ত্রাণ কার্যক্রমে সবাইকে সম্পৃক্ত করতে হবে

0

গতকাল লোকসমাজসহ দেশের শীর্ষ দৈনিকগুলোতে বন্যা পরিস্থিতির অঞ্চল বৃদ্ধি, ভয়াবহতা, উদ্ধার অভিযানে ব্যর্থতা ও সকল প্রকার খাদ্যসামগ্রী সংকটে মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টির শঙ্কার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। খবরে বলা হয়েছে, সিলেটসহ রংপুর বিভাগের পর ময়মনসিংহ ও রাজশাহী বিভাগের অংশ বিশেষ বন্যায় তলিয়ে গেছে। সেখানেও কয়েকশ’ গ্রাম তলিয়ে গেছে। লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে বিপর্যয়ের শিকার হয়েছে। এসব এলাকায় স্থানীয়ভাবে উদ্ধারকার্য চলছে। খাদ্য সংকট মারাত্মক হচ্ছে। ত্রাণের তেমন কোন খবর পত্র-পত্রিকায় নজরে আসেনি। মানুষের দাবি, জরুরি ভিত্তিতে উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম চালানো হোক।
এ বছর বর্ষার শুরুতেই সর্বগ্রাসী বন্যার তাণ্ডব শুরু হয়েছে, যা নজিরবিহীন। মাসখানেক আগে সিলেট-সুনামগঞ্জ ও উত্তরাঞ্চলীয় কয়েকটি জেলা আকস্মিক বন্যার শিকার হয়। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। তার জের থাকতে থাকতেই দ্বিতীয় দফা বন্যা দেখা দিয়েছে। কল্পনাকেও হার মানিয়ে দ্রুত বন্যা ছড়িয়ে পড়ায় মানবিক বিপর্যয় চরম আকার ধারণ করেছে। লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তাদের উদ্ধার করে আশ্রয় শিবিরে আনা এবং প্রয়োজনীয় খাদ্য, পানি, ওষুধপত্র ও অন্যান্য জরুরি সামগ্রী দেয়া কঠিন, এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বহু এলাকায় অনেক জায়গায় ত্রাণসামগ্রী পৌঁছানো যাচ্ছে না। বন্যাকবলিত অসংখ্য মানুষ দিনের পর দিন না খেয়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। মানুষের অসহায়ত্ব ও বিষণœতার এমন নজির দেখা যায় না। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা উদ্ধার কাজে নিয়োজিত হয়েছেন। দুর্গত এলাকায় ত্রাণ দেয়ার কাজও তারা করছেন। মূলত তারাই ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। সে কারণে সর্বত্রই ত্রাণের জন্য হাহাকার চলছে। লোকবল, সম্পদসামর্থ্য এবং ব্যবস্থাপনাগত দক্ষতা এ মুর্হূতে সবচেয়ে বেশি দরকার। অতীতে যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ-বিপর্যয়ে রাজনৈতিক দল, বেসরকারি সংস্থা, স্বেচ্ছসেবী সংগঠন, সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী প্রভৃতি উদ্ধার ও ত্রাণকার্যক্রমে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিতো। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকারি প্রতিবন্ধকতায় এদের অংশগ্রহণ তেমন একটা দেখা যায় না। অথচ, বাস্তবতা হচ্ছে- প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বিশেষ করে বন্যা মোকাবিলা করা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে সমর্থ্যবান ব্যক্তি থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দল, সংস্থা, সংগঠন ও গোষ্ঠীর এগিয়ে আসা যেমন আবশ্যক, তেমনি তাদের ত্রাণ কার্যক্রম নির্বিঘœ করা জরুরি। আমরা আশা করবো, মানবিক বিপর্যয়কে কেউ রাজনৈতিক দৃষ্টিতে নেবেন না। সবাইকে মানুষের জীবন রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে। আমরা লক্ষ্য করছি প্রধানমন্ত্রী দলের নেতা-কর্মীদের উদ্ধার ও ত্রাণ কাজে নিয়োজিত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ওদিকে বিএনপির তরফে সকল রাজনৈতিক কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে এবং দলীয় নেতাকর্মীদের বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অন্যান্য রাজনৈতিক দলও দুর্গতত্রাণে এগিয়ে আসতে শুরু করেছে। ইসলামী দল ও সংগঠনগুলোও এর মধ্যে রয়েছে। খেলোয়াড়, চলচ্চিত্র শিল্পিসহ সব ধরনের মানুষ এগিয়ে এসেছে। এদের সকলকেই স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিলে অনেক কাজ এগিয়ে যাবে। আমরা আশা করবো, প্রশাসন কোথাও অহেতুক বাধা হবে না।