আদালতে নির্দেশ কার্যকর হোক

0

সংবাদ মাধ্যমে আবারো খবর হয়েছে- বায়ু দূষণের দিক থেকে বিশ্বে এক নম্বরে আছে বাংলাদেশ। আর রাজধানী শহরগুলোর মধ্যে ঢাকা আছে দুই নম্বরে। শুধু বায়ুদূষণ নয়, শব্দদূষণ, পানিদূষণ, মৃত্তিকাদূষণসহ প্রায় সব ধরনের দূষণেই বাংলাদেশ এগিয়ে আছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে এমন তথ্য। গণমাধ্যমে নানাভাবে তুলে ধরা হচ্ছে এসব দূষণের চিত্র। তুলে ধরা হচ্ছে জনস্বাস্থ্যে দূষণের প্রভাব। কিন্তু দূষণ রোধে কার্যকর উদ্যোগের খবরে মিলছে খুবই কম। সম্প্রতি একটি শীর্ষ দৈনিকে
এমন দুটি খবর প্রকাশিত হয়েছে। খবর দুটির শিরোনাম হচ্ছে, ‘শব্দদূষণে শীর্ষে গুলশান, বায়ুদূষণে শাহবাগ’ এবং ‘গাড়ির কালো ধোঁয়ায় ঢাকায় চলা দায়’। প্রতিবেদক বলেছেন, বেসরকারি সংস্থা ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ এবং বেসরকারি স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) পরিচালিত গবেষণার তথ্যের ভিত্তিতে খবর দুটি প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণায় উঠে আসে রাজধানীতে বায়ুদূষণে শীর্ষে শাহবাগ ও শব্দদূষণে গুলশান-২ শীর্ষ এলাকা হলেও তুলনামূলকভাবে বায়ু ও শব্দদূষণ দুটিই কম জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায়। কিন্তু সেখানে বাতাসে থাকা ক্ষতিকর বস্তুকণা পিএম২.৫-এর গড় উপস্থিতি প্রতি ঘনমিটার বায়ুতে ৮৫ মাইক্রোগ্রাম, যা আদর্শ মান থেকে ৫.৬ গুণ বেশি। চিকিৎসকরা মনে করেন, এসব দূষণের কারণে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, দীর্ঘমেয়াদি ফুসফুসের রোগ, ক্যান্সার, হৃদরোগ, কিডনি ও মস্তিষ্কের নানা জটিলতা ক্রমেই বাড়ছে। গত মার্চে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার ‘বিশ্বের বায়ুর মান প্রতিবেদন-২০২১’ প্রকাশ করেছে। তাতেও দেখা যায়, ১১৭টি দেশ ও অঞ্চলের ছয় হাজার ৪৭৫টি শহরের বায়ুমান পর্যালোচনায় বাংলাদেশ রয়েছে বায়ুদূষণের শীর্ষে। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের পরেই আছে পাকিস্তান ও ভারত। আর রাজধানী শহরগুলোর মধ্যে ঢাকা রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। প্রথম স্থানে আছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি।
পত্রিকাটি উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) নিবন্ধিত মোটরযানের তালিকা অনুযায়ী দেশে মোটরযান রয়েছে ৫২ লাখ ১৯ হাজারের বেশি। রাজধানীতে মোটরযানের সংখ্যা ১৮ লাখ ৪৬ হাজার ৯৮৭টি। এর মধ্যে ৯ লাখ ৩৯ হাজার ৪১৮টি মোটরসাইকেল। অর্থাৎ অর্ধেকেরও বেশি। এগুলো প্রধানত তেলে চলে এবং সিএনজিচালিত গাড়ির তুলনায় এগুলোর দূষণের হার বেশি। বাস, পিকআপ, ট্রাক ও হিউম্যান হলার মিলিয়ে ঢাকায় চলাচল করে এক লাখ ৬৬ হাজার ১৮৪টি যান। এসব যানের এক-তৃতীয়াংশেরই ফিটনেস নেই। প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, বেশি কালো ধোঁয়া নির্গত হয় লক্কড়ঝক্কড় বাস থেকে। ট্রাফিক পুলিশের সামনে দিয়েই এগুলো চলাচল করে। কখনো কখনো জরিমানা করা হলেও এগুলোর চলাচল বন্ধ হয় না। মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩ এবং পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ অনুযায়ী যানবাহন থেকে ক্ষতিকর ধোঁয়া নির্গত হওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এসব যানবাহন জব্দ করার জন্য উচ্চ আদালতেরও নির্দেশনা রয়েছে। তবু এসব যানবাহনের চলাচল বন্ধ হয় না কেন? তা নিয়ে প্রশ্ন সর্বত্র। আমরা সে প্রশ্ন রেখে জানাতে চাই, শুধু রাজধানী নয়, দেশের সর্বত্র চলছে এই নিষিদ্ধ যান। জেলা ও মফস্বল শহরে নসিমন, করিমন ভডভডির কালো ধোঁয়া রাস্তা অন্ধকার করে। এসব চলাচলে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আমরা সুস্থভাবে বাঁচার জন্য সে নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের আহ্বান জানাই।