নেতারা ব্যস্ত ব্যক্তিগত অফিসে, সাংগঠনিক কার্যক্রমে স্থবিরতা মণিরামপুর উপজেলা আ.লীগের ত্রি-বার্ষিক কমিটি চলছে ৮বছর!

0

 

মজনুর রহমান, মণিরামপুর (যশোর) ॥ শুধুমাত্র অধ্যক্ষ কাজী মাহমুদুল হাসানকে সভাপতি ও গোলাম মোস্তফাকে সাধারণ সম্পাদক করে ২০১৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর যশোরের মণিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিলের প্রায় এক বছর পর ২০১৫ সালের ৬ ডিসেম্বর মৃত্যু হয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফার। প্রয়াত গোলাম মোস্তফার ছেলে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা প্রভাষক ফারুক হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক, সাবেক উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক আমজাদ হোসেন লাভলুকে সিনিয়র সহসভাপতি ও অপর সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আবুল কালাম আজাদকে এক নম্বর সদস্য করে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম থেকে ২০১৮ সালের ১০ মার্চ ঢাকা থেকে উপজেলা কমিটি পুনর্গঠন করা হয়। সেই থেকে অদ্যাবধি উপজেলা আওয়ামীলীগের কমিটিতে রয়েছেন ওই ৪ জনই। গঠন করা হয়নি কোন ওয়ার্ড, ইউনিয়ন অথবা উপজেলা আওয়ামীলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। এমনকি চার সদস্যের এই কমিটির অনৈক্য ও সমন্বয়হীনতাকে কেন্দ্র করে দলের ভেতর প্রকট আকার ধারণ করেছে লবিং-গ্রুপিং। এমনকি কমিটি গঠনের পর থেকে বিভেদ বেড়ে যাওয়ায় ওই ৪ নেতাকে একসাথে কোথাও বসতেও দেখা যায় না। দলীয় কার্যালয় থাকলেও কমিটির এই ৪ নেতার মধ্যে বেশিরভাগ ব্যক্তিগত অফিসে তাদের অনুসারীদের নিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছেন। ফলে দলটির কার্যক্রমে নেমে এসেছে চরম স্থবিরতা। আওয়ামীলীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের সাথে আলাপ করে পাওয়া গেছে এসব চিত্র।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ৬ ডিসেম্বর মৃত্যু হয় উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফার। ফলে গুরুত্বপূর্ণ এই পদটি ভাগ্যে জুটাতে শুরু হয় ব্যাপক লবিং গ্রুপিং। এক পর্যায়ে প্রয়াত গোলাম মোস্তফার ছেলে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা প্রভাষক ফারুক হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক, সাবেক উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক আমজাদ হোসেন লাভলুকে সিনিয়র সহসভাপতি ও অপর সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আবুল কালাম আজাদকে এক নম্বর সদস্য করে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম থেকে ২০১৮ সালের ১০ মার্চ ঢাকা থেকে উপজেলা কমিটি পুনর্গঠন করা হয়। সেই থেকে এখন পর্যন্ত উপজেলা আওয়ামীলীগের কমিটিতে রয়েছেন ওই ৪ জন। তবে অভিযোগ রয়েছে, চার সদস্যের এই কমিটির মতানৈক্য ও সমন্বয়হীনতাকে কেন্দ্র করে দলের ভেতর লবিং-গ্রুপিং প্রকট আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে গত বছর ১৫ আগস্ট জাতীয় শোকদিবস পালন করাকে কেন্দ্র করে লবিং-গ্রুপিং প্রকাশ্যে আসে। এরই ফলশ্রুতিতে দলীয় কার্যালয় থাকলেও সিনিয়র সহসভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন লাভলু গরুহাটের পাশে ব্যক্তিগত একটি অফিস নিয়ে তার অনুসারীদের নিয়ে কার্যক্রম করে থাকেন। সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক ফারুক হোসেন দলের পুরাতন কার্যালয়ে আওয়ামী মটরশ্রমিক লীগের ব্যানারে নিজস্ব কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে অনুরূপ কার্যক্রম পরিচালনা করেন। অবশ্য সভাপতি পৌর মেয়র কাজী মাহমুদুল হাসান মাঝে মধ্যে দলীয় কার্যালয় ব্যবহার করে থাকেন। অপর সদস্য আবুল কালাম আজাদ নিজ দোকানেই কার্যক্রম পরিচালনা করেন। ফলে তৃণমূল পর্যায়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে আরো দূরত্বের সৃষ্টি হয়েছে।
এ ব্যাপারে কথা হয় মনিরামপুর সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আবুল হোসেনের সাথে। তিনি অত্যন্ত ক্ষোভের সাথে বলেন, ৪ সদস্যের উপজেলা কমিটির লবিং গ্রুপিংয়ের কারণে দলে অনেক বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাউসুল মোস্তাক বলেন, উপজেলা কমিটির ব্যর্থতার কারণে সাংগঠনিকভাবে দলের ভেতর স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছে।
সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হাশেম আলী বলেন, উপজেলা কমিটির ব্যর্থতা, অযোগ্যতা, মতানৈক্য ও সমন্বয়হীনতার কারণে তৃণমূলে নেতাকর্মীদের মধ্যে অনেক বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমান কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন লাভলু ও সিনিয়র সদস্য আবুল কালাম আজাদ উপজেলা কমিটির বর্তমান সাংগঠনিক কোন কার্যক্রমে নেই উল্লেখ করে বলেন, দলের ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন সম্মেলনের জন্য সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। তবে সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক ফারুক হোসেন বলেন, ইতিপূর্বে রোহিতা ও মনোহরপুর ইউনিয়নে কয়েকটি ওয়ার্ড কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু করোনার প্রাদুর্ভাবে নতুন করে আর কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি।
সংগঠনের সভাপতি পৌর মেয়র অধ্যক্ষ কাজী মাহমুদুল হাসান বলেন, ইতিপূর্বে সর্বসম্মতিক্রমে উপজেলা আওয়ামীলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা করে অনুমোদনের জন্য জেলা কমিটির কাছে জমা দেওয়া হলেও অদ্যাবধি তা অনুমোদন করা হয়নি।
যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, অচিরেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।