যশোরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় দুই বিএনপি নেতাসহ ৩ জন নিহত

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোরে গতকাল রোববার পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় বিএনপি’র দু’নেতা সহ ৩ জন নিহত ও এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীসহ ৫ জন আহত হয়েছেন। আহতদের যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহতরা হলেন, যশোর সদর উপজেলার বসুন্দিয়া ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুর রহমান মোল্যা (৬০), ৯নং ওয়ার্ড বিএনপির সহঅর্থবিষয়ক সম্পাদক মনজেল হোসেন মজুমদার (৫০) ও বাঘারপাড়া উপজেলার মাজিয়ালী গ্রামের কৃষক রনজিত সরকার (৫০)।
বিএনপি নেতা সাইফুর রহমান মোল্যা ও মনজেল হোসেন মজুমদারের বাড়ি বসুন্দিয়ার ঘুনী গ্রামে। নওয়াপাড়া হাইওয়ে পুলিশের এসআই শাহআলম ও নিহতের স্বজরা জানিয়েছেন, যশোর খুলনা মহাসড়কের পদ্মবিলা বাজারে গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সাইফুর রহমান ও মনজেল হোসেন একটি মোটরসাইকেলযোগে রাস্তায় উঠলে খুলনা থেকে একটি ট্রাক বেপরোয়া গতিতে যশোর আসার পথে পেছনে ধাক্কা দেয়। ধাক্কায় দু’আরোহীসহ মোটরসাইকেল কয়েক গজ দূরে ছিটকে পড়ে। তখন সাইফুর রহমানের মাথায় থাকা হেলমেট ভেঙে তিনি মাথায় মারাত্মক আঘাত পান। মনজেল মজুমদারের মাথায়ও আঘাত লাগে এবং তার বাম হাত ভেঙে যায় স্থানীয় লোকজন আহত দু’জনকে উদ্ধার করার পর যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের ভর্তি করেন। ভর্তি করার পর অবস্থার অবনতি হলে সার্জারি বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. ফিরোজ আহমেদ উন্নত চিকিৎসার জন্য দু’জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেন। স্বজনরা সাইফুর রহমান মোল্যাকে ঢাকায় নেয়ার উদ্দেশ্য অ্যাম্বুলেন্সে তোলেন। এ সময় অবস্থা আরো খারাপ হলে অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামিয়ে দুপুর ১২টার ১০ মিনিটে জরুরি বিভাগে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মো. জসীম উদ্দীন তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মনজেল হোসেন মজুমদারের ঢাকায় নেয়ার জন্যে ওয়ার্ড থেকে জরুরি বিভাগের সামনে নেয়ার পর তিনিও মৃত্যুবরণ করেন। ডা. জসীম উদ্দীন দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটে মনজেল হোসেনের মৃত্যু ঘোষণা করেন।
অপরদিকে, একই সময় যশোর-মাগুরা সড়কের ভাটার আমতলা নামক স্থানে ঈগল পরিবহণের বাসের ধাক্কায় রনজিৎ সরকার (৫০) নামে এক কৃষক নিহত হয়েছেন। বারোবাজার হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির এসআই জামান জানিয়েছেন, রনজিৎ সরকার বাজারে সবজি বিক্রি করে সাইকেলযোগে বাড়ি ফিরছিলেন। ভাটার আমতলায় পৌঁছুলে ঈগল পরিবহণের একটি বাস যশোর হতে ঢাকায় যাওয়ার পথে রনজিৎ সরকারকে ধাক্কা দেয়। এতে গুরুতর আহত হলে তাকে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে আনা হয়। সেখানে কতর্ব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। দুটি দুর্ঘটনায় জড়িত বাস ও ট্রাক পুলিশ আটক করেছে। দুর্ঘটনায় সাইফুর রহমান ও মনজেল হোসেনের আহত হওয়ার সংবাদ শুনে হাসপাতালে ছুটে যান বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। তিনি চিকিৎসকদের সাথে যোগাযোগ করে ভাল চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। তারপর তারা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। পরে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত পুলিশের সাথে যোগাযোগ করে ময়না তদন্ত ছাড়াই তাদের লাশ বাড়িতে পৌছে দেয়ার ব্যবস্থা করেন। তিনি নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
এ সময় যশোর সদর উপজেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক আঞ্জুরুল হক খোকন, বসুন্দিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি অ্যাড. নুরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুল আজিজ, সদর উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মো. ইদ্রিস আলী, যুগ্ম আহ্বায়ক তানভীর রায়হান তুহিন, সদস্য সচিব মো. আব্দুর রাজ্জাকসহ এলাকার নেতাকর্মী হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, দুপুর ১টার দিকে যশোর-ঝিনাইদহ সড়কের চুড়ামনকাটি বাজারের অদূরে সড়ক দুর্ঘটনায় যশোর এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ হারুন-অর-রশিদ (৫৫), সদর উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের প্রকৌশলী মো. নাজমুল হুদা (৩৫) ও মাইক্রোচালক রবিউল ইসলাম আহত হয়েছেন। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত রবিউল ইসলামের বাড়ি বাঘারপাড়া উপজেলার আগড়া গ্রামে। তিনি জানিয়েছেন, মাইক্রোবাসযোগে তারা চুড়ামনকাটি বাজারের অদূরে সাকোর মাথা’র কাছে নিচ থেকে রাস্তার উঠছিলেন। এ সময় কালীগঞ্জের দিক থেকে একটি যাত্রীবাহী বাস যশোর আসার পথে ধাক্কা দিলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এছাড়া যশোর-নড়াইল সড়কের হামিদপুরের কাছে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় গুরুতর আহত হয়েছেন ইখতিয়ার রহমান (৪০) ও তার ছেলে শাফিন (১০)। তাদের হাত ও পা ভেঙে গেছে। ইখতিয়ার রহমানের বাড়ি নড়াইল সদর উপজেলার আলাদাদপুর গ্রামে।
স্বজনরা জানিয়েছেন, শাফিন যশোর শহরে কোচিং করে ইখতিয়ার রহমান ছেলেকে সকাল ৭টার দিকে কোচিং করার জন্য মোটরসাইকেলযোগে যশোর শহরে আনছিলেন। হামিদপুরের অদূরে দু’দিক থেকে দু’টি মোটরসাইকেল এসে তার মোটরসাইকেলে ধাক্কা দিলে ইখতিয়ার রহমান ও ছেলে মারাত্মকভাবে আহত হন। আহতদের যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তাদের অবস্থার অবনতি ঘটলে উন্নত চিকিৎসার জন্যে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে।