পাইকগাছায় বিভিন্ন ঘেরে মারা যাচ্ছে বাগদা চিংড়ি, দুশ্চিন্তায় চাষিরা

0

 

এইচ.এম,শফিউল ইসলাম,কপিলমুনি (খুলনা) ॥ পাইকগাছা উপজেলার বিভিন্ন মাছের ঘেরে মৌসুমের শুরুতেই মারা যাচ্ছে বাগদা চিংড়ি মাছ। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন মৎস্য চাষিরা। এই ক্ষতি কীভাবে পুষিয়ে নেবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা। এই মড়ককে অনেকে ভাইরাসজনিত কারণ বললেও মৎস্যবিভাগ এক মত হতে পারেনি।
মৎস্য বিভাগ বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অনাবৃষ্টি, ঘেরে পানিস্বল্পতা, অতিরিক্ত পোনা মজুদ, তাপমাত্রা ও পানিতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ার কারণে মাছ মরে যেতে পারে। এ কারণে চাষিরা এটাকে ভাইরাস সংক্রমণ বলে ধারণা করছেন। আবার অনেকে মনে করছেন পানি ও খাদ্যই চিংড়ির ব্যাপক মড়কের জন্য দায়ী। তবে বাগদা চিংড়ির মড়ক কোনোভাবেই রোধ করা যাচ্ছে না। এতে আগ্রহ হারাচ্ছেন চাষিরা। এ অবস্থা চলতে থাকলে উপজেলায় চিংড়ি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হবে।
উপজেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সুন্দরবন উপকূলীয় পাইকগাছা উপজেলায় মোট কৃষিজমির পরিমাণ ৩০ হাজার হেক্টর, যার মধ্যে বর্তমানে প্রায় ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে হয়েছে লোনাপানির চিংড়ি চাষ। এলাকায় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৮ হাজার চিংড়ি ঘের রয়েছে। এ বছর উপজেলায় চিংড়ি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ হাজার মেট্রিক টন। তবে যেভাবে চিংড়ি মারা যাচ্ছে, তাতে লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
এ বিষয়ে সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, এ উপজেলায় আশির দশক থেকে বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয় লোনাপানির চিংড়ি চাষ। সনাতন পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষের ফলে মাটির উর্বরাশক্তি নষ্ট হয়ে গেছে। এ কারণেও চিংড়ি মাছ মরে যেতে পারে।
দেলুটি ইউনিয়নের চিংড়ি চাষি কার্তিক চন্দ্র মন্ডল বলেন, তার ২০ বিঘার একটি মৎস্যঘের রয়েছে। বছরের শুরুতে ঘের প্রস্তুত করে বাগদা পোনা ছেড়েছেন। কিন্তু ঠিক ৪২ দিনের মাথায় মাছ মরতে শুরু করে। তিনি উপজেলা মৎস্য অফিসের পরামর্শ নিলেও মাছ মরা বন্ধ হয়নি। এই ঘেরের মাছ বিক্রি করে সংসার চালাতে হয়।
লতা ইউনিয়নের অসিত বরণ বলেন, তার ৪০ বিঘার একটি মাছের ঘের রয়েছে। গত দুই বছর ঘেরে ভালো মাছ হয়নি। সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে এ বছর ঘের করেছেন। কিন্তু বছরের প্রথম থেকেই মাছ মরতে শুরু করেছে। একদিকে সমিতির কিস্তির টাকা, অন্যদিকে সংসার চলাতে গিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। চিংড়ি চাষি রেজাউল করিম জানান, এ বছর মৌসুমের শুরুতেই ঘেরে দেখা দিয়েছে চিংড়িতে মড়ক। এখন পর্যন্ত অনেকে মাছ বিক্রি করতে পারেননি। অনেক ঘেরের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় সব মাছই মরে গেছে।
নগর শ্রীরামপুর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোজাম্মেল হক জানান, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের অনেকেই লাভের আশায় বছরের পর বছর ধারদেনা করে এই চাষাবাদ টিকিয়ে রাখেন।