বৃষ্টির অভাবে বিপাকে চৌগাছার কৃষক পাট জাগ দিতে ছুটছে দূর বিল বাঁওড়ে

0

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু, চৌগাছা (যশোর) ॥ চৌগাছায় পাট নিয়ে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন চাষিরা। আগাম চাষ করা পাট কাটা শুরু হয়েছে, তবে অনাবৃষ্টির কারণে সেই পাট পচানো নিয়ে ছুটছেন এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায়। অচিরেই ভারী বৃষ্টি না হলে সোনালী আঁশ পাট চাষিদের গলার ফাঁস হয়ে উঠবে মনে করছেন এ জনপদের পাট চাষিরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার ২ হাজার ২শ ৫০ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে। বাজারে পাটের ভাল দাম, চাহিদাও বেশি এবং পাটখড়ির রয়েছে ব্যাপক কদর। তাই চলতি বছরে আশানুরুপ পাট চাষ হয়েছে। অধিক তাপমাত্রার কারণে আগাম চাষ করা পাটের কিছুটা ক্ষতি হলেও ফলন ভাল হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামের চাষিরা পাট চাষ করেন, এবছরও তার কোনো ব্যতিক্রম ঘটেনি। মৌসুম শুরুর আগে যে সকল চাষি পাট চাষ করেছেন, সেই সমস্ত পাট এখন কাটা হচ্ছে। তবে পাট কেটে কৃষক পড়েছেন মহাবিপাকে। কারণ আষাঢ় মাস শেষ এখন চলছে শ্রাবণ। এই দুই মাসে বৃষ্টির পানিতে এলাকার খাল বিল ডোবা পুকুর তলিয়ে যায়। থৈ থৈ করে পানি। সে কারণে পাট পচানো নিয়ে কৃষককে কোন দুঃশ্চিন্তায় পড়তে হয়না।
তবে চলতি বছরে ঘটেছে তার বিপরীত চিত্র। বর্তমানে চলছে শ্রাবণ মাস, আকাশে কখনো কথখনো মেঘের ঘনঘটা দেখা যাচ্ছে কিন্তু কাঙ্খিত সেই বৃষ্টি হচ্ছেনা। এর ফলে পাট কেটে কৃষকরা জাগ দেওয়ার জন্যে ছুটছেন বিভিন্ন জলাধারের কাছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার জগদীশপুরের মর্জাদ বাওড় পাড়ে গিয়ে দেখা যায়, বাওড় পাড়ের মানুষ ছাড়াও বেশ দূরের কৃষকরাও এখানে পাট পাট জাগ দিতে এসেছেন। কাঠফাটা রোদকে উপেক্ষা করে চাষিরা পাট জাগ দিতে ব্যস্ত।
এসময় কথা হয় জগদীশপুর গ্রামের আশরাফ আলীর সাথে। তিনি বলেন, অন্য বছরে বৃষ্টির কারণে বাওড়ের কিনারে পানি চলে আসে। এবছর বৃষ্টি নেই তাই বাওড়ে পানিও কম। সে কারণে অনেক কষ্ট করে পাট নিয়ে বলাচলে মাঝ বাওড়ে গিয়ে জাগ দিতে হচ্ছে।
পাশ্ববর্তী স্বর্পরাজপুর গ্রামের কৃষক আল আমিন বলেন, অন্য যে কোনো বছরগুলোতে অবিরাম বৃষ্টির কারণে বাড়ির আশ পাশে পুকুর বা গর্ত পানিতে টইটুম্বুর হয়ে যায়। পাট পচানো নিয়ে কোনো সমস্যা হয়না। তবে এবছর বৃষ্টি নেই পাটও কাটার মত হয়ে গেছে। শেষমেষ বৃষ্টি না হলে বাওড়ের পানিতেই পাট পচানোর জন্য যেতে হবে।
কোটালীপুর গ্রামের কৃষক আব্দুস সালাম বলেন, এই গ্রামটির পাশে তেমন কোনো খাল বা নদ নদী না থাকলেও কৃষক পাট চাষ করেন। বর্ষা মৌসুমে পাট কাটা হয়, তাই জাগ দিতে বেগ পেতে হয়না। এবছর আজও বৃষ্টির দেখা নেই কীভাবে পাট পচানো হবে সেই চিন্তায় বিভোর গ্রামের সকল চাষি। বড়খানপুর গ্রামের কৃষক মিহির আলী, মন্টু মিয়া, শফি উদ্দিন বলেন, সোনালী আঁশ পাট যেন এবছর গলার ফাঁসে পরিণত হতে চলেছে। বৃষ্টির জন্যে অপেক্ষা করছি, বৃষ্টি হলেই পাট কাটা শুরু করব।
এ দিকে পাট নিয়ে কৃষকের দুঃশ্চিন্তা থাকলেও এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে কৃষককে আধুনিক পদ্ধতি অবলম্বন করে পাট পচানোর পরামর্শ দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। কাঁচা পাট থেকে আঁশ ছাড়িয়ে তা বাড়ির আঙিনায় গর্ত করে সেখানে পানি ভর্তি করে পাট পচানোর কথা বলা হচ্ছে। তবে কৃষক কৃষি অফিসের এই পরামর্শ তেমন ভাবে আমলে নিচ্ছেন না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সমরেন বিশ্বাস বলেন, এ অঞ্চলের চাষিরা খাল বিল, পুকুর, নদ নদীতে পাট জাগ দিতে অভ্যস্ত। এসব জলাশয়ে পাট জাগ দিলে পাটের রংও চমৎকার হয়। তবে বৃষ্টি না হওয়ায় কৃষককে কেটে রাখা পাট বিকল্পভাবে পচানোর পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।