টিকটকার হতে গিয়ে ব্লাকমেইলিংয়ের শিকার কিশোর, আটক

0

 

মীর মঈন হোসেন মুসা ॥ টিকটকার হতে চেয়েছিলো যশোর টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারের দশম শ্রেণির ছাত্র আব্দুল্লাহ আন নাহিন। কিন্তু টিকটকার হতে গিয়ে সে কিশোর গ্যাংয়ের পাল্লায় পড়ে। তাদের কাছে জিম্মি হয়ে যায়। ব্লাকমেইলিংয়ের মাধ্যমে দফায় দফায় তার কাছ থেকে ৩৬ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। শেষমেষ তার মায়ের বুদ্ধিমত্তায় রক্ষা পেয়েছে সে। ছেলের কাছ থেকে সবকিছু শুনে ডিবি পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন তার মা। অতঃপর ফাঁদ পেতে গত বুধবার আলাদা অভিযান চালিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের অভিযুক্ত দুই সদস্যকে গত বুধবার আটক করে ডিবি পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে ২টি বার্মিজ চাকু উদ্ধার করা হয়েছে।
আটকরা হলো, যশোর শহরের চাঁচড়া রায়পাড়ার রবিউল ইসলামের ছেলে জিসান (১৯) ও বেজপাড়া সাদের দারোগার মোড় এলাকার আইয়ুব শেখ ওরফে আইয়ুব মিস্ত্রির ছেলে ইমরান হোসেন ওরফে ভালু (১৯)। অপরদিকে ভিকটিম আব্দুল্লাহ আন নাহিন যশোর হোমিওপ্যাথি কলেজের অধ্যক্ষ হাফিজুর রহমানের ছেলে। শহরতলীর পুলেরহাটে তার বাড়ি।
ডিবি পুলিশের এসআই মফিজুল ইসলাম জানান, ফেসবুকে টিকটক করতে গিয়ে জিসানের সাথে তার পরিচয় ঘটে। প্রায় ৬ মাস জিসান টিকটক করার প্রলোভন দেখিয়ে তাকে তার সাথে দেখা করতে বলে। সরল বিশ্বাসে নাহিন দেখা করতে গেলে জিসান ও তার সহযোগী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা তাকে ঘোপ সেন্ট্রাল রোডের সিটি হসপিটালের পাশের একটি গলিতে নিয়ে যায়। সেখানে তার হাতে চাকু ও ইয়াবা দিয়ে মোবাইল ফোনে ভিডিও করে জিসান ও তার সহযোগীরা। এই ভিডিও ফেসবুকে ছেড়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে কয়েক দফায় নাহিনের কাছ থেকে মোট ৩৬ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় জিসান গং। গোপনে মায়ের জমানো টাকা চুরি করে তাদের চাঁদার টাকা পরিশোধ করতো।
গত ২৬ এপ্রিল সকালে কোচিং শেষে বাড়ি ফেরার পথে চাঁচড়া শিব মন্দিরের কাছে পৌঁছালে ফের ভয় দেখিয়ে চাঁদা দাবি করে জিসান গং। এরই মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরে ছেলের আনমনা ভাব লক্ষ্য করছিলেন নাহিনের মা। ছেলেকে আশ্বস্ত করার পর সমস্যার কথা খুলে বলতে বলেন তার মা তাকে। এক পর্যায়ে মায়ের কাছে বিপদের কথা খুলে বলে নাহিন। পরে নাহিনকে সাথে নিয়ে তার মা ডিবি পুলিশ কার্যালয়ে গিয়ে অভিযোগ করেন। এরপর ডিবি পুলিশ নাহিনকে দিয়ে ফাঁদ পাতে। গত বুধবার জিসানকে তার আড্ডাস্থল গাড়িখানা রোডের আলাউদ্দিন টাওয়ারের তৃতীয় তলার চপিস্টিকস নামের একটি রেস্ট্যুরেন্টে চাঁদা নিতে আসতে বলা হয়। দুপুর ২টার দিকে টিকটক হতে ইচ্ছুক ৩ কিশোর ও ৩ কিশোরীকে নিয়ে চপিস্টিকস রেস্ট্যুরেন্টে আসে চাঁদার টাকা নেওয়ার জন্য। এ সময় ওঁৎ পেতে থাকা ডিবি পুলিশের সদস্যরা চাঁদার ৭ হাজার ৮শ টাকাসহ জিসানকে হাতেনাতে আটক করেন। তার কাছ থেকে ১টি বার্মিজ চাকু উদ্ধার করা হয়। এরপর অভিভাবকদের ডেকে এনে টিকটক হতে আসা কিশোর-কিশোরীকে তাদের জিম্মায় দেয়া হয়। তিনি জানান, ওইদিন রাতে আটক জিসানের স্বীকারোক্তিতে বেজপাড়া সাদেক দারোগার মোড় এলাকার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তার সহযোগী ভালুকে আটক করা হয়। বৃহস্পতিবার আটক দুজনকে আদালতে সোপর্দ করা হলে এর মধ্যে ভালু ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. মঞ্জুরুল ইসলাম তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন।