কলারোয়ায় এনএটিপি প্রকল্পের অর্থ লোপাটসহ নানা অভিযোগ

0

 

কে এম আনিছুর রহমান, কলারোয়া (সাতক্ষীরা) ॥ সাতক্ষীরার কলারোয়ায় এনএটিপি প্রকল্প ফেজ-২ এর আওতায় এগ্রিকালচার ইনোভেশান ফান্ডের ম্যাচিং গ্রান্ট উপ-প্রকল্পের ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামারীদের খামার যাত্রীকরণে চপার মেশিন (খড় কাটা মেশিন) ও ক্রসার মেশিন ক্রয়ে এবং বিতরণে অর্থ লোপাটসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত বুধবার (১ জুন) কলারোয়া উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে ৬টি সিআইজি সমিতির ১২০ জন সদস্য ও সমিতির ৬ জন সভাপতিসহ মোট ১২৬ জনকে ১২৬টি চপার ও ক্রসার মেশিন বিতরণ করার কথা ছিলো। অথচ এদিন উপজেলা নিবার্হী অফিসার রুলী বিশ্বাস প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে মাত্র ৬টি ক্রসার মেশিন বিতরণ করেন। প্রতিটি সিআইজি সমিতির জন্য নিজস্ব অর্থায়ন ৩০ ভাগ অর্থাৎ ১ লাখ ৬২ হাজার টাকাসহ ৯ লাখ ৭২ হাজার টাকা এবং সরকার প্রদত্ত ৭০ ভাগ অর্থাৎ ৩ লাখ ৮৭ হাজার টাকাসহ ২৩ লাখ ২২ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে সমিতির নিজস্ব অর্থায়ন ও সরকার প্রদত্তসহ মোট ৩২ লাখ ৯৪ হাজার টাকার যন্ত্রপাতি ৬টি সমিতির সদস্যদের না দিয়ে প্রাণিসম্পদ অফিসের লোকজন নিজেরা ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন বলে জানা গেছে। এএফআই-২ ম্যাচিং গ্রান্ট নীতিমালা ১৩ অনুযায়ী প্রত্যেকটি সমিতি তাদের নিজস্ব সমিতির ব্যাংক একাউন্টে নির্দিষ্ট পরিমান টাকা জমা রেখে ৫ সদস্য বিষ্টি ক্রয় কমিটি মূল্য যাচাইপূর্বক সর্বনিম্ম দরদাতাকে পে-চেক হস্তান্তর করার পর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা দেখে সরকার প্রদত্ত চেক হস্তান্তর করবে এবং মেশিন তাদেরকে বুঝিয়ে দিবে। অথচ তাদেরকে দেওয়া হয়নি।
কলারোয়া উপজেলার উত্তর রঘুনাথপুর গ্রামে ছাগল পালন সিআইজির সভাপতি আরশাদ আলীর পিতা জয়নুদ্দীনের কাছে চপার মেশিন ও ক্রসার মেশিনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমিসহ আরও কয়েকজন মেশিন নিয়ে এসেছি। বাকীগুলো পরে দেওয়া হবে বলে অফিস থেকে বলা হয়েছে।’ অন্য সদস্য কারা পেয়েছেন জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদককে বসতে বলে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। উপজেলার উলুডাঙ্গা গ্রামে ছাগল পালন সিআইজির সভাপতি সেলিম রেজা জানান, ‘মেশিন আমরা এখনও পাইনি। ব্যাংকে চেক জমা দিয়েছি, মেশিন রেডি হলে বাড়ি নিয়ে আসবো।’ এসময় সেখানে উপস্থিত মফিজুল নামের একজন বলেন, ‘আমি সিআইজি সদস্য না, কিন্তু আমি টাকা দিয়েছি মেশিন কেনার জন্য।’ কত টাকা দিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওরা যা দিয়েছে তার থেকে ৩/৪ হাজার টাকা আমারতো বেশি দিতেই হবে।’ বাঁটরা গ্রামে গাভী পালন সিআইজির সভাপতি সরকারি চাকুরিজীবী মফিজুল ইসলাম বাবলু বলেন, ‘আমি তো চাকুরি করি। আমি সকল বিষয়ে বলতে পারব না। আপনি আমাদের ক্যাশিয়ারের কাছে চলেন।’ সেখানে গেলে আরিজুলের স্ত্রী মনোয়ারা বলেন, ‘আমাদেরকে ৬টি মেশিন দেওয়া হয়েছে, আর বাকীগুলো পরে দেওয়া হবে। আমার যেটা দেওয়া হয়েছে সেটা দিয়ে আজ বিচালি কাটতে গিয়ে কাটতে পারলাম না। ব্লেডে কোন ধার নেই। যদি আমরা নিজেরা দেখে কিনতে পারতাম তাহলে এমন হতো না।’ অল্প টাকার মেশিন বেশি টাকা দাম ধরে দেওয়া হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. অমল কুমারের কাছে মেশিন বিতরণের তালিকা ও অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করে বলেন, ‘কোন তথ্য বা তালিকা দেওয়া হবে না। আমি কী আপনার চাকুরি করি? পারলে আপনি কিছু করেন।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুলী বিশ্বাস জানান, ‘আপনি তথ্য অধিকার ফরমে আবেদন করে আমার কাছে অনুলিপি প্রেরণ করেন, আমি বিষয়টি দেখবো।’
বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের পরিচালক ডা. সুখেন্দু শেখর গাইন জানান, ‘আমি গত ২৬ মে কলারোয়ায় গিয়ে বলে এসেছি সরকারের এত বড় অর্জন ব্যাপক প্রচারণার মাধ্যমে সকল সিআইজি সদস্যের উপস্থিতিতে উপকরণগুলো দিতে হবে। আপনাদের কাছে যদি কোন অনিয়ম মনে হয় তাহলে বস্তুনিষ্ঠ খবর প্রকাশ করুন, আমি অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’