যশোরে ১৮ দিনে তিন যুবক হত্যায় জড়িতরা আটক না হওয়ায় আতঙ্ক

0

 

মীর মঈন হোসেন মুসা ॥ যশোরে একের পর হত্যার ঘটনা ঘটেই চলেছে। মাত্র ১৮ দিনে যশোরে ৩ যুবককে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষরা। এর মধ্যে একজনকে পিটিয়ে ও বৈদ্যুতিক শক দিয়ে এবং অপর দুজনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। অথচ হত্যার সাথে জড়িত অধিকাংশকে এখনো আটক করতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
এমনিতেই যশোরে প্রায় প্রতিদিন কোথাও না কোথাও সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে লোকজন জখম হচ্ছে। তারপর আবার একের পর এক নৃশংস হত্যার ঘটনায় সর্বত্র চরম আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। একই সাথে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় ক্ষোভও বাড়ছে সাধারণ মানুষের মাঝে।
গত ২০ মে সকালে সকালে সদর উপজেলার সুজলপুরে মোটরসাইকেল ও ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে একই এলাকার খোরশেদ আলম গাজীর ছেলে ইরিয়ানের সাথে এলাকার সাকিব নামে এক যুবকের বাকবিত-া হয়। এর জের ধরে প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হয় সাকিব। এ ঘটনায় ওইদিন রাতে ইরিয়ানসহ ৭ জনকে আসামি করে কোতয়ালি থানায় মামলা করেন সাকিবের মা আরিফা বেগম। এরপর দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হলে ইরিয়ান সদর উপজেলার কৃষ্ণবাটিতে বোনের বাড়িতে গিয়ে আত্মগোপন করে। পরদিন ২১ মে সকালে স্থানীয় একটি সন্ত্রাসী চক্রের বেশ কয়েকজন সদস্য কয়েকটি মোটরসাইকেলে করে কৃষ্ণবাটিতে গিয়ে বোনের বাড়ি থেকে ইরিয়ানকে ধরে আনে। সুজলপুর মোড়ে এনে প্রকাশ্যে তাকে মারধরসহ নিষ্ঠুর নির্যাতন চালানো হয়। তাকে ইলেকট্রিক শকও দেয়া হয়। অজ্ঞান হয়ে পড়লে সন্ত্রাসীরা তাকে ফেলে পালিয়ে যায়। পরে পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে প্রথমে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে এবং পরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১১ টার দিকে মারা যায় ইরিয়ান। এ ঘটনায় নিহতের পিতা খোরশেদ আলম গাজী ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে কোতয়ালি থানায় মামলা করেন। কিন্তু হত্যার সাথে জড়িত কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। আসামিরা এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী। তারা আটক না হওয়ায় এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ইরিয়ান হত্যার ঘটনায় এমনিতেই এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। তারপর আবার গত ৭ জুন গভীর রাতে মামলার বাদী খোরশেদ আলম গাজীর বাড়িতে বোমা হামলা চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনার জন্য নিহতের স্বজনেরা আসামি পক্ষকে দায়ী করছেন।
আসামি আটক না প্রসঙ্গে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতয়ালি থানা পুলিশের এসআই বিমান তরফদার জানান, আসামিরা যশোর থেকে পালিয়ে ঢাকায় গিয়ে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়েছে। গত ৫ জুন তারা জামিন নেয়। আদালত তাদেরকে ৪ সপ্তাহের জামিন দিয়েছেন। তাদের জামিনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থানায় জমা দেওয়ায় এ কারণে আসামিদের আটক করা যাচ্ছে না।
অপরদিকে ইরিয়ান হত্যার রেশ কাটতে না কাটতেই গত ২৯ মে রাতে শহরের নাজির শংকরপুর চাতালের মোড় এলাকায় প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হয় হত্যাসহ প্রায় এক ডজন মামলার আসামি আফজাল হোসেন। তাকে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের পিতা ছলেমান শেখ ৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৭/৮ জনকে আসামি করে কোতয়ালি থানায় মামলা করেন। কিন্তু থানার পুলিশ এজাহারভুক্ত একজন আসামি ছাড়া অপর কোনো আসামি অথবা ঘটনার সাথে জড়িত আর কাউকে আটক করতে পারেনি। তবে হত্যার সাথে জড়িত পলাশ নামে এক সন্ত্রাসীকে ধরে পুলিশে দেয় র‌্যাব।


আবার আফজাল হোসেন হত্যার পরদিন রাতে নাজির শংকরপুরে সাকিব নামে এক সন্ত্রাসীর কুড়ালের আঘাতে গুরুতর জখম হন পৌর কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাড. আসাদুজ্জামান বাবুল। আফজাল হোসেন হত্যার জের ধরে পৌর কাউন্সিলের ওপর হামলা চালানো হয় বলে স্থানীয়রা ধারণা করছেন। পরপর এই দুটি নৃশংস ঘটনায় বর্তমানে ওই এলাকায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এদিকে আফজাল হোসেন হত্যাকা-ের ১০দিনের মাথায় গত ৭ জুন সকালে শহরের পশ্চিম বারান্দীপাড়া খালধার রোডে প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হয় হত্যাসহ ৭ মামলার আসামি অনুরাগ ইসলাম অপু। তাকে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। হত্যাকা-ের তিনদিন পার হলেও জড়িত কোনো অপরাধীকে এখনো আটক করতে পারেনি পুলিশ। বর্তমানে ওই এলাকায় উত্তেজনা আর আতঙ্ক বিরাজ করছে। অবশ্য হত্যার ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কোতয়ালি থানায় মামলা দায়ের হয়নি।
কোতয়ালি থানা পুলিশের ওসি মো. তাজুল ইসলাম জানান, নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো থানায় কোনো এজাহার দাখিল করা হয়নি।

অপু – ফাইল ফটো