সামান্য বাতাসেই রাস্তার ওপর আছড়ে পড়ে, ঝিনাইদহে সড়কে মৃত অর্ধমৃত কড়াই গাছগুলো পথচারীদের গলার কাঁটা !

0

আসিফ কাজল, ঝিনাইদহ ॥ ঝিনাইদহ জেলা পরিষদের মালিকানাধীন মৃত ও অর্ধমৃত শতবর্ষী কড়াইগাছগুলো এখন পথচারীদের গলার কাঁটা। মৃত্যুদূত হিসেবে গাছগুলো দাঁড়িয়ে আছে। সামান্য বাতাস হলেই রাস্তার ওপর আছড়ে পড়ে এই গাছ। দিনকে দিন পথচারীদের মৃত্যু ঝুঁকি বাড়লেও স্থানীয় প্রশাসনের এ বিষয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই।
সরেজমিন দেখা গেছে, ঝিনাইদহ, কালীগঞ্জ ও কোটচাঁদপুর সড়কে বেশ কিছু মরা কড়াই গাছ দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিনিয়ত এসব গাছের শুকনা ডাল ভেঙ্গে পড়ছে। আর ঝড় হলে বড় বড় ডাল ভেঙ্গে রাস্তা, বাসাবাড়ি ও যানবাহনের ওপর ভেঙ্গে পড়ে। ২০১৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত একাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে গাছের ডাল ভেঙ্গে। পুলিশ ও দমকল বাহিনী সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ৬ সেপ্টেম্বর কালীগঞ্জ মেইন বাসস্ট্যান্ডে কড়াই গাছের শুকনা ডাল ভেঙ্গে ঝিনাইদহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এজিএম আব্দুর রউফের স্ত্রী মারা যান। ২০১৬ সালের ৩ আগস্ট ঝিনাইদহের গোপিনাথপুর গ্রামে গাছের ডাল ভেঙ্গে মারা যান নিমাই চন্দ্র নামে এক বৃদ্ধ।
কালীগঞ্জ থেকে কোটচাঁদপুর সড়কে চলাচলকারী কবির হোসেন জানান, মহাসড়কের ধারে মৃত ও অর্ধমৃত কড়াই গাছগুলো চরম ঝুঁকি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এসব গাছে নেই কোনো পাতা, শুকিয়ে কঙ্কাল হয়ে গেছে পুরা শরীর। মূর্তিমান আতঙ্কের মতো নড়বড়ে শরীর নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে গাছগুলো। ঠিক যেন ভয়ানক মৃত্যুদূত। মৃদু বাতাসে এসব গাছ ভেঙে পড়তে দেখা যায়। সড়কে সবসময় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে সাধারণ মানুষ। এ অবস্থায় সড়কের ওপর থেকে ঝুঁকিপূর্ণ গাছগুলো অপসারণ জরুরি হয়ে পড়েছে। আশাদুল ইসলাম নামে আরেক পথচারী জানান, বিভিন্ন সময় জেলা পরিষদ গাছ অপসারণের সিদ্ধান্ত নিলেও পরিবেশবিদরা হৈ চৈ শুরু করেন। তাদের কাছে মানুষের জীবনের মূল্য নেই। মহিদুল ইসলাম নামে এক ব্যবসায়ী জানান, সড়কের দুই ধারেই বিভিন্ন জায়গায় গাছ মরে শুকিয়ে গেছে। যখন তখন ভেঙে পড়ে হতাহতের ঘটনা ঘটছে। অথচ মানুষের কথা প্রশাসন শুনছে না।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহ পরিবেশ ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি মাসুদ আহম্মেদ সনজু বলেন, ‘বিষয়টি সেনসিটিভ হওয়ায় আমি কোন বক্তব্য দিতে পারবো না। কারণ আমি তো আর গাছগুলো দেখিনি।’
মরা গাছ নিয়ে ঝিনাইদহ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কনক কান্তি দাস বলেন, ‘আমরা এসব মরা গাছ অপসারণের উদ্যোগ নিলেই পরিবেশবিদরা আন্দোলন করে। এ জন্য মরা গাছের বিষয়টি লিখিত আকারে মন্ত্রনালয়কে জানিয়েছি। মন্ত্রণালয় তেকে সিদ্ধান্ত আসলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
উল্লেখ্য, সম্ভবত ১৮৪২ সালের দিকে ঝিনাইদহ ও যশোর অঞ্চলে রাস্তার ছায়ার জন্য দুই ধারে অতিবর্ধনশীল জয়নাল্ক গাছের চারা রোপণ করেছিলেন। সেই বৃক্ষগুলো ঝিনাইদহের বিভিন্ন সড়কে ছায়া দেয়ার পাশাপাশি অনেক ঘটনার সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু এক সময়ের প্রয়োজনীয় এই কড়াই গাছগুলো আজ গুরুত্বহীন ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।