গত সপ্তাহে ভেজাল ওষুধের খবরের সূত্র ধরে রাজধানীর চকবাজার, ফকিরাপুল ও চুয়াডাঙ্গায় অভিযান চালিয়ে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কয়েক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ নকল ওষুধ। এ প্রসঙ্গে ডিবি পুলিশ জানায়, আটা-ময়দা আর রং ব্যবহার করে ওষুধগুলো তৈরি হচ্ছিল চুয়াডাঙ্গার দর্শনার একটি কারখানায়। সেখান থেকে দেশের সর্ববৃহৎ পাইকারি ওষুধ মার্কেট পুরান ঢাকার মিটফোর্ড এলাকায় পৌঁছে যেত। এরপর ব্যবসায়ীদের হাত ধরে এবং কুরিয়ার সার্ভিসে ছড়িয়ে দেয়া হতো দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ফার্মেসিতে। এই ওষুধ সেবনে রোগীর কোন উপকারই হতো না, বরং তারা পড়তেন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে।
আমরা জানি, বাংলাদেশ উন্নয়ন ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে যে কয়েকটি খাত নিয়ে গর্ববোধ করে আসছে তার মধ্যে ওষুধ শিল্প অন্যতম। অভ্যন্তরীণ চাহিদার প্রায় সিংহভাগ ওষুধ তৈরি হয় দেশেই। বিশ্বের কয়েকটি দেশে বাংলাদেশের তৈরি বেশ কিছু ওষুধ রফতানিও হচ্ছে। তবে এ কথাও সত্য যে, কয়েকটি নামী-দামী ওষুধ কোম্পানির পাশাপাশি কিছু অখ্যাত কোম্পানিও আছে, যারা র্দীঘদিন তৈরি করছে নকল ও ভেজাল ওষুধ। ভেজাল ওষুধ খেয়ে শিশুসহ বয়স্কদের মৃত্যুর অভিযোগও আছে। অভিযুক্ত কোম্পানির মালিকদের জেল-জরিমানাসহ কারখানা বন্ধ করে দেয়াও হয়েছে। দুঃখজনক হলো, এর পরও মানহীন ওষুধ তৈরি ও বাজারজাতকরণের অভিযোগ উঠেছে কয়েকটি কোম্পানির বিরুদ্ধে। মূলত এসব হয়েছে ওষুধের দাম বাড়ার কারণেই। এ কথা সর্বজন স্বীকৃতি যে, ওষুধ শিল্প একটি স্পর্শকাতর বিষয়। মানুষের জীবন-মরণের প্রশ্নটি এর সঙ্গে জড়িত ওতপ্রোতভাবে। খাদ্য ও পথ্যের বিষয়টিও প্রসঙ্গত উঠতে পারে। ভেজাল খাদ্য যেমন মানুষের জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে; অনুরূপ ভেজাল ও নকল-মানহীন ওষুধ বিপন্ন করে তুলতে পারে মানুষের জীবনকে। আর তাই ওষুধের মান ও দাম নিয়ে হেলাফেলা করার বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই। উন্নত বিশ্বে ওষুধের দাম ও মান নিয়ন্ত্রণ করা হয় কঠোরভাবে। বাংলাদেশেও একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সরকারী সংস্থা গঠন করে সর্বদাই ওষুধের দাম ও মান নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।
আমাদের কাছে উদ্বেগজনক বিষয় হচ্ছে, বাজারে ভেজাল ও নিষিদ্ধ ওষুধের ছড়াছড়ি সংক্রান্ত প্রতিবেদন জনস্বার্থে প্রায়ই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। মাঝে মাঝে সরকারের ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর সাময়িকভাবে সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং দুয়েকটা ওষুধ কোম্পানির লাইসেন্স বাতিল করে ভ্রাম্যমাণ আদালতে আইনানুগ দণ্ড দেয়া হয়। এরপর সপ্তাহ ঘুরতেই আবার শুরু হয় একই বিপজ্জনক উৎপাদন। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য নিয়মিত মনিটরিং এবং বিশেষ নজরদারির যে ধারাবাহিকতা অত্যাবশ্যক তা না থাকায় দুর্নীতিবাজরা আইন ভাঙতে ভয় পায় না। আমরা মনে করি, সবার আগে ভয় সৃষ্টিকারী আইন করে তা কার্যকর করলে এই সর্বনাশা কর্মকান্ড বন্ধ করা সম্ভব। আশা করি, সরকার বিষয়টি কঠোরভাবে বিবেচনা করবে।