অশনির প্রভাব : শৈলকুপায় ধানের দাম ভাল হলেও লাভ নেই কৃষকের

0

মফিজুল ইসলাম, শৈলকুপা (ঝিনাইদহ) ॥ শৈলকুপার হাট-বাজারে ধানের দাম ভাল, তবে লাভ নেই কৃষকের। কারণ ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে টানা বৃষ্টির কারণে ধানের মান নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে বোরো ধান বাজারে কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে কৃষকদের।
শৈলকুপা উপজেলার লাঙ্গলবাধ বাজার, শিতালী বাজার, হাটফাজিলপুর বাজার, রয়েড়া বাজার, ভাটই বাজারে গিয়ে দেখা যায়, শুধু ধান আর ধান। কৃষক তার নতুন ধান নিয়ে এসেছেন বাজারে বিক্রি করতে। অধিকাংশ কৃষকের মুখে হাসি নেই। একই ধান বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন দামে। যেসব ধানের মান ভালো তার দাম মণপ্রতি এক হাজার টাকার উপরে। আবার একই জাতের ধান বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বিক্রি হচ্ছে ৮শ থেকে ৯৫০ টাকায়। লাঙ্গলবাধ বাজারে ধান বিক্রি করতে আসা ধলহরাচন্দ্র গ্রামের রফিকুল ইসলাম জানান, ‘আমি ৮ মণ ধান বাজারে বিক্রি করতে নিয়ে এসেছিলাম। বৃষ্টির কারণে ধানের মান খারাপ হওয়ায় ৮শ টাকা দরে বিক্রি করেছি। তবে বাজারে মিনিকেট হিসেবে পরিচিত সরু ধান (ভালো মানের) প্রতি মণ ১ হাজার ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আবার একই ধান যেগুলো বৃষ্টিতে কিছুটা রং নষ্ট হয়ে গেছে সেগুলো ৬শ থেকে ৯৫০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। একই অবস্থা ছিলো ব্রি-২৮ ধানের ক্ষেত্রেও। এই জাতের ধান ৮৫০ থেকে ১১শ’ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে বৃষ্টিতে নষ্ট অনেক নিম্নমানের ধান বিক্রিও করতে পারছেন না চাষিরা।’ ভাটই বাজারে ধান বিক্রি করতে আসা কৃষক আতিয়ার জানান, ‘ক্রেতারা খুব হিসেব করে ধান কিনছেন। যারা বৃষ্টির আগে ধান কেটে ঘরে তুলতে পেরেছেন তারা ধানের দাম বেশি পাচ্ছেন। আর আমাদের মতো যে সব চাষি আছেন যারা বৃষ্টির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের কপাল পুড়েছে।’ সোমনাথ বিশ্বাস নামে আরেক কৃষক জানান, ‘দুই সপ্তাহ আগেও এই বাজারে ধান বিক্রির সময় ক্রেতাদের এমন পরিস্থিতির শিকার হতে হয়নি। বর্তমানে আমরা বাজারে ধান এনে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছি। আড়ৎদার ও মিলাররা ধানের মান একটু নিম্ন হলেই তা আর নিতে চাচ্ছেন না। আর নিলেও তা কম দাম দিচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘বাজারে ধানের দাম ভালো হলেও আমাদের কোন লাভ হচ্ছে না। কারণ বৃষ্টিতে ধান ক্ষেতে ডুবে রং নষ্ট হয়ে গেছে। এসব ধান নানা অজুহাত দেখিয়ে ব্যবসায়ীরা কম দামে ধান কিনে নিচ্ছেন।’ ব্যবসায়ী রতন কুমার ও নাজের জোয়ার্দ্দার জানান, ‘এবার ধান নিয়ে আমরা সত্যিই বড় সমস্যায় আছি। কারণ বাজারে ধানের মধ্যে কোনটি ভালো কোনটি খারাপ যাচাই করতে হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা মূলত ধান কিনে বিভিন্ন মিলে দিয়ে চাল তৈরি করি। ধানের মান যদি ভালো না হয় তাহলে চালের মানও কমে যায়। এসব কারণেই ধানের মান নির্ণয় করে কিনতে হচ্ছে আমাদের। এতে অনেক চাষি আমাদের ওপর ক্ষুব্ধ হলেও কিছু বলার থাকছে না।’
শৈলকুপা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবুল হাসনাত জানান, চলতি বোরো মৌসুমে শৈলকুপা উপজেলায় ১২ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হয়েছে। এ বছর উপযুক্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে শেষ সময়ে ঘূর্ণিঝড় অশনির কারণে ধান নিয়ে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।