মশক নিধনে সমন্বিত কর্মসূচি হোক

0

মশার উৎপাত খুবই বেড়েছে। দিনে বা রাতে কখনো স্বস্তি নেই। এখন মূলত কিউলেক্স মশার উৎপাত চললেও অভিজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এপ্রিলে এডিস মশার প্রাদুর্ভাব অনেক বেড়ে যেতে পারে। গত এক যুগের অভিজ্ঞতা বলে, দেশে প্রতিবছর বর্ষায় ডেঙ্গুর ব্যাপক প্রাদুর্ভাব হয়। এর অন্যতম কারণ, এ সময় ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশার বংশ বিস্তার দ্রুততর হয়। পৌরসভা মশা নিয়ন্ত্রণের কিছু উদ্যোগ নিলেও তা খুব একটা কাজে আসে না। কারণ এই মশার উৎস ধ্বংস করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। এডিস মশা সাধারণত বাড়িতে বা বাড়ির আনাচে-কানাচে জমে থাকা পরিষ্কার পানিতে ডিম পাড়ে। দেখা যায় ডাবের খোসা, বোতল, ক্যান, ফুলের টব, ছাদ, বাগানের টব, রাস্তার পাশে থাকা পরিত্যক্ত টায়ার বা বিভিন্ন ধরনের পাত্র ইত্যাদি যেখানে-সেখানে ফেলে রাখার ফলে সেগুলোতে বৃষ্টির পানি জমে থাকে। অনেক বাড়িতে ফ্রিজের নিচে পানি জমে থাকে। এই জমে থাকা পানিতে এডিস মশা বংশ বিস্তার করে। বলা হয়, চা চামচের এক চামচ পানিও কোথাও জমে থাকলে তাতেও এডিস মশা বংশ বিস্তার করতে পারে।
সম্প্রতি ঢাকার একটি পত্রিকা লিখেছে রাজধানী ঢাকা মহানগরীর প্রায় সর্বত্রই ডেঙ্গুর ঝুঁকি রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার জরিপেও দেখা গেছে, ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মোট ৯৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৬৭টিই ডেঙ্গুর জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বিশাল এলাকার মশা নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশনগুলোর সক্ষমতাও কম। আবার তাদের মশকনিধন কর্মসূচি নিয়েও রয়েছে অনেক প্রশ্ন। ফগার মেশিন দিয়ে ছিটানো ধোঁয়ায় কোনো কাজ হয় না বলেও অভিযোগ আছে। আবার এই কর্মসূচিতে নাগরিকদেরও সহযোগিতার অভাব রয়েছে।
আমরা জানি, ডেঙ্গু মূলত রাজধানীতেই বেশি হয় এবং সেখান থেকেই সারাদেশে ছড়ায়। সারাদেশের মানুষকে রাজধানীতে যেতে হয়, থাকতে হয়, সেহেতু সহজেই ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিবছর ঢাকার বাইরে প্রচুর মানুষ আক্রান্ত হয় এবং অনেকের মৃত্যু ঘটে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মশকনিধন কর্মসূচিতে জনগণের সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। সিটি ও পৌরসভাকে সারা বছর ধরে নিধন সমন্বিত কর্মসূচি চালাতে হবে। উড়ে বেড়ানো পূর্ণাঙ্গ মশা ধ্বংস করার পাশাপাশি মশার উৎস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্ব দিতে হবে। নাগরিকদেরও সচেতনতার পরিচয় দিতে হবে। শহরের পার্শ্ববর্তী উপশহর ও ইউনিয়ন পরিষদগুলোকেও নিধন কর্মসূচি নিতে হবে। দীর্ঘ দু’বছর পর স্কুল-কলেজে ক্লাস শুরু হয়েছে। সন্তান পড়ার পথে মশা বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। দিনেও মশারি ও গ্লোব দিতে হয়। এবার পড়ার চাপ অনেক, তাই সতর্কতাও বিশেষ জরুরি।