কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদ

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ ইউরোপ ফুটবলের রাজা বলা হয় রিয়াল মাদ্রিদকে। সেই রাজা রাজ্যহারা ছিলেন দুই বছর। অবশেষে ফের সিংহাসন উদ্ধার করলো লস ব্লাঙ্কোসরা।
কোচ কার্লো আনচেলত্তির হাত ধরে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে এলো রেকর্ড ১৪তম চ্যাম্পিয়নস লিগ। শনিবার রাতে প্যারিসের ফাইনালে লিভারপুলকে ১-০ গোলে হারিয়ে ইউরোপের মুকুট পরলো ব্লাঙ্কোসরা। ইউরোপ ক্লাব শ্রেষ্ঠত্বের এই শিরোপায় তাদের ধারেকাছে নেই কেউ। সাতবার জিতে দুইয়ে এসি মিলান।
এবার যেন শিরোপা পুনরুদ্ধারে নেমেছিল রিয়াল। নগর প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদের কাছ থেকে লা লিগা উদ্ধারের পর এবার দুই বছর পর চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতল স্প্যানিশ জায়ান্টরা। ২০২১/২২ মৌসুমের রিয়াল যে কঠিন পাড়ি দিয়ে শিরোপা জিতল, তা অবিশ্বাস্যই বলা চলে।
বার্নাব্যু ছেড়ে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ও কোচ জিনেদিন জিদান চলে যাওয়ার পর রিয়ালের এটি প্রথম চ্যাম্পিয়নস লিগ। বিশেষ কিছু তো বটেই। তাদের ছায়া থেকে বেরিয়ে আসা বেনজেমা ও ভিনিসিয়াসের জন্য এই মৌসুম ছিল নিজেদের প্রমাণ করার। পুরো মৌসুম জুড়ে দুর্দান্ত ছিল এই জুটি। বেনজেমার পায়ে ভর করে ফাইনালের টিকিট কাটে রিয়াল। আর ফাইনালে স্প্যানিশ জায়ান্টদের জয়সূচক গোল করলেন ভিনি।
এবারের গ্রুপ পর্বে রিয়াল মোটামুটি সহজ প্রতিপক্ষ পেয়েছিল। ‘ডি’ গ্রুপে তাদের লড়তে হয়েছে ইন্টার মিলান, শেরিফ তিরাসপোল ও শাখতার দোনেৎস্কের বিপক্ষে। তার মধ্যে নবাগত শেরিফের বিপক্ষে প্রথম সাক্ষাতেই ২-১ গোলে হেরে বসলেও ফিরতি লেগে দাপুটে জয় পায় রিয়াল। ১৪ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ সেরা হয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠে ব্লাঙ্কোসরা।
শেষ ষোলোর প্রথম লেগে পিএসজির বিপক্ষে ১-০ গোলে হারে রিয়াল। কিন্তু বার্নাব্যুতে ফিরতেই স্বরূপে ব্লাঙ্কোসরা। মেসি-নেইমার-এমবাপ্পেদের নিয়ে গড়া পিএসজি ছিল এবারের ফেবারিট। পচেত্তিনোর শিষ্যদের বিপক্ষে দ্বিতীয় লেগে পিছিয়ে পড়েও দুর্দান্ত জয় পায় রিয়াল। দ্বিতীয়ার্ধে বেনজেমার ১৭ মিনিটের হ্যাটট্রিকে ৩-২ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করে তারা।
সেখানেও আরেক নাটক-রোমাঞ্চ। এবার প্রতিপক্ষ আগের মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন চেলসি। স্টামফোর্ড ব্রিজে ফের বেনজেমার হ্যাটট্রিক। প্রথম লেগে রিয়াল জিতল ৩-১ গোলে। ফিরতি লেগে অবশ্য বার্নাব্যুতে হেরেছে তারা। পরের লেগে ৩-২ ব্যবধানে জয় চেলসির। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার ১০ মিনিট আগ পর্যন্ত ৩-০ গোলে এগিয়ে ছিল ব্লুজরা।
এই ব্যবধান ধরে রাখতে পারলে ইতিহাসের আরেকটি দুর্দান্ত কামব্যাকের গল্প লেখা হয়ে যেতো। কিন্তু তা হতে দেননি বেনজেমা। ৮০তম মিনিটে রদ্রিগোর গোল, এরপর অতিরিক্ত চতুর্থ মিনিটে ফের বেনজেমার জাদু। হৃদয় ভাঙে চেলসির। দুই লেগ মিলিয়ে ৫-৪ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে সেমিফাইনালে রিয়াল।
ফুটবল ঈশ্বরের মতিগতি বুঝা বেশ কঠিন। তার আরেকটি প্রমাণ রিয়াল-ম্যানচেস্টার সিটির শেষ চারের লড়াই। রোমাঞ্চ-নাটকীয়তা, কি ছিল না তাতে! আগের মৌসুমের ফাইনালিস্ট সিটিজেনরাও ছিল এবারের ফেবারিট। একেকটি দাপুটে জয়ে সেমিতে উঠেছিল গার্দিওলার দল।
কিন্তু ইউরোপের রাজারা এবার যেন রাজ্য পুনরুদ্ধারে ছিল দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। সেমিতে প্রথম লেগে ইতিহাদে সিটির ৪-৩ গোলে জয়। ফাইনালে এক পা দিয়ে রেখেছিল ইংলিশ চ্যাম্পিয়নরা। তবে রিয়ালের জন্য আশার প্রদীপ হয়ে ছিল, প্রতিপক্ষের মাঠে তিন গোল। সেই ম্যাচেও বেনজেমার জোড়া গোল। আরেকটি ভিনির।
বার্নাব্যুতে ফিরতি লেগে আরেকটি অবিশ্বাস্য কামব্যাকের গল্প রিয়ালের। ৭৩তম মিনিটে মাহরেজের গোলে এগিয়ে সিটি। ফাইনালে যেতে হলে তখন আনচেলত্তির শিষ্যদের করতে হবে তিন গোল! সেই অবিশ্বাস্য কাজটাই করে ব্লাঙ্কোসরা। তাও অতিরিক্ত সময়ে। ৯০ ও ৯১তম মিনিটে সুপার সাব রদ্রিগোর জোড়া গোলে দুই লেগ মিলিয়ে সমতায় রিয়াল। এর তিন মিনিট পর পেনাল্টি থেকে বেনজেমার জয়সূচক গোল। সিটির স্বপ্ন ভেঙে ফাইনালে যাওয়ার উচ্ছ্বাসে মাতে স্প্যানিশ জায়ান্টরা। তাদের সেই অবিশ্বাস্যভাবে কঠিন পথ পাড়ি দেওয়ার গল্প থামল একেবারে শিরোপা জয়ে।