ভোটাররা চান পৌরসভার দুর্নীতিবাজদের বিচার ঝিনাইদহে প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন চার মেয়র প্রার্থী

0

 

স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহ ॥ পাড়ায় পাড়ায় ভাঙ্গাচোরা রাস্তা, দুর্গন্ধময় ডাস্টবিন ও ড্রেনেজ সমস্যায় জর্জরিত ঝিনাইদহ পৌরসভা নির্বাচনে কোন প্রার্থী চমক দেখাতে পারেননি। তাদের নেই কোন সুনির্দিষ্ট ইস্তেহার। গদবাঁধা নিয়মে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন প্রার্থীরা। ১১ বছর ধরে নানা সমস্যায় জর্জরিত পৌর নাগরিক বা ভোটাররা নতুন মেয়র আসলে কী পাবেন আর কী পাবেন না তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন। তাদের চাওয়া পৌরসভার দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও চেক জালিয়াতির সাথে জড়িতদের বিচার হোক। লুটকৃত অর্থ ফিরিয়ে এনে এই টাকা দিয়ে ড্রেন ও রাস্তা মেরামত করা হোক। কারণ পৌরসভার প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় রাস্তা ও ড্রেন এখন গলার কাঁটা হয়ে দেখা দিয়েছে।
তথ্য নিয়ে জানা গেছে, মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। জৈষ্ঠ্যের গরমকে উপেক্ষা করে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তারা। তাদের একটাই লক্ষ্য, ভোটারদের নিজের পক্ষে আনা। সীমানা জটিলতার কারণে প্রায় একযুগ পর ঝিনাইদহ পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আগামী ১৫ জুন ঝিনাইদহ পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কমিশনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ৩২ দশমিক ৪২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ পৌরসভা মোট ৯টি ওয়ার্ডে বিভক্ত। চারজন মেয়র প্রার্থী এবারের নির্বাচনে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন। আওয়ামীলীগের আব্দুল খালেক (নৌকা), নাগরিক সমাজের কাইয়ুম শাহরিয়ার জাহেদী হিজল (নারিকেল গাছ), স্বতন্ত্র প্রার্থী মিজানুর রহমান মাসুম (মোবাইল ) ও ইসলামী আন্দোলনের সিরাজুল ইসলাম (হাতপাখা) প্রতীকে নির্বাচন করছেন। ইভিএম নিয়ে নিয়ে বিতর্ক থাকলেও ঝিনাইদহ পৌরসভা ও দুটি ইউনিয়নে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হবে। ফলে নতুন পদ্ধতি ইভিএম নিয়েও ভোটারদের মধ্যে এক রকমের আগ্রহ তৈরি হয়েছে। এদিকে আওয়ামীলীগের প্রবীণ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেক নৌকা প্রতীক পাওয়ায় কর্মী-সমর্থকেরা দলীয় বিভেদ ভুলে তারা একজোট হয়ে প্রচারণায় নেমেছেন। শেষ পর্যন্ত এই ঐক্য বহাল থাকলে ভালো কিছু হতে পারে। তবে আব্দুল খালেক ১১ বছর আগে আওয়ামলীগের সিদ্ধান্ত ভঙ্গ করে সাইদুল করিম মিন্টুর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হন। তিনি সৎ ও ভদ্র হিসেবে পরিচিত। অপরদিকে নাগরিক সমাজের ব্যানারে প্রয়াত ভাষা সৈনিক জাহিদ হোসেন মুসা মিয়ার ছেলে কাইয়ুম শাহরিয়ার জাহেদী হিজল প্রথম বারের মত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। দীর্ঘদিন মানুষের পাশে থাকা জাহেদী ফাউন্ডেশনের সদস্য হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় সাধারণ জনগণের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। তিনি নারিকেল গাছ প্রতীক পেয়েছেন। তার বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করায় ভোটারদের সহানুভুতি তার প্রতি বাড়তি শক্তি যোগাচ্ছে। এছাড়া ঝিনাইদহ পৌর আওয়ামী লীগের সদ্য বহিষ্কৃত সহসভাপতি মিজানুর রহমান মাসুম নির্বাচনী প্রচারণায় আছেন। তার পরিবার থেকে মোশাররফ হোসেন মশা ঝিনাইদহ পৌরসভার একাধিকবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। সেই ইমেজ কাজে লাগিয়ে মিজানুর রহমান মাসুম মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। করোনাকালীন সময়ে তিনি পৌর এলাকার অসহায় মানুষের মাঝে নিয়মিত খাদ্য সহযোগিতা দিয়ে প্রশংসিত হন। তিনি মোবাইল ফোন প্রতীকে ভোটযুদ্ধে অংশগ্রহণ করছেন। এদিকে হাত পাখা নিয়ে মাঠে রয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী মাওলানা মো. সিরাজুল ইসলাম। তিনি ও তার দলের লোকজন অনেকটা নীরবে নিভৃতে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি নির্বাচিত হলে পৌরসভাকে দুর্নীতিমুক্ত করবেন বলে জানান।
আসন্ন নির্বাচন নিয়ে রিটার্নিং অফিসার ওলিউল ইসলাম বলেন, এই পৌরসভায় ইভিএমের মাধ্যমে সবকটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হবে। সম্পূর্ণ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে তারা দৃঢ় সংকল্প। কেন্দ্রে কোনরকম সন্ত্রাসী ও মস্তানি করার সুযোগ নেই। কেউ চেষ্টা করলে প্রতিহত করা হবে। তিনি বলেন, ভোটের আগে ভোটারদের ইভিএমের ব্যবহার শেখানোরও উদ্যোগ নেয়া হবে। প্রার্থীরা নির্বাচনে আচরণবিধি মেনে যাতে প্রচারণা চালান সে বিষয়ে কঠোরভাবে নজরদারি করা হচ্ছে।