঠনিক সম্পাদক গৌতম চক্রবর্তী প্রতিমন্ত্রীর ভাগ্নে। তিনিও রাজনীতিতে খুব বেশি সক্রিয় নন বলে জানিয়েছন নেতাকর্মীরা। তৃতীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে মাদক, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের অনেক অভিযোগ রয়েছে । তিনি মণিরামপুরে পৌর সদরে ত্রাস হিসেবে পরিচিত। নানাবিধ অপরাধ, অপকর্মের সাথে তার সম্পৃক্ততা রয়েছে। কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক শফি সম্রাট ইতিপূর্বে কোন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন না। প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্রাচার্য্য নিজেও ওই কমিটির সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তার ভাই আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাড. পীযূষ কান্তি ভট্রাচার্য্য পদাধিকার বলে সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। আংশিক কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি সাবেক উপজেরা চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন লাভলুকে ওই কমিট থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন,দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষরিত চার সদস্য বিশিষ্ঠ আংশিক কমিটিতে আমি সিনিয়র সহসভাপতি ছিলাম। ওই কমিটির একমাত্র সদস্য আবুল কালাম আজাদকে সহসভাপতি করা হয়েছে। তিনি এই কমিটিকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে বলেন,যে কমিটিই অবৈধ সেখানে যারা আছে তাদেরও ন্যূনতম বৈধতা নেই । দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সভাপতি একক ভাবে কমিটি অনুমোদন দিতে পারে না। এই কমিটিতে সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষর নেই। আছে প্রতিমন্ত্রীর স্বাক্ষর,যিনি এই কমিটির সভাপতি হয়েছেন,তার স্বাক্ষর। এটি সম্পূর্ন গঠনতন্ত্র পরিপন্থী। একজন মন্ত্রী কিভাবে দলের কমিটি অনুমোদন দেন সেটি আমার বুজে আসে না। আমি শুধু না মণিরামপুরে সকল আওয়ামীগী ঘরোনার মানুষ এই কমিটি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। কেবল মাত্র যারা ওই অবৈধ কমিটিতে আছেন তারা ব্যাতিত। আমি অচিরেই বিষয়টি দলের হাই কমান্ডকে জানাবো। কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক ফারুক হোসেন বলেন,আমি যতটুকু জানি দলের গঠনতন্ত্র মেনে এই কমিটি করা হয়নি। যেহেতু গঠনতন্ত্র মেনে এই কমিটি করা হয়নি, তাই কমিটিতে কারা আছে তাদের সম্পর্কে কিছু বলার নেই। যারা স্বাক্ষর করেছেন, তারা বলতে পারবেন কিভাবে স্বাক্ষর করেছেন। এ বিষয়ে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, কের্ন্দের সিদ্ধান্ত মোতাবেক কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তারপরও যদি কোন অসংগতি থাকে সেটি সংশোধন করা হবে। দলের খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজ্জাম্মেল হকের সাথে দুই একদিনের মধ্যে এই বিষয় বৈঠক আছে। কোন সংশোধনী থাকলে সেটি করা হবে।